রাজধানীর আগারগাঁও বাজার বণিক সমবায় সমিতির বৈদ্যুতিক সংযোগের হিসাব নম্বর-১৭০০৪৯৯০ অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৭ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

কিন্তু সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭৯ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে। যা প্রকৃত পরিশোধের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা বেশি। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে কমিটির নেতারা ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

বিদ্যুৎ বিলের বাইরে নেতারা কুলখানি ও মিলাদ, আপ্যায়ন, প্রশাসনিক খরচ, অনুদান, সম্মানী ভাতা, মামলার খরচ, বিদ্যুতের মালামাল ক্রয় ও যাতায়াত বাবদ ব্যয় দেখিয়ে গত দুই অর্থবছরে অন্তত দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ মর্মে সমিতির সদস্যরা জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। অনেক খাতে টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে, যেখানে সমিতির ব্যয়ের সুযোগ নেই এবং সদস্যদের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।

বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী

সমিতির সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিটির নেতারা ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় থেকেই সাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করছেন। প্রতিবাদ করলে সদস্যপদ বাতিল ও নানাভাবে অত্যাচার করা হয়। অতীতে এর মূলে ছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগপন্থী নেতারা। বর্তমানে বিএনপিপন্থী নেতারা সক্রিয় এবং আওয়ামীপন্থীদের যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ চলছে।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সমিতির মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ চলছে নূরানী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মাধ্যমে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি দোকানের আকার প্রায় ৭০ বর্গফুট বা তার বেশি। কিছু দোকান একত্রে বড় আকারে তৈরি হচ্ছে। নকশা অনুযায়ী, দুটি বেজমেন্টসহ ভবনটি ১৩ তলার। বেজমেন্ট-২–এ পার্কিং, বেজমেন্ট-১–এ কাঁচাবাজার এবং নিচতলা থেকে দোকান থাকবে। মোট সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৪৫৫টির বাইরে আরও অর্ধশত দোকান তৈরি হবে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় দুই লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান ‘বিএনপি-আওয়ামী’ জোট

সাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির সদস্যরা। অতীতে কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করতেন। এখন এ কাজে তাঁদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, যোগসাজশ করছেন কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থী নেতারা। ফলে পটপরিবর্তনের পর সদস্যরা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

বাজারের বর্তমান কমিটি নেতারা ২০২৩ সালের মার্চে নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময় ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন এবং থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসফিকুর রহমানের (উজ্জ্বল) প্রভাব ছিল। তাঁদের প্রভাবে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী, যিনি শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নুর-শাহী এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক মামুন হোসেন ছিলেন থানা কমিটির সদস্য।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থী নেতারা সক্রিয় হন। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহসভাপতি মো.

নুরুজ্জামান। তাঁর ছেলে মো. মনিরুজ্জামান ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির শেরেবাংলা নগর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক। আছেন শেরেবাংলা নগর থানা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য সমিতির পরিচালক শাহ আলম। বিএনপিপন্থী আরও তিন পরিচালক—শাহাদাত হোসেন, আতাউল কবির ও আবু সাঈদও রয়েছেন।

প্রশ্রয় ও যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করছেন থানা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য পরিচালক শাহ আলম। তিনি বলেছেন, গত ১৬ বছর এতটাই নির্যাতিত হয়েছেন যে তিনি দেশেও থাকতে পারেননি। তাঁদের কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি, দেবেন না। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে থাকার বিষয়ে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী বলেন, বাজারের স্বার্থে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ রাখতেই ওই পদ গ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনে তাঁর বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী থাকায় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সহযোগিতায় কোষাধ্যক্ষ পদে ছিলেন।

সদস্যদের অভিযোগ, অতীতে সমিতি থেকে কারও কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে বলে সদস্যরা কেউ জানেন না। এ ছাড়া কুলখানি আয়োজন করবেন মৃত ব্যক্তির পরিবার, স্বজন ও সন্তানেরা। কোনো মিলাদ মাহফিলের বিষয়েও সদস্যরা জানেন না।কুলখানি, মিলাদ, অনুদানে ব্যয়

বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা কুলখানি, মিলাদ মাহফিল ও অনুদান বাবদ সমিতির টাকার ব্যয় দেখিয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই খাতে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সমিতি থেকে অনুদান দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর ২০২৪-২৫–এ খাতে বরাদ্দ ছিল ছয় লাখ টাকা।

সদস্যদের অভিযোগ, অতীতে সমিতি থেকে কারও কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে বলে সদস্যরা কেউ জানেন না। এ ছাড়া কুলখানি আয়োজন করবেন মৃত ব্যক্তির পরিবার, স্বজন ও সন্তানেরা। কোনো মিলাদ মাহফিলের বিষয়েও সদস্যরা জানেন না। মিলাদ-কুলখানিতে অর্থ ব্যয়ের জন্য সদস্যরা অনুমোদনও দেননি। তাই ওই সব খাতে সদস্যদের আমানতের টাকা ব্যয়ের সুযোগ নেই। সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করেই ওই তিন খাতে ব্যয় দেখিয়েছেন সমিতির নেতারা।

অভিযোগকারী আরেক সদস্য ইসফাকুল কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির নেতারা সদস্যদের উপস্থিতির স্বাক্ষরকে প্রস্তাব অনুমোদনের স্বাক্ষর দেখিয়ে ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছেন। আসলে অধিকাংশ সদস্য আত্মসাতের বাজেট সমর্থন করেননি।

ছয় খাতের ব্যয় নিয়েও আপত্তি

সদস্যদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা ছয় খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখিয়েছেন। খাতগুলো হলো আপ্যায়ন, প্রশাসনিক, সম্মানী ভাতা, মজুরি, মামলা পরিচালনা ও যাতায়াত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সম্মানী ভাতায় ৬ লাখ ৯৪ হাজার, আপ্যায়নে ৬ লাখ ৩৬ হাজার এবং প্রশাসনিক খরচে ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-বোনাস দেওয়ার পরও আলাদা করে মজুরি বাবদ দেড় লাখ ও যাতায়াতে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। অথচ সমিতির কাজের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ এক-দুই কিলোমিটার দূরের সংশ্লিষ্ট সমবায় কিংবা গণপূর্তের কার্যালয়ে যাওয়া লাগে।

অভিযোগকারীরা বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে নতুন মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর পর সব দায়িত্ব গণপূর্ত ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। সদস্যরা কিস্তিতে সেই টাকা পরিশোধ করছেন। তাই আপ্যায়ন কিংবা প্রশাসনিক খরচ ঠিকাদারের বহন করার কথা। এসব খাতে দেখানো বিপুল ব্যয় মূলত আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ওই ছয় খাতে আগের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি, অর্থাৎ ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সম্মানী ভাতায় ২০ লাখ এবং আপ্যায়ন ও মামলা খরচে ১০ লাখ করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান তদন্ত চলছে

সদস্যদের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ৬ অক্টোবর দেওয়ার কথা ছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, তাঁর অসুস্থতার কারণে আরেকজন কর্মকর্তা কাজটি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ওই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হলে তিনি নতুনভাবে কাজ শুরু করেছেন। সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে আয়-ব্যয়ের সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য পেলে সেগুলো যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ট র ন ত র কর মকর ত ক ন য় গ কর সমব য় ক ব এনপ র র জন য কর ছ ন অন দ ন বর দ দ তদন ত আওয় ম করছ ন আপত ত প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় কি তাহলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে যুদ্ধবিরতি চলার মধ্যেও গত কয়েক দিনে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৩০ জন।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা একাধিকবার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন এবং গাজায় বোমা বর্ষণ করেছেন। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাফা এলাকায় হামাস যোদ্ধারা তাদের সেনাদের ওপর হামলা করেছেন। আর এ অভিযোগ তুলে তারা গাজায় হামলা চালিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় নির্বিচার ও নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মোট ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মানুষ আহত হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের চালানো হত্যাযজ্ঞকে জাতিসংঘ–সমর্থিত একটি কমিশন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এখন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে কিছু প্রশ্ন উঠছে। তা হলো যুদ্ধবিরতি আসলে কে ভেঙেছে? এখনো কি যুদ্ধবিরতি চলছে? ফিলিস্তিনি জনগণ কি শেষ পর্যন্ত শান্তি ও সহায়তা পাচ্ছেন?

এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি—

কেন বলা হচ্ছে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন হয়েছে

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত রোববার বলেছে, হামাস চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং রাফায় সংগঠনটির দুই যোদ্ধা দুই ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছেন।

এরপর ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ‘ব্যাপক ও বিস্তৃত’ হামলা চালায়।

হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডস বলেছে, তারা কোনো সংঘর্ষের খবর জানে না। তাদের দাবি, রাফা এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ওই এলাকায় কোনো ফিলিস্তিনি যোদ্ধার সঙ্গে ব্রিগেডসের যোগাযোগ হয়নি।

হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের যে এই একটি অভিযোগই তোলা হয়েছে, তা নয়।

ইসরায়েল বলেছে, হামাস ২৮ জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করছে। এই জিম্মিরা গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলার সময় নিহত হয়েছিলেন।

হামাস শুরু থেকেই বলে আসছে, যুদ্ধে বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সব জিম্মির মরদেহ এবং প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনির মরদেহ খুঁজে বের করতে ভারী খননযন্ত্রের প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে এবং কাতার, মিসর ও তুরস্কের সহায়তায় যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করা হয়।

যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো কী ছিল

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে এবং কাতার, মিসর ও তুরস্কের সহায়তায় যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করা হয়।

হামাস বলছে, তারা সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার এবং একটি ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রশাসনের’ হাতে গাজার শাসনভার তুলে দেওয়ার শর্তও গ্রহণ করেছে।

বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে হামাস বলেছে, এগুলোকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর মধ্যে রেখে সমাধান করতে হবে। তারা ওই জাতীয় কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে এবং এতে তারা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুনগাজায় ৯৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পরও ট্রাম্প বললেন, যুদ্ধবিরতি টিকে আছে২০ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েল কি চুক্তির শর্ত মানছে

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় বলেছে, ইসরায়েল ৮০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং অন্তত ৯৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

গত শুক্রবার ইসরায়েলি সেনারা একটি বেসামরিক যানে গুলি চালান। এতে জেইতুন এলাকার আবু শাবান পরিবারের ১১ সদস্য নিহত হন। এর মধ্যে সাত শিশু এবং তিন নারী ছিলেন। পরিবারটি তাদের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

গত রোববার গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলা ও অন্যান্য হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হন।

গতকাল ইসরায়েল আবার চুক্তি মেনে চলবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও তারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শুজাইয়া এলাকায় কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলের দাবি, ওই ফিলিস্তিনিরা ‘ইসরায়েলি সেনাদের জন্য হুমকি’ তৈরি করেছিলেন। তাঁরা ‘হলুদ সীমারেখা’ অতিক্রম করেছেন।

যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজায় যে সীমা বরাবর ইসরায়েলি বাহিনী সরে এসেছে, তাকে ‘হলুদ সীমা’ বলা হয়। এই সীমানা পেরোনোর ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রেখেছে এবং রাফা ক্রসিং বন্ধ রেখেছে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘকে ইসরায়েল বলেছে, তারা কেবল ৩০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেবে—যা চুক্তিতে উল্লিখিত সংখ্যার অর্ধেক।

গাজার মধ্যাঞ্চলীয় বুরেইজ শিবিরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের একটি ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলার পর ফিলিস্তিনিরা ছোটাছুটি করছেন। ১৯ অক্টোবর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বীকন ফার্মার মুনাফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ
  • ভারতের এত টস হারের রহস্য কী
  • স্কয়ার টেক্সটাইলের মুনাফা বেড়ে ১৪৩ কোটি টাকা
  • ২,৩৯৭ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা স্কয়ার ফার্মার
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে শুল্ক–কর আদায়ে ঘাটতি ৯ হাজার কোটি টাকা
  • সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের লক্ষ্যে নতুন নির্দেশনা
  • গাজায় কি তাহলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে
  • রেমিট্যান্স: ২০ দিনে ২১ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম
  • সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি, এপিএর পরিবর্তে জিপিএমএস