ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর মহিলা মহাবিদ্যালয়। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত। আধা পাকা ভবনে ছয়টি কক্ষ রয়েছে। ২০০৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিতে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সেই মহাবিদ্যালয় থেকে চারজনের মধ্যে একজনও পাস করতে পারেননি।

সালন্দর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের মতো ঠাকুরগাঁও থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় আরও পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেননি। সেই পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো ঠাকুরগাঁও শহরের আমানতউল্লাহ ইসলামী একাডেমি স্কুল ও কলেজ, ঠাকুরগাঁও নিউ মডেল স্কুল ও কলেজ, রানীশংকৈল উপজেলার গোগর কলেজ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রত্নাই বগুলাবাড়ি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং পীরগঞ্জ উপজেলার একতিয়ারপুর শহীদ সালাউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শূন্য পাস করা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নগণ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। একটিতে ছিলেন একজন পরীক্ষার্থী।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সালন্দর মহিলা মহাবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে চড়ে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগলের দল। কিন্তু সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর দেখা নেই। এ সময় রুবিনা বেগম নামে এক নারী মহাবিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এদিক দিয়ে সব সময় যাতায়াত করি, কিন্তু কোনো ছাত্র-ছাত্রী দেখি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনের নার্সারিতে যান। কলেজের একজন পিয়নকে পেয়ে যাবেন।’ সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এক ব্যক্তি পলিথিনে মাটি ভরছেন। তাঁর নাম মশিউর রহমান। তিনি মহাবিদ্যালয়টির অফিস সহায়ক। তাঁর কাছে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের কথা জানাতেই তিনি উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘পরীক্ষার রেজাল্ট হইছে নাকি?’ মহাবিদ্যালয়ে কতজন শিক্ষার্থী আছেন, সেখানে পাঠদান হয় কি না—এ বিষয়ে তিনি সরাসরি বলেন, ‘আমি জানি না। সব প্রিন্সিপাল স্যার জানেন।’

পরে মশিউর রহমানের কাছ থেকে অধ্যক্ষ আলম সরকারের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল ধরেননি।

কলেজের সামনে একটি পানের দোকান করেন আশরাফ আলী। তিনি জানান, কাগজে–কলমে ছাত্রছাত্রী দেখানো হলেও বাস্তবে শিক্ষার্থী নেই। পরীক্ষা এলেই ছাত্রছাত্রী ধরে নিয়ে আসা হয়। লেখাপড়া না হওয়ায় তাঁরাও পাস করতে পারেন না। ২০২২ সালেও এই মহাবিদ্যালয় থেকে ১১ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ পাস করতে পারেননি বলে শুনেছেন তিনি।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেবল সরকারি সুবিধার আশায় কলেজটা টিকায়া রাখা। এখানে লেখাপড়াই হয় না, ছাত্ররা খালি খালি পরীক্ষায় অংশ নেয়।’

রানীশংকৈল উপজেলার গোগর মহাবিদ্যালয় থেকে এবার পাঁচজন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও কেউ পাস করতে পারেননি। বেলা দুইটার দিকে মহাবিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাবিদ্যালয়ের মাঠ খাঁ খাঁ করছে। জনমানব কেউ নেই। ভবনের বারান্দায় ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। এ সময় গোলাম ফারুক নামের এক যুবক জানান, কলেজ থেকে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১৩ জন ও গতবার ৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু কেউ পাস করতে পারেননি। আর এবারও কেউ পাস করতে পারেননি। তিনি বলেন, কলেজে পড়ালেখা না থাকলে, ছাত্ররা পাস করবে কেমন করে?

গোগর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবুল কালাম জানান, মহাবিদ্যালয়টি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ১৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। ২০০৪ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আসছে মহাবিদ্যালয়টি। তাঁর দাবি, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করে। এখানে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তারা পড়াশোনায় অনিয়মিত। শিক্ষকেরা চেষ্টা করেও তাদের নিয়মিত করতে পারেননি। এ জন্য এমন ফলাফল হয়েছে।

১৯৬৫ সালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় রত্নাই বগুলাবাড়ী হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৩ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫ সাল থেকে কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। গতবার সেখান তিন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ পাস করতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে দুজন এবার আবার পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু এবারও তাঁরা পাস করতে পারেননি।

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হায়দার আলী জানান, ‘হাইস্কুল পর্যায়ে ৬১৯ শিক্ষার্থী রয়েছে। এসএসসির ফলাফলও ভালো। তবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়টি দাঁড় করানো যাচ্ছে না। এখন কলেজে কোনো শিক্ষার্থী নেই। তবে প্রতিবছর এখান থেকে দুই-চারজন পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু পাস করতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে আমরাও হতাশ।’
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও শহরের আমানতউল্লাহ ইসলামী একাডেমি স্কুল ও কলেজ থেকে পাঁচজন, ঠাকুরগাঁও নিউ মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে চারজন এবং পীরগঞ্জ উপজেলার একতিয়ারপুর শহীদ সালাউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে একজন পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও কেউ পাস করেননি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে জানান, প্রতিষ্ঠার পর পাঠদানের চেয়ে পাঠদানের অনুমোদন টিকিয়ে রেখে এমপিওভুক্তির প্রতি শিক্ষকদের আগ্রহ বেশি থাকে বলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেনতেন পাঠ চলে। আবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষার্থীও নেই। কেবল পরীক্ষা এলে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এসব অনিয়মিত পাঠের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলাফল তাই আশাব্যঞ্জক হয় না।

ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জেলার ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। গতবারও পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থী পাস করেননি। এবারের শূন্য পাসের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এর আগেও কয়েক বছর কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তের সময় এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানাতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ঠাকুরগাঁওয়ে ৮ হাজার ৭৪৯ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৪ হাজার ৬৩১ জন। পাসের হার ৫২ দশমিক ৯৩। জিপিএ পাঁচ পেয়েছেন ৩০৭ জন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় অ শ ন য় স ক ল ও কল জ ক উ প স করত র এইচএসস ক উ প স কর পর ক ষ র থ জন শ ক ষ কল জ থ ক ন পর ক ষ উপজ ল র র ফল ফল একজন প প র নন ঠ ক রগ চ রজন

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রীনগরে ঘরে আগুন লেগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত নারীর মৃত্যু 

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় ঘরে লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে সামেলা বেগম (৬৮) নামে পক্ষাঘাতগ্রস্ত নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার শ্যামসিদ্ধ ইউনিয়নের গাদিঘাট মিত্তেরহাটি এলাকার আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার বাড়িতে মারা যান তিনি।

আরো পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফ্ল্যাটে আগুন লেগে একজনের মৃত্যু

বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু

স্থানীয়রা জানান, বাড়িতে সামেলা বেগম একাই ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তার পরিবারের সদস্যরা এক আত্মীয়ের দাফন কাজে বাইরে ছিলেন। হঠাৎ সালেমা বেগমের ঘরে আগুন দেখে এলাকাবাসী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিহত সামেলা বেগমের স্বামী আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। আগুনে তাদের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত। দুইটি ঘর সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে সামেলা বেগমের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা/রতন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘অধিকাংশ পাকিস্তানি পুরুষ অবিশ্বস্ত, আমি বিদেশি বিয়ে করব’
  • ট্রাম্পের চাটুকারিতা করেই কি পাকিস্তানের কূটনীতিকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন শাহবাজ
  • এইচএসসির ফলাফল: পঞ্চগড়ে ৩ কলেজে পাস করেনি কেউ
  • শিবিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র মজুত ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের হুমকির অভিযোগ আনল ছাত্রদল
  • রাজশাহী বোর্ডে মানবিকে ছেলেদের ভরাডুবি, জিপিএ-৫ পাওয়ায় মেয়েরা এগিয়ে
  • পাঁচটি কলেজে ৯ পরীক্ষার্থী, পাস করেননি কেউ
  • চাপাইনবাবগঞ্জে দুই কলেজে ৩ শিক্ষার্থী, শতভাগ ফেল
  • রাত জাগি না, তবুও দুই চোখের চারদিকের ত্বক শুষ্ক হয়ে আসছে কেন
  • শ্রীনগরে ঘরে আগুন লেগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত নারীর মৃত্যু