নাইজেরিয়ায় অপহৃত ৫০ শিক্ষার্থী পালিয়ে ফিরলো পরিবারে
Published: 24th, November 2025 GMT
নাইজেরিয়ার নাইজার অঙ্গরাজ্যের ক্যাথলিক সেন্ট মেরিস স্কুল থেকে গত শুক্রবার অপহৃত ৩১৫ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষককের মধ্যে ৫০ জন শিক্ষার্থী সফলভাবে পালিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ফিরেছে। বাকি ২৬৫ জন শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষককে এখনও অপহরণকারীদের হেফাজতে রয়েছে। তাদের উদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনী বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে।
নাইজেরিয়ান কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সোমবার (২৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠী ও চরমপন্থিদের হামলা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে নাইজেরিয়ায় এটি তৃতীয় বড়ো অপহরণ। এর আগে গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) কেব্বি অঙ্গরাজ্যের একটি মুসলিম বোর্ডিং স্কুল থেকে ২৫ স্কুলছাত্রী অপহৃত হয়। এরপর বুধবার (১৯ নভেম্বর) কওয়ারা অঙ্গরাজ্যের একটি গির্জা থেকে ৩৮ উপাসক অপহৃত হন। সর্বশেষ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সেন্ট মেরিস স্কুল থেকে ৩১৫ জনকে অপহরণ করা হয়।
গত সপ্তাহে কেব্বি অঙ্গরাজ্যের বোর্ডিং স্কুল থেকে ২৫ স্কুলছাত্রী অপহৃত হওয়ার ঘটনার পর নাইজেরিয়ার বেশ কয়েকটি রাজ্যের কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছিল। কেব্বি, নাইজার, কাটসিনা, ইয়োবে এবং কোয়ারা রাজ্যে অনেক স্কুল ও কলেজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নাইজার অঙ্গরাজ্য সরকার জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হুমকির কারণে বোর্ডিং স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেন্ট মেরিস স্কুল তা উপেক্ষা করে স্কুল খোলা রেখেছিল। স্কুলটি এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
অপহরণের ধারাবাহিকতার প্রতিক্রিয়ায়, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু অতিরিক্ত ৩০ হাজার পুলিশ অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।
টিনুবু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) সুরক্ষা পরিষেবার দেওয়ার জন্যও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষ করে আক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সুরক্ষার প্রয়োজন এমন ভিআইপিরা এখন থেকে নাইজেরিয়ার সুরক্ষা ও নাগরিক প্রতিরক্ষা কর্পস (এনএসডিসিসি) থেকে সশস্ত্র কর্মীদের জন্য অনুরোধ করতে পারবেন।
নাইজার অঙ্গরাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে, সশস্ত্র ব্যক্তিরা স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে সেন্ট মেরিস স্কুলে হামলা চালিয়ে সেখানে থাকা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অপহরণ করে।
নাইজার রাজ্যের গভর্নর মোহাম্মদ উমারু বোঙ্গো শনিবার এক ঘোষণা বলেন, এলাকার সব স্কুল বন্ধ থাকবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এখন দোষ খোঁজার সময় নয়।”
স্থানীয় একটি খ্রিষ্টান সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ৫০ শিক্ষার্থী পালিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে। এ ঘটনাকে অপহরণকারীদের হাত থেকে পালানোর একটি সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করা হচ্ছে।শিক্ষার্থীদের পরিবার এবং দেশটির জন্য শিক্ষার্থীদের পালিয়ে ফেরার খবর কিছুটা স্বস্তি এনেছে।
সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা অপহৃত বাকি স্কুল শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে অনুসন্ধান অভিযান চালাচ্ছে।
নাইজেরিয়ার বিভিন্ন অংশে স্থানীয়ভাবে ‘ডাকাত’ নামে পরিচিত অপরাধী চক্রের মাধ্যমে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ একটি বড় সমস্যা। এই গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই স্কুল, গ্রাম এবং অন্যান্য জনবহুল স্থান থেকে মানুষকে অপহরণ করে থাকে, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন সহ বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন শ ক ষ ন ইজ র য় ন ইজ র য র জন য পর ব র অপহ ত
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চার জেলে অপহৃত, মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন একজন
সুন্দরবনের লোনাজলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চার জেলে অপহরণের স্বীকার হয়েছেন। তাঁদের ছাড়তে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে বনদস্যুরা। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা রেঞ্জের আঠারবেকি এলাকার একটি খালে কাকড়া ধরার সময় তাঁদের অপহরণ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, দস্যু আলিম বাহিনীর সদস্যরাই জেলেদের অপহরণ করেন। অপহৃত জেলেদের মধ্যে একজন মুক্তিপণ দিয়ে গতকাল রোববার বাড়ি ফিরেছেন।
শ্যামনগর উপজেলার বড়ভেটখালী গ্রামের ইউসুফ গাজী বলেন, তিনি ২০ নভেম্বর কৈখালী স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র (পাস) নিয়ে নিজের নৌকায় মরগাং গ্রামের ইব্রাহিম শেখ ও আনিস শেখকে নিয়ে বনে প্রবেশ করেন। একইভাবে পাস নিয়ে মরগাং গ্রামের হাসান শেখ ও বড়ভেটখালী গ্রামের আবদুল গাজীও বনে ঢোকেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় আঠারবেকি ভাইজো খালে কাঁকড়া ধরার সময় দস্যুরা তাঁদের নৌকা আটকে দেয়। তিনটি নৌকা থেকে তারা চারজনকে তুলে নেয়। পরে জানায়, মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা দিলে ছাড়া পাওয়া যাবে। গতকাল ভোরে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পর দস্যুরা হাসান শেখকে একটি নৌকায় তুলে দেয়। সকাল ৯টার দিকে তিনি বাড়ি পৌঁছান।
শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাসেম মোরেল জানান, সুন্দরবনে দস্যুতা আবারও বেড়ে উঠেছে। ভেটখালী ও মরগাং গ্রামের বেশ কয়েকজন জেলে সম্প্রতি আঠারবেকি এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়েছেন।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা হক বলেন, ‘জেলেরা আমাদের কিছুই জানায় না। মহাজন বা পরিবারের লোকজন মুক্তিপণ দিয়ে তাঁদের ছাড়িয়ে আনে, পরে আমরা খবর পাই। দুর্গম বনাঞ্চলে দ্রুত অভিযান চালানোও কঠিন। বনদস্যু দমনে একটি স্মার্ট পেট্রোল টিম ও দুটি বিশেষ দল মাঠে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে।’