এ বছর উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফল বিপর্যয় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বহুমুখী সংকট ও গলদকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। অথচ সেটাকে আমরা দশকের পর দশক ধরে কার্পেটের তলায় চাপা দিয়ে এসেছি। এতে ফলাফলের অঙ্কটাকে সাফল্য হিসেবে দেখানো গেছে ঠিকই, কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র ও সমাজকে ঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন নাগরিক তৈরি হচ্ছে না। সবখানেই বুদ্ধিবৃত্তিক মেধাশূন্যতার জয়জয়কার। এই বিবেচনায় এবারের এইচএসসির ফলাফল প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার পুরোনো ব্যবস্থার সঙ্গে ছেদ ঘটিয়ে নতুন শুরুর সতর্কঘণ্টা শুনিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন প্রকাশিত এইচএসসির ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এবারের পরীক্ষায় পাসের হার দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। ১০ লাখ ৪৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৫ লাখ ৯৮ হাজার, শতকরা হিসাবে যা ৫৭ দশমিক ১২। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। এর অর্থ প্রায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। ফলাফলের বিচারে এ অঙ্কটা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এর বড় একটা অংশ ঝরে পড়ার আশঙ্কা আছে। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষাতেও পাসের হার ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। এবারের এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৬৩ হাজার ২১৯, গতবার এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার।

পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর বিচারে এই ফলাফল নিঃসন্দেহে বড় একটা বিপর্যয়। ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শহর অঞ্চলের কলেজগুলোর ফলাফল গ্রাম ও মফস্‌সল এলাকার কলেজগুলোর তুলনায় বেশ ভালো। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা শ্রেণিকক্ষের বাইরে কোচিং, গাইড ও প্রাইভেট শিক্ষকনির্ভর হয়ে উঠেছে। এর ফলে শিক্ষায় যে বিপুল ব্যয় বেড়েছে, তা নির্বাহের সক্ষমতা বিপুলসংখ্যক অভিভাবকেরই নেই। এইচএসসির ফলের এই বিপর্যয়কে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বাইরে গিয়ে দেখার সুযোগ খুবই সীমিত।

আন্দোলনসহ নানা কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস হয়নি। এরও একটি প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন ইংরেজিতে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ আগের বছরগুলোর তুলনায় কম কেন, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার শিক্ষাব্যবস্থায় অস্বস্তিকর সত্যকে তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর ধরে বাড়তে থাকে। আমরা মনে করি, উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন, আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি, যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছে। এখানে পাসের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ-৫-এর সংখ্যা তৃপ্তির মানদণ্ড!

কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি, দায়টা কি তাঁদের, না শিক্ষা নিয়ে ভুল নীতির। শিক্ষার এই দৈন্য নিয়ে বহু বছর ধরেই শিক্ষাবিদেরা, অভিভাবকেরা অভিযোগ করে আসছেন। সবাই আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের আশু কর্তব্য হিসেবে শিক্ষা খাত সংস্কারের জন্য কমিশন করবে। কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের মতোই পাঠক্রম বদল ছাড়া শিক্ষা খাতে কোনো সংস্কার উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

এইচএসসির ফল বিপর্যয়, নিশ্চিত করেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে, তারই প্রতিফলন দেখা গেল। এখন সরকারের গুরুদায়িত্ব হলো গলদগুলো চিহ্নিত করে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে মনোযোগী হওয়া। এইচএসসিতে যাঁরা কৃতকার্য হয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন। যাঁরা কৃতকার্য হতে পারেননি, তাঁদের মনে রাখতে হবে, ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিভাবক, স্বজন, শিক্ষক সবাইকে সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র শ ক ষ ব যবস থ এইচএসস র ফল ব যবস থ র আম দ র বছর র ফল ফল

এছাড়াও পড়ুন:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, আবেদনের শেষ ৫ ডিসেম্বর, আবেদন ১১ ধাপে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৫–২০২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) এবং বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তিতে আবেদন শেষ আগামীকাল ৫ ডিসেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন।

প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষা হবে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হবে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের মান নির্ধারণ করা হয়েছে ০.৭৫ নম্বর। এর মধ্যে এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ৭২ নম্বর, এসএসসি বা সমমান ফলের জন্য ১০ নম্বর এবং এইচএসসি বা সমমান ফলের জন্য ১৮ নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এর আগে ১৩ নভেম্বর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও নেগেটিভ মার্কিং পুনরায় চালু রাখার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে ছিলেন।

আরও পড়ুনবার্ষিক পরীক্ষার সময় স্কুলে ‘শাটডাউন’: আলোচনা করে সমাধান না করলে ক্ষতি বাড়বে১ ঘণ্টা আগে

ইউনিট ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’–এর জন্য ১ হাজার টাকা ও ইউনিট ‘ই’ (চারুকলা)–এর জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে (বিকাশ, রকেট ও সেলফিন) ফি পরিশোধ করা যাবে।

ভর্তি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা অনুযায়ী, বিজ্ঞান ইউনিটে মোট জিপিএ (এসএসসি ও এইচএসসি) ন্যূনতম ৭.৫০, কলা ও আইন, ব্যবসায় শিক্ষা এবং সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে কমপক্ষে ৬.৫০ জিপিএ থাকতে হবে। চারুকলা ইউনিটে আবেদনের জন্য ন্যূনতম মোট জিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.০০।

ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী, ‘ই’ (চারুকলা অনুষদ) ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৩ ডিসেম্বর। ‘এ’ (বিজ্ঞান) ইউনিটের পরীক্ষা হবে ২৬ ডিসেম্বর, ‘সি’ (ব্যবসায় শিক্ষা) ইউনিটের ২৭ ডিসেম্বর, ‘ডি’ (সামাজিক বিজ্ঞান) ইউনিটের ৯ জানুয়ারি এবং ‘বি’ (কলা ও আইন) ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি।

আরও পড়ুনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন শুরু, পরীক্ষা আবেদন শেষে ১৪ দিনের মাথায়২২ নভেম্বর ২০২৫

নির্দেশিকায় আরও বলা হয়, কোনো ধরনের জালিয়াতি, অসদুপায় অবলম্বন বা পরীক্ষায় অনিয়ম প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবেদনের ১১ ধাপ—

১. প্রথমে এইচএসসি , এসএসসি রোল নম্বর, মোবাইল নম্বর দিয়ে পাসওয়ার্ড নিতে হবে। পাসওয়ার্ড মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে।

২. লগইন করতে হবে।

৩. লগইন করার পরে Dashboard-এ যে সকল ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবেন তার তালিকা আছে। যে ইউনিটে আবেদন করবেন “Click here to Apply” বাটনে ক্লিক করে আবেদন করতে হবে।

৪. ছবি এবং স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে।

৫. Question version সিলেক্ট করতে হবে।

আরও পড়ুনকুয়েট ভর্তি পরীক্ষা: জেনে নিন ১০৬৫ আসনের খুটিনাটি০২ ডিসেম্বর ২০২৫

৬. পরীক্ষার কেন্দ্র (A এবং B ইউনিটের জন্য) সিলেক্ট করতে হবে।

৭. যদি কোটা থাকে কোটার ধরন এবং ফাইল আপলোড করতে হবে।

৮. bKash এবং Rocket-এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে।

৯. পেমেন্ট করার পরে Final Submit করতে হবে।

১০. Final Submit পর আর কোন তথ্য আপডেট করা যাবে না।

১১. আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর লগআউট করতে হবে।

ভর্তিসংক্রান্ত সব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনরুয়েটের ভর্তিতে বিজ্ঞপ্তি, আসন ১২৩৫, পদ্ধতিসহ জেনে নিন বিস্তারিত৩০ নভেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনগুচ্ছ ভর্তিপ্রক্রিয়ায় থাকছে যে ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়, এবারও নেই ৫টি১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, আবেদনের শেষ ৫ ডিসেম্বর, আবেদন ১১ ধাপে
  • দিনভর আনন্দ উৎসবে ‘সোনার মানুষ’ হওয়ার প্রত্যয়