অর্থ আত্মসাতে ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি’ জোট
Published: 23rd, October 2025 GMT
রাজধানীর আগারগাঁও বাজার বণিক সমবায় সমিতির বৈদ্যুতিক সংযোগের হিসাব নম্বর-১৭০০৪৯৯০ অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৭ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
কিন্তু সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭৯ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে। যা প্রকৃত পরিশোধের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা বেশি। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে কমিটির নেতারা ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
বিদ্যুৎ বিলের বাইরে নেতারা কুলখানি ও মিলাদ, আপ্যায়ন, প্রশাসনিক খরচ, অনুদান, সম্মানী ভাতা, মামলার খরচ, বিদ্যুতের মালামাল ক্রয় ও যাতায়াত বাবদ ব্যয় দেখিয়ে গত দুই অর্থবছরে অন্তত দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ মর্মে সমিতির সদস্যরা জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। অনেক খাতে টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে, যেখানে সমিতির ব্যয়ের সুযোগ নেই এবং সদস্যদের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরীসমিতির সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিটির নেতারা ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় থেকেই সাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করছেন। প্রতিবাদ করলে সদস্যপদ বাতিল ও নানাভাবে অত্যাচার করা হয়। অতীতে এর মূলে ছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগপন্থী নেতারা। বর্তমানে বিএনপিপন্থী নেতারা সক্রিয় এবং আওয়ামীপন্থীদের যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ চলছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সমিতির মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ চলছে নূরানী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মাধ্যমে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি দোকানের আকার প্রায় ৭০ বর্গফুট বা তার বেশি। কিছু দোকান একত্রে বড় আকারে তৈরি হচ্ছে। নকশা অনুযায়ী, দুটি বেজমেন্টসহ ভবনটি ১৩ তলার। বেজমেন্ট-২–এ পার্কিং, বেজমেন্ট-১–এ কাঁচাবাজার এবং নিচতলা থেকে দোকান থাকবে। মোট সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৪৫৫টির বাইরে আরও অর্ধশত দোকান তৈরি হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় দুই লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান ‘বিএনপি-আওয়ামী’ জোটসাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির সদস্যরা। অতীতে কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করতেন। এখন এ কাজে তাঁদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, যোগসাজশ করছেন কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থী নেতারা। ফলে পটপরিবর্তনের পর সদস্যরা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
বাজারের বর্তমান কমিটি নেতারা ২০২৩ সালের মার্চে নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময় ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন এবং থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসফিকুর রহমানের (উজ্জ্বল) প্রভাব ছিল। তাঁদের প্রভাবে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী, যিনি শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নুর-শাহী এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক মামুন হোসেন ছিলেন থানা কমিটির সদস্য।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থী নেতারা সক্রিয় হন। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহসভাপতি মো.
প্রশ্রয় ও যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করছেন থানা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য পরিচালক শাহ আলম। তিনি বলেছেন, গত ১৬ বছর এতটাই নির্যাতিত হয়েছেন যে তিনি দেশেও থাকতে পারেননি। তাঁদের কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি, দেবেন না। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে থাকার বিষয়ে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী বলেন, বাজারের স্বার্থে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ রাখতেই ওই পদ গ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনে তাঁর বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী থাকায় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সহযোগিতায় কোষাধ্যক্ষ পদে ছিলেন।
সদস্যদের অভিযোগ, অতীতে সমিতি থেকে কারও কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে বলে সদস্যরা কেউ জানেন না। এ ছাড়া কুলখানি আয়োজন করবেন মৃত ব্যক্তির পরিবার, স্বজন ও সন্তানেরা। কোনো মিলাদ মাহফিলের বিষয়েও সদস্যরা জানেন না।কুলখানি, মিলাদ, অনুদানে ব্যয়বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা কুলখানি, মিলাদ মাহফিল ও অনুদান বাবদ সমিতির টাকার ব্যয় দেখিয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই খাতে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সমিতি থেকে অনুদান দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর ২০২৪-২৫–এ খাতে বরাদ্দ ছিল ছয় লাখ টাকা।
সদস্যদের অভিযোগ, অতীতে সমিতি থেকে কারও কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে বলে সদস্যরা কেউ জানেন না। এ ছাড়া কুলখানি আয়োজন করবেন মৃত ব্যক্তির পরিবার, স্বজন ও সন্তানেরা। কোনো মিলাদ মাহফিলের বিষয়েও সদস্যরা জানেন না। মিলাদ-কুলখানিতে অর্থ ব্যয়ের জন্য সদস্যরা অনুমোদনও দেননি। তাই ওই সব খাতে সদস্যদের আমানতের টাকা ব্যয়ের সুযোগ নেই। সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করেই ওই তিন খাতে ব্যয় দেখিয়েছেন সমিতির নেতারা।
অভিযোগকারী আরেক সদস্য ইসফাকুল কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির নেতারা সদস্যদের উপস্থিতির স্বাক্ষরকে প্রস্তাব অনুমোদনের স্বাক্ষর দেখিয়ে ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছেন। আসলে অধিকাংশ সদস্য আত্মসাতের বাজেট সমর্থন করেননি।
ছয় খাতের ব্যয় নিয়েও আপত্তিসদস্যদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা ছয় খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখিয়েছেন। খাতগুলো হলো আপ্যায়ন, প্রশাসনিক, সম্মানী ভাতা, মজুরি, মামলা পরিচালনা ও যাতায়াত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সম্মানী ভাতায় ৬ লাখ ৯৪ হাজার, আপ্যায়নে ৬ লাখ ৩৬ হাজার এবং প্রশাসনিক খরচে ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-বোনাস দেওয়ার পরও আলাদা করে মজুরি বাবদ দেড় লাখ ও যাতায়াতে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। অথচ সমিতির কাজের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ এক-দুই কিলোমিটার দূরের সংশ্লিষ্ট সমবায় কিংবা গণপূর্তের কার্যালয়ে যাওয়া লাগে।
অভিযোগকারীরা বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে নতুন মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর পর সব দায়িত্ব গণপূর্ত ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। সদস্যরা কিস্তিতে সেই টাকা পরিশোধ করছেন। তাই আপ্যায়ন কিংবা প্রশাসনিক খরচ ঠিকাদারের বহন করার কথা। এসব খাতে দেখানো বিপুল ব্যয় মূলত আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ওই ছয় খাতে আগের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি, অর্থাৎ ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সম্মানী ভাতায় ২০ লাখ এবং আপ্যায়ন ও মামলা খরচে ১০ লাখ করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান তদন্ত চলছেসদস্যদের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ৬ অক্টোবর দেওয়ার কথা ছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, তাঁর অসুস্থতার কারণে আরেকজন কর্মকর্তা কাজটি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ওই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হলে তিনি নতুনভাবে কাজ শুরু করেছেন। সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে আয়-ব্যয়ের সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য পেলে সেগুলো যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ট র ন ত র কর মকর ত ক ন য় গ কর সমব য় ক ব এনপ র র জন য কর ছ ন অন দ ন বর দ দ তদন ত আওয় ম করছ ন আপত ত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
পেঁয়াজ আমদানির জন্য শেষ পর্যন্ত ভারতকেই বেছে নিল সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আজ রোববার ভারত থেকে ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
আমদানি অনুমতিকে সংক্ষেপে আইপি বলা হয়। মোট ৫০ জন আমদানিকারককে এ আইপি দেওয়া হয়। তবে কোনো আমদানিকারকই ৩০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। আবার কেউ দ্বিতীয়বারের জন্য আমদানির আবেদন করতে পারবেন না। আমদানির অনুমতির বা আইপির মেয়াদ থাকবে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল শনিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আইপির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই পাবেন এই সুযোগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইপির জন্য এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০টি আবেদন জমা আছে। আজ ৫০টি আবেদন বাছাই করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে। সার্ভারে যাঁরা আগে ঢুকতে পেরেছেন, তাঁরাই আইপির জন্য বিবেচিত হয়েছেন।
হিলি সীমান্তের কাছে অবস্থিত বিজয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বন্টি জয়সয়াল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ তিনি সারা দিন চেষ্টা করেও সার্ভারে ঢুকতে পারেননি। কাল আবার চেষ্টা করবেন। একজনের জন্য ৩০ টন, পরিমাণটা কম হয়ে গেছেও বলে মনে করেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৯ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাজারে দাম না কমলে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের আইপি দেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে তা আর দেওয়া হবে না। বাণিজ্য উপদেষ্টার এমন ঘোষণা কার্যকর হয়েছে এক মাস পর।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) এক বছর আগে পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল। উৎসগুলো হচ্ছে পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর, চীন ও মিয়ানমার। বাংলাদেশ এত বছর ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করে আসছিল। এ ছাড়া চীন ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছিল, তবে তা পরিমাণে কম।
গত ২৮ নভেম্বর ভারতের দ্য ইকোনমিকস টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে, একসময় ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। তবে গত আট মাসে বাংলাদেশ খুবই সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছে ভারত থেকে। যদিও ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম ভারতের স্থানীয় বাজারের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষ না হতেই ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন। মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের কিছু থাকে বীজের জন্য, কিছু পচে যায়। ফলে মৌসুম শেষে সরবরাহে একটু টান পড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোক্তাস্বার্থের কথা ভেবে আজ ৫০টি আইপি দেওয়া হয়েছে, আরও দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে পরিস্থিতি অনুযায়ী এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে পেঁয়াজের দাম কমে এলেই আমদানির অনুমতি বন্ধ করা হবে। কারণ, কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
এদিকে প্রথম আলোর দিনাজপুরের বিরামপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ বিকেল সোয়া চারটায় ভারত থেকে ৩০ টন পেঁয়াজবোঝাই একটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ আগস্ট ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।
পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রকি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আতিক হাসান জানিয়েছেন, ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানিতে ২৫০ মার্কিন ডলারে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ১২ রুপি এবং গাড়িভাড়াসহ বন্দর পর্যন্ত খরচ পড়তে পারে কেজিপ্রতি ১৮ রুপি।
এদিকে আমদানির ঘোষণায় এক দিনের ব্যবধানে আজ ঢাকার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ টাকায়। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারের চিত্রও প্রায় একই। আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, আমদানি অনুমতির খবরে দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জের মোকামগুলোতে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।