রাকসু: ছাত্রীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ ছাত্রদল
Published: 17th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ছাত্রীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীরা। এমনকি এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দিতা করা ছাত্রদলর নারী প্রার্থীও ছাত্রীদের মন যোগাতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। সারা রাত কেটে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেওয়া কেন্দ্রগুলোর ফলাফল পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আরো পড়ুন:
এইচএসসির ফলের আড়ালে চোখের জল, শিক্ষায় কীসের সংকেত
১৫ বছরে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে: মঈন খান
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে রাত ৮টায় গণনা শুরু হয়েছে। ভোট গণনা শেষে ১৭টি কেন্দ্রের ফলাফল পৃথকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ফলাফল ঘোষণার দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড.
নারীদের ছয়টি কেন্দ্রে ভিপি পদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থী এবং জিএস পদে আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। এজিএসে পদেও ছাত্রদলের নারী প্রার্থীর সঙ্গে ব্যবধান কম থাকলেও শিবিরের প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন।
মুন্নুজান হল কেন্দ্র
রাকসুর ভোটে এই কেন্দ্রে ভিপি পদে শিবিরের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ৯৭২টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন; তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ নূর উদ্দিন আবীর পেয়েছেন ২৩৬টি ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী তাসিন খান ১৭৩টি ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
জিএস পদে আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার ৮৪১টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন; শিবিরের ফাহিম রেজা ৪৯৫টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। তবে ছাত্রদলের প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন মাত্র ৮৯টি ভোট পেয়েছেন।
এজিএস পদে শিবিরের সালমান সাব্বির ৫৫৩টি ভোট নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ছাত্রদলের জাহিন বিশ্বাস এষা ৩৭৮টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
বেগম রোকেয়া হল কেন্দ্র
রাকসু নির্বাচনে মেয়েদের বেগম রোকেয়া হল কেন্দ্রে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবিরের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি ভোট পেয়েছেন ছাত্রশিবির প্যানেলের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম জানান, মোস্তাকুর রহমান জাহিদ কেন্দ্রীয় সংসদের ভিপি পদে পেয়েছেন ৭৫২ ভোট। ছাত্রদলের আবির পেয়েছেন ২১১টি ভোট।
জিএস পদে আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার ৬৬১টি ও ছাত্রিশিবিরের প্যানেলের ফাহিম রেজা ৩৭৭টি ভোট পেয়েছেন। ভোটপ্রাপ্তীতে এই দুই প্রার্থীর অনেক দুরে অবস্থান করছেন ছাত্রদলের প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন।
এজিএস পদে শিবিরের সালমান সাব্বির ৩৪৬ ও ছাত্রদলের জাহিন বিশ্বাস এষা ২৯৯টি ভোট পেয়েছেন।
তাপসী রাবেয়া হল কেন্দ্র
এই হলে ভিপি পদে জাহিদ (ছাত্রশিবির) ৪৭৩টি ভোট নিয়ে ছাত্রদলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবীরের চেয়ে প্রায় তিন গুণ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। আবীর পেয়েছেন ১৩৬টি ভোট।
জিএস পদে আম্মার (আধিপত্যবিরোধী ঐক্য জোট) ৪০৮টি ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফাহিম রেজা (ছাত্রশিবির) ২৫৪টি ভোট পেয়েছেন।
এজিএস পদে সাব্বির (ছাত্রশিবির) ২৪৫টি ভোট নিয়ে এগিয়ে আছেন। জাহিন বিশ্বাস এষা (ছাত্রদল) পেয়েছেন ১৯৭টি ভোট।
খালেদা জিয়া হল কেন্দ্র
এই হলে ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের জাহিদ ৪৮৫টি ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন; যেখানে ছাত্রদলের আবীর পেয়েছেন ১৩৭টি ভোট।
জিএস পদে অধিপত্যবিরোধী ঐক্য জোটের আম্মার ৩৫২টি ভোট নিয়ে পেছনে ফেলেছেন ছাত্রশিবিরের ফাহিমকে, যিনি ২৯৫টি ভোট পেয়েছেন।
এজিএস পদে শিবিরের সাব্বিরের ঝুলিতে গেছে ২৭৮টি ভোট। আর ছাত্রদলের এষা ১৭১টি ভোট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
রহমতুন্নেসা হল কেন্দ্র
এই হলে ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের জাহিদ ৬৩০টি ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন; যেখানে ছাত্রদলের আবীর পেয়েছেন ১৮৬টি ভোট।
জিএস পদে অধিপত্যবিরোধী ঐক্য জোটের আম্মার ৫৮৯টি ভোট নিয়ে পেছনে ফেলেছেন ছাত্রশিবিরের ফাহিমকে, যিনি ৩২০টি ভোট পেয়েছেন।
এজিএস পদে শিবিরের সাব্বিরের ঝুলিতে গেছে ৩৪৯টি ভোট। আর ছাত্রদলের এষা ২৮৯টি ভোট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
জুলাই ৩৬ হল কেন্দ্র
এই হলে ভিপি পদে ছাত্রদলের আবীর পেয়েছেন ৩০০টি ভোট। তিন গুণের বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন ছাত্রশিবিরের জাহিদ। তিনি ৯৪৫টি ভোট পেয়েছেন।
জিএস পদে অধিপত্যবিরোধী ঐক্য জোটের আম্মার ৮৩৫টি ভোট নিয়ে পেছনে ফেলেছেন ছাত্রশিবিরের ফাহিমকে, যিনি ৫১০টি ভোট পেয়েছেন।
এজিএস পদে শিবিরের সাব্বিরের ঝুলিতে গেছে ৫২৪টি ভোট। আর ছাত্রদলের এষা ৩৭৩টি ভোট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে সভাপতি বাদে অন্যান্য সম্পদকীয় পদ ও নির্বাহী সদস্য পদে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোট হয়। পদাধিকার বলে ছাত্র সংসদের ভিপির দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ফলে ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে সর্বোচ্চ পদ হলো সহ-সভাপতি বা ভিপি।
ঢাকা/কেয়া/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল দ ব ত য় অবস থ ন ছ ত রদল র প র ল ইসল ম আম ম র ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে সহকারী শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে প্রাথমিকের পরীক্ষার হলে দায়িত্বে অভিভাবকেরা
পরীক্ষার হলে নেই চেনা শিক্ষকেরা, প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকেরা। কোথাও বাবা দায়িত্বে, কোথাও মা হাঁটাহাঁটি করছেন বেঞ্চের ফাঁকে। তিন দফা দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির মধ্যে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ সোমবার এই দৃশ্য দেখা গেছে।
অভিভাবকেরা জানান, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু হলে উপজেলাজুড়ে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকেরা অভিভাবকদের ডাকছেন। আর সেই ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন‘স্কুলে আসার পর স্যাররা বলল আজ পরীক্ষা হবে না’৪৮ মিনিট আগেশিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, বেতন গ্রেড উন্নীতকরণসহ তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। কর্মসূচিতে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তাঁরা। আজ সখীপুর উপজেলার ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নতুন সিদ্ধান্ত না আসায় আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সখীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষকেরা অফিস কক্ষে বসে আছেন। পরীক্ষার হলগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন অভিভাবকেরা। তবে দু-একটি কক্ষে অভিভাবক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ ছিলেন না। পরে প্রধান শিক্ষক আগ্রহী অভিভাবকদের খুঁজে এনে কক্ষের দায়িত্ব দিচ্ছিলেন।
শিক্ষকদের পরিবর্তে অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা চালানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন।ফারজানা আক্তার, অভিভাবকউপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতার। তিনি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকেরা আমাকে কোনো সহযোগিতা করছেন না। এমনকি অভিভাবকদেরও পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছেন।’ তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আফরোজা আক্তার বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার চালাতে কোনো বাধা দিচ্ছি না, তবে সহযোগিতাও করছি না। প্রধান শিক্ষকই আমাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন না।’
এদিকে পরীক্ষা গ্রহণে এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। তাঁরা বিদ্যালয়টির মূল ফটকের সামনে হইচই করে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। ফারজানা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের পরিবর্তে অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা চালানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন।
আরও পড়ুন‘শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, বাজে নজির হয়ে থাকবে’৩ ঘণ্টা আগেআরেকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন, এটা ভালো কথা। কিন্তু খুদে শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল।
এ ছাড়া পরীক্ষার হলে অভিভাবকদের দায়িত্ব পালনের সময় নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ‘যেসব অভিভাবক পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা নিজেদের ও পরিচিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর বলে দিয়েছেন।
পরীক্ষা গ্রহণে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সখীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত এক অভিভাবক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বাচ্চা যে কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল, সে কক্ষে দায়িত্ব পালন করিনি। আমি চেষ্টা করেছি, সহকারী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই মূলত এটি করেছি।’
আমার বাচ্চা যে কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল, সে কক্ষে দায়িত্ব পালন করিনি। আমি চেষ্টা করেছি, সহকারী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই মূলত এটি করেছি।পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত এক অভিভাবকআরও পড়ুন‘স্কুলে এসে দেখছি পরীক্ষা স্থগিত’৫ ঘণ্টা আগেউপজেলার দু–একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কালিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সক্রিয় কর্মী মুক্তি মালেক। তিনি বলেন, তবে অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে বিরত ছিলেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক অধিদপ্তর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। তবে কিছু বিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে শুনেছি ও দেখেছি। তবে আমি মনে করি, সহকারী শিক্ষকদের অন্তত পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করা উচিত।’