জুলাই সনদ পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 17th, October 2025 GMT
জুলাই জাতীয় সনদ শুধু জাতির জন্য নয়, সারা দুনিয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
২৫ রাজনৈতিক দলের যেসব নেতারা অংশ নিলেন
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি যেসব দল
এর আগে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে বিশেষ ক্ষণ ও মহান দিবস আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আজ সমস্ত জাতি, সমস্ত রাজনৈতিক দল একসাথে হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন গঠনের সময় মনে হয়েছিল দুয়েকটি বিষয়ে হয়তো একমত হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো কেউ কারও কথা শোনে না। ভয়ে ভয়ে ঐকমত্য কমিশন শুরু হয়েছিল। প্রফেসর আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হলো যেন বুঝেশুনে এগোন। তিনি চমৎকার আলোচনা চালিয়ে নিয়েছেন।”
ঐকমত্য কমিশন সব রাজনৈতিক দলসহ সারা জাতিকে এই আলোচনায় শরিক করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল কয়েক বিষয়ে একমত হবে। আজকে দীর্ঘ তালিকা (একমতের) নিয়ে সনদ সম্মন্নয় করতে পারছি।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই জাতীয় সনদের গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই দিনটি যে পেলাম, এক মহান দিন। শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। এটা নিয়ে বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনা হবে। যে উদাহরণ আমাদের রাজনীতিবিদরা কৈরি করেছেন, এটা সারা পৃথিবীর জন্য নজির হয়ে থাকবে।”
ভাষণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের স্মরণ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “যারা আহত–নিহত হয়েছে তাদের কথা স্মরণ করি। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তাদের কাছে সারা জাতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলাম সবাই মিলে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তন হলো ছাত্র–জনতার অথ্যত্থানের কারণে। আমরা পুরোনো কথা পাল্টে নতুন কথাগুলো নিয়ে আসলাম। এই পরিবর্তন আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে।”
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “আজ বাংলাদেশের নবজন্ম হলো। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা একমত হয়েছি। এই ঐকমত্য সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এই পরিবর্তনের জন্য যারা জীবন দিয়েছে, সেই তরুণরা এ দেশকে গড়বে। তারা আমাদের পথ দেখাবে। এই দেশ তরুণদের দেশ।”
দেশে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নীচে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটা (তরুণ জনগোষ্ঠী) আমাদের সম্পদ। কোনো কোনো দেশে তো এখন তরুণ সেভাবে নাই। সারা দুনিয়া তাকিয়ে আছে কখন আমরা এদের পাঠাব। এটা আমাদের সুবর্ণ সুযোগ। তরুণদের এগিয়ে দেওয়া। পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ। আমাদের কাছে প্রস্তাব আসছে–তাদের পাঠান। ২০০৬–২৭ সালে হাত জোর করে আসবে।”
জুলাই সনদ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এ সনদের মাধ্যমে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এক বর্বর যুগে ছিলাম যেখানে আইন–কানুন ছিল না। এমন সভ্যতা আমরা গড়ে তুলব মানুষ ঈর্ষার চোখে আমাদের দেখবে। আমরা এখন নিয়মমাফিক চলার জন্য তৈরি হয়েছি। জুলাই সনদের দেখানো পথে আমরা চলব।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার। শুধু আমাদের সমাজটাকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি একমত হয়, অন্যসব কাজেও যদি একমত হই, একসাথে চলি, এটা অনন্য দেশ হবে।”
জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আজ যে ঐক্যের সুর বেজে উঠল, তা দিয়ে আমরা নির্বাচনে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সুন্দর ও উৎসবমুখর নির্বাচন করার ব্যাপারে কথা বলুন। নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করব। আমরা পারব, ইনশাল্লাহ। বাইরের লোক এসে যেন কথা বলতে না পারে।”
ভাষণের আগে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
ঢাকা/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র ড ম হ ম মদ ইউন স জ ল ই জ ত য় সনদ জ ল ই সনদ আম দ র স ব র জন র জন য ত র জন
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপিকে রাজি করাতে শেষ সময়েও সরকারের নানা চেষ্টা
জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে সই করবে না এনসিপি। বৃহস্পতিবার সকালে দলটির এমন ঘোষণার পর শুক্রবার বিকেলের অনুষ্ঠানে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও জোরালো হয়েছে।
তবে এনসিপিকে রাজি করাতে বৃহস্পতিবার দিনভর সরকারের দিক থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা চেষ্টা ও তৎপরতা চলেছে। সর্বশেষ রাতেও এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এনসিপি কিছুটা নমনীয় হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন আশা করছে, দলটির নেতারা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সনদে সই করবেন। তবে এ বিষয়ে রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এনসিপির দিক থেকে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর প্রস্তুত করা জুলাই সনদে সই করার জন্য শুক্রবার ১৭ অক্টোবর দিন ধার্য করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর দুই দিন আগে মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন এনসিপির শীর্ষ নেতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, এনসিপির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে দীর্ঘ আলাপে যুক্ত ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। মাহফুজ আনুষ্ঠানিকভাবে দলের কেউ না হলেও তিনি এনসিপির বিষয়ে প্রভাব রাখেন।
এনসিপির নেতাদের কাছে তাঁর গুরুত্ব আছে। তাঁরা দলটির পক্ষ থেকে জানান, ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে সংস্কারপ্রক্রিয়া না এগোলে এনসিপি সনদে সই করবে না। তাঁরা সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে নতুন করে আলোচনা শুরু করার পক্ষেও মত দেন। তাঁরা চান সংবিধান স্থগিত করে বিশেষ আদেশ (প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার) জারি করা হোক এবং সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে জারি করতে হবে।
এনসিপির এমন অবস্থান ও সার্বিক পরিস্থিতিতে সনদ স্বাক্ষর নিয়ে সংশয়ে পড়ে ঐকমত্য কমিশন। তারা ৩০টি দলকে চিঠি দিয়ে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক করে। সন্ধ্যার ওই বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সনদ বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত দলের আগের অবস্থান তুলে ধরেন।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে এনসিপি সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিকতা হবে। তিনি বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে সেটা মূল্যহীন হবে। এ কারণে শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি।
আগের দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নাহিদ ইসলামের বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার সকালের এমন বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় সরকারের দিক থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। তাদের জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সম্মত করার চেষ্টা করা হয়।
সরকার-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সরকারের একজন উপদেষ্টার অনুরোধে দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও এ বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। সনদে সই না করলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, সে বিষয়টাও বোঝানোর চেষ্টা করেন। পরে রাতে সরকারের দুজন উপদেষ্টা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন নাহিদ ইসলামের সঙ্গে। প্রধান উপদেষ্টাও বিষয়টি নিয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।
মাহফুজ এনসিপির পদে না থাকলেও দলটির সঙ্গে তাঁর একধরনের যুক্ততা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, দুই উপদেষ্টার সঙ্গে রাতে আলোচনার পর এনসিপির শীর্ষ নেতা কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। তবে এনসিপির ভেতরে এ বিষয়ে নানা মত ও চিন্তা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাতেই দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আলোচনা করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
অবশ্য এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁরা আশা করছেন, এনসিপিসহ সবাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। এমনকি শুক্রবারের পরও সনদে সই করার সুযোগ থাকবে।
আরও পড়ুনআইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম১২ ঘণ্টা আগেএদিকে সরকারের সঙ্গে রাতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়ে জানতে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবের কাছে জানতে চাইলে তিনি রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের জায়গা থেকে চেষ্টা আছে জুলাই সনদ স্বাক্ষরটা নির্বিঘ্নে হোক। কিন্তু আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো জুলাই সনদকেও এক দলের সনদে পরিণত করার চেষ্টা দেখছি। জুলাই সনদ স্বাক্ষরে রাজি করাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে সরকার। এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে এ রকম কোনো তথ্য নেই।’