তিন দশকের বেশি সময় পর খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়ক অবশেষে প্রশস্ত হচ্ছে। সড়কটি দিয়েই খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াত করেন পর্যটকেরা। সরু সড়কটিকে নিরাপদ করতে সম্প্রসারণ ও বাঁক সরলীকরণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবহনচালক ও পর্যটকদের মাঝে।

প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে এই সড়কে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার হলেও সরু ও আঁকাবাঁকা সড়কের কারণে এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। সড়কের প্রশস্ততা মাত্র ১২ ফুট। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘খাগড়াছড়ি সদর থেকে দীঘিনালা বাসস্টেশন পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য দরপত্র ও কার্যাদেশ সম্পন্ন হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে মোট ছয় ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। আশা করছি ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’

রাস্তা এতটাই ছোট যে বড় গাড়ি এলে রাস্তা ছেড়ে নিচে নামতে হয়। দুটি গাড়ি একসঙ্গে চলতে পারে না। বাঁক ও উঁচু-নিচু হওয়ার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক বড় হলে আমাদের কষ্ট কমবে।—গণেশ ত্রিপুরা, স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য

স্থানীয় বাসিন্দা, চালক ও যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে সড়ক প্রশস্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চারমাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খননযন্ত্র দিয়ে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা।

গত মঙ্গলবার দুপুরে চারমাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এক্সকাভেটর দিয়ে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। এক কিলোমিটারের বেশি সড়কের দুই পাশের অংশ প্রশস্ত করা হয়েছে।

দীঘিনালার নয়মাইল এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য গণেশ ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তা এতটাই ছোট যে বড় গাড়ি এলে রাস্তা ছেড়ে নিচে নামতে হয়। দুটি গাড়ি একসঙ্গে চলতে পারে না। বাঁক ও উঁচু-নিচু হওয়ার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক বড় হলে আমাদের কষ্ট কমবে।’

খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায় প্রতিদিন মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন নলিনী চাকমা ও মো. ইকবাল খন্দকার। তাঁরা বলেন, ‘প্রায় প্রতি সপ্তাহে এক-দুইবার দুর্ঘটনা হয়। রাস্তার প্রশস্ততা মাত্র ১২ ফুট। প্রায় সময় বাস ও ট্রাক রাস্তার বাইরে ছিটকে পড়ে। আমরাও ভয়ে ভয়ে গাড়ি চালাই। এখন দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে—এটা খুবই স্বস্তির খবর।’

সাজেকগামী পর্যটকবাহী গাড়ি চালান অংগ্যজাই মারমা। তিনি বলেন, ‘এই সড়কে অন্যান্য সড়কের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি গাড়ি চলে। সড়ক বড় হলে চালক ও যাত্রীদের কষ্ট অনেকটাই কমবে।’

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে সাজেক, বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার যানবাহন চলাচল করে। অতিরিক্ত বাঁকের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক প্রশস্ত হলে দুর্ঘটনা কমবে এবং চালকেরাও স্বস্তি নিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক প রশস ত দ র ঘটন সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদের নামে সড়কের নামফলক উন্মোচন করলেন উপদেষ্টা ফাওজুল

নরসিংদীর পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কটির নাম বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) সড়ক নামে নামকরণ করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার পাঁচদোনা মোড়ে সড়কটির নামফলক উন্মোচন করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

এর আগে পাঁচদোনা স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ (কে জি) গুপ্ত স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে নামফলক উন্মোচন উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফাওজুল কবির খান।

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা বলেন, আজ ইতিহাসে একটি বিচারের দিন। বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, যিনি দেশ স্বাধীন করেছেন, তাঁকে সদ্য স্বাধীন দেশে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকারীরা ভেবেছিল সিরাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। কিন্তু নেভাল সিরাজ নিশ্চিহ্ন হননি, পুনর্জাগরিত হয়েছেন। এটাই হচ্ছে ইতিহাসের বিচার। ইতিহাস বিকৃত করা যায়, কিন্তু সত্য একদিন সামনে আসবেই। আজ সড়কটির নামকরণ করা হচ্ছে বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) সড়ক নামে। এভাবেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে নিয়ে আসা হবে।

জেলা প্রশাসন বলছে, বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। একাত্তরে নরসিংদীতে ছুটিতে থাকাকালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে আত্মনিয়োগ করেন। ৯ ও ১০ এপ্রিল ইপিআরের সঙ্গে মিলে বাগবাড়ি-পালবাড়ি-পাঁচদোনায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ গড়ে তোলেন। তিনি ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে নিজ গ্রাম নেহাবকে কেন্দ্র করে দুই পাশের জনপদে মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিরোধ্য ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ ঘাঁটি থেকেই পাঁচদোনা মোড়সহ অসংখ্য মুখোমুখি এবং গেরিলাযুদ্ধের অপারেশন পরিচালনা করেন। অসমসাহসী বীরত্বের কারণেই মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টর থেকে তাঁকে চার থানার (নরসিংদী, শিবপুর, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের) গেরিলা ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর বিশাল বাহিনী পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও যুদ্ধ পরিচালনা করে। তাঁর বীরত্বের কথা দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে সিরাজ উদ্দিন আহমদের আকাশচুম্বী খ্যাতি শাসক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ঈর্ষার কারণ হয়। তাদের ষড়যন্ত্রে ১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পুরিন্দা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।

বিষয়টি উল্লেখ করে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ভিন্নমতের জন্যই নেভাল সিরাজকে আততায়ীরা খুন করেছিল। আমরা ভিন্নমতকেই প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাংলাদেশ বহু মতের দেশ, বহু ধর্মের দেশ। মানুষ বিভিন্ন ধর্মাচরণ করবে, বহুমত ধারণ করবে। কিন্তু মতামতের জন্য আর কাউকে যেন পারসিকিউটেড হতে না হয়। কাউকে যেন হত্যার শিকার হতে না হয়।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জিয়াউল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন। ওই অনুষ্ঠানে সিরাজ উদ্দিন আহমেদের সন্তান মোয়াজ্জেম হোসেন এবং তিন সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ ও তোফাজ্জল হোসেন বক্তব্য দেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিবর্তনের সরকার উল্লেখ করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, সবাই বলেন, এত দিন তো হয়ে গেল, ‘এই সরকার কিছুই তো করতে পারল না? সব জায়গায় অনিয়ম আর অপকর্ম। এই যে সাংস্কৃতিক অপকর্ম, রাজনৈতিক অপকর্ম, অর্থনৈতিক অপকর্ম—এগুলো শোধরাতেই আমাদের সময় লেগেছে বেশি। বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য সড়ক নির্মিত হয়েছে, যেগুলোর তেমন ব্যবহার নাই। সাবেক রাষ্ট্রপতি নিজ এলাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সড়ক নির্মাণ করেছেন। সেখানে কয়েকটা টেম্পো ছাড়া কিছুই চলে না।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘আপনারা সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন করুন। যাঁর যা মত হোক, যাঁর যা দল হোক যাঁরা বিজয়ী হবেন, আমরা তাঁদের পেছনে দাঁড়াব। কিন্তু যাঁরা এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে, আগের মতো ভোটকেন্দ্র দখল বা পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটাবে, তাঁদের সুযোগ দেবেন না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নওগাঁয় কাটা হচ্ছে সড়কের পাশের সহস্রাধিক পুরোনো গাছ
  • লুসাই কারা, সাজেকের লুসাই সাংস্কৃতিক পার্কে কী আছে
  • নরসিংদীতে বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদের নামে সড়কের নামফলক উন্মোচন করলেন উপদেষ্টা ফাওজুল