ক্রিকেটে টস মানে তো একটা ভাগ্য পরীক্ষা। মানে যে কেউ জিততে পারে। তবে এখন থেকে হয়তো বলতে হবে, ভারত বাদে যে কেউ জিততে পারে! কারণ, ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারত দল তো টসে জেতাই ভুলে গেছে।
আজ অ্যাডিলেডে ওয়ানডে সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টসে হেরেছে ভারত, যা ওয়ানডেতে ভারতের টানা ১৭তম টস হার। রেকর্ড হয়েছে অনেক আগেই। এর আগে ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ টানা ১১ ওয়ানডেতে টস হেরেছিল নেদারল্যান্ডস দল। ভারত সেটা ছাড়িয়েছে গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। রেকর্ডটি ভারত কত দূর টেনে নিয়ে যাবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
ভারতের টস হারার চক্র শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ফাইনালে ভারত হেরেছিল ৬ উইকেটে। তখন ভারতের অধিনায়ক ছিলেন রোহিত শর্মা।
এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে ভারত। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি–মার্চে খেলেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। এখন ভারত খেলছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। এই সিরিজ দিয়েই ভারতের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন শুবমান গিল। তিনিও রোহিতের টস–ভাগ্যই বরণ করেছেন। টসে হারলেন সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই।
টস-ভাগ্য যে ভারতের অধিনায়কদের মধ্যে যে শুধু রোহিতেরই খারাপ, তা নয়। লোকেশ রাহুলও তিনটি ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রোহিতের অবর্তমানে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে অধিনায়কত্ব করেন রাহুল। তিনিও তখন টসে জিততে পারেননি। ভাগ্য পরীক্ষায় ভারতের এত হারের রহস্য কী, কে জানে!
চলতি ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ম্যাচে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, ভারতকে হারিয়েছে ৭ উইকেট।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: টস হ র
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসির পর একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন বাবা–মেয়ে, ফলে এগিয়ে বাবা
নাটোরের লালপুরে মেয়ে হালিমা খাতুনের (১৮) সঙ্গে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন বাবা আবদুল হান্নান (৪৩)। ফলাফলে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেছেন বাবা। জিপিএ-৪.৩ নিয়ে পাশ করেছেন আবদুল হান্নান। অন্যদিকে তাঁর মেয়ে হালিমা পেয়েছেন ৩.৭১।
আবদুল হান্নান ও হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। হান্নান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এবং তাঁর মেয়ে হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নেন। এর আগে ২০২৩ সালে একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন তাঁরা।
হালিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জন্মের আগেই আমার বাবা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাস করতে পারেননি। পরে ঘটনাটি জানার পর ধরেই নিয়েছিলাম, বাবা পড়ালেখায় ইতি টেনেছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে বাবা কাউকে না জানিয়ে আবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসলে ঘটনাটি আমাদের পরিবারে তো বটেই, দেশে আলোচিত হয়। এরপর বাবা পড়ালেখায় আরও সিরিয়াস (সচেতন) হন। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি আমার সঙ্গেই পড়ালেখা করেছেন। পরীক্ষা দিয়ে আমার চেয়েও ভালো ফল করেছেন। আমি এতে মন খারাপ করিনি। বরং বাবার ফল আমাকে আরও ভালো করার উৎসাহ জুগিয়েছে।’
পড়ালেখার প্রতি নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে আবদুল হান্নান জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি পড়ালেখায় ভালো ছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়ালেখার জন্য তেমন পরিবেশ পাননি। ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশেষ কারণে অকৃতকার্য হন। পরিবারের প্রয়োজনে পড়ালেখা ছেড়ে গোপালপুর রেলগেটে চায়ের দোকান দিয়ে বসেন। এরপর বিয়ে করে সংসারী হন। কিন্তু মনের মধ্যে শিক্ষিত হওয়ার আগ্রহ দমে যায়নি। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করার সময় হঠাৎ নিজেরও পরীক্ষায় বসার ভাবনা আসে। কাউকে না জানিয়ে তাই নিজেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরীক্ষার সময় হঠাৎ বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন আবারও অকৃতকার্য হওয়ার দুঃস্বপ্ন ভর করে।
একটু থেমে আবদুল হান্নান বলেন, তবে সৃষ্টিকর্তা নিরাশ করেননি। এসএসসি পাস করেন। এরপর প্রকাশ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। মেয়ের সঙ্গে বসে পড়ালেখা করতে থাকেন এবং শেষে কাঙ্ক্ষিত ফলও পান। ফলাফলে মেয়েকে টপকে যাওয়ার ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও তিনি বিস্মিত হননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা যখন নতুন করে শুরু করেছি, তখন শেষ পর্যন্ত (মাস্টার্স) পড়বই। চাকরি করার বয়স হয়তো থাকবে না। তাতে কিছুই আসে–যায় না। আমি এই সমাজের একজন উচ্চশিক্ষিত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
আবদুল হান্নানের ভাবনা ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন নাটোরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোস্তম আলী হেলালী। তিনি বলেন, শিক্ষালাভের কোনো বয়স নেই। আবদুল হান্নান তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে এ কথা প্রমাণ করেছেন। তিনি চাকরির জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ছেন। এটা সমাজের জন্য একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তাঁদের উভয়কেই অভিনন্দন।