মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক-ক্ষোভ
Published: 25th, October 2025 GMT
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর দেশের অন্য সব ক্রীড়া ফেডারেশন ও সংস্থায় পুরোনো কমিটি ভেঙে নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করা হলেও একমাত্র বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থায় সেই পরিবর্তন আসেনি এত দিন।
দীর্ঘ সাড়ে আট বছর অ্যাডহক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হওয়ার পর অবশেষে আজ ঘোষণা করা হয়েছে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলামের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে নতুন কমিটির কথা জানানো হয়েছে।
১৯ সদস্যের এই নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ব্যারিস্টার সারওয়াত আলা হারদারকে। তাঁর পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘সিনিয়র আইনজীবী ও ক্রীড়ানুরাগী’।
সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ফিরোজা করিম নেলীকে, যিনি বিদায়ী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৭ সালের ৩ মার্চ নিয়মবহির্ভূতভাবে সাত সদস্যের পরিবর্তে গঠিত ৩১ সদস্যের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ষাটের দশকের অ্যাথলেট হামিদা বেগম। ২০২২ সালের মার্চে তিনি মারা যান। অসুস্থ থাকায় তাঁর মৃত্যুর আগে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী ফিরোজা করিম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
পুরোনো কমিটির সহসভানেত্রী এবং গত কিছুদিনে ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করা ইসমত আরা হায়দারকে নতুন কমিটির সহসভানেত্রী করা হয়েছে। সহসভানেত্রী পদে এসেছেন স্বাধীনতা পদক পাওয়া সাবেক অ্যাথলেট ফিরোজা খাতুন। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে সাবেক অ্যাথলেট শামীমা সাত্তার মিমুকে। সদস্য হিসেবে আনা হয়েছে সাবেক ক্রিকেটার সালমা খাতুন, সাবেক সাঁতারু সবুরা খাতুন, সাবেক অ্যাথলেট ফৌজিয়া হুদা জুঁইয়ের মতো নতুন মুখ।
আরও পড়ুনবাফুফেকে ৫ কোটি টাকা দিল সরকার২০ আগস্ট ২০২৫সদস্য তালিকায় আরও আছেন মরিয়ম তারেক, ফরিদা আক্তার বেগম, শেহরিন আমিন, নাসরিন আক্তার বেবি, হাসনে আরা হাওয়া, রওশন আরা বেগম, মাহমুদা হক চৌধুরী, এলিনা সিদ্দিকা, আমরিন সাহজিয়া বশির এবং ক্রীড়া সাংবাদিক মৌসুমী আলম মৌ।
ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি যে তালিকা দিয়েছিল, সেই তালিকায় সভানেত্রী পদে ছিলেন সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুন নাহার ডানা। কিন্তু তাঁকে সভানেত্রী করা হয়নি। ডানা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নতুন কমিটি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিস্মিত এই কমিটি দেখে। ক্রীড়াঙ্গনে আমরা কোনো ব্যারিস্টার চাই না। ক্রীড়াঙ্গন চালাতে ক্রীড়াঙ্গনের মানুষই দরকার ছিল। তা ছাড়া এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি এক পদে থাকতে পারবে না, ক্রীড়া উপদেষ্টা নিজেই মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন। সেখানে সাড়ে আট বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা একজনকে আবার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আর তিনি আওয়ামী ঘরানার মানুষ।’
আরও পড়ুন‘ভারপ্রাপ্তের ভারপ্রাপ্ত’ দিয়ে চলছে মহিলা ক্রীড়া সংস্থা১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ডানা বলেন, ‘কমিটির ৬-৭ জনকে চিনি না। নামের পাশে ক্রীড়ানুরাগী তকমা দিয়ে তাদের কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এ ধরনের কমিটি গ্রহণযোগ্য নয়।’
সার্চ কমিটির জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা সভানেত্রী-সাধারণ সম্পাদক করেছি যাদের, তাদের কমিটিতেই রাখা হয়নি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সদস্য করা হয়েছে। আমাদের কমিটি আর ঘোষিত কমিটির মধ্যে কোনো মিল নেই। সবচেয়ে বড় কথা, সভানেত্রীকে আমরা চিনিই না। সরকার যা নির্দেশনা দিয়েছিল, তার সঙ্গে মিল নেই এই কমিটির।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ন কম ট কম ট র র কম ট সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরের তিন উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা
ফরিদপুরের বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গার উপজেলা ও পৌর বিএনপির ছয়টি সাংগঠনিক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা বিএনপি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ছয়টি কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিতে আছেন ১০১ জন করে।
ঘোষিত কমিটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে প্রাধান্য পেয়েছেন ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামের পক্ষের নেতারা।
ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই দুই নেতার নেতৃত্বে তিনটি উপজেলার বিএনপি বিভক্ত। বোয়ালমারী উপজেলা কমিটিতে শামসুদ্দিন মিয়াকে তিন নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে তাঁর অনুসারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায় সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল ২০১৫ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে। প্রায় এক দশক পর এবার কোনো সম্মেলন ছাড়াই জেলা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের যৌথ স্বাক্ষরে নতুন কমিটিগুলো ঘোষণা করা হয়েছে।
বোয়ালমারী উপজেলা কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে, আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহা। বোয়ালমারী পৌরসভা কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর কাউন্সিলর আবদুল কুদ্দুস শেখ এবং সাধারণ সম্পাদক উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন।
মধুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি করা হয়েছে পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে, আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল আলিম মানিক। মধুখালী পৌরসভা কমিটির সভাপতি হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার আলী মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন বিশ্বাসকে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছে যথাক্রমে আবদুল মান্নান মিয়া আব্বাস ও মো. নূরজামাল খসরু। আলফাডাঙ্গা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হয়েছেন মো. রবিউল হক রিপন ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মো. হাসিবুল হাসান হাসীবকে।
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং ঘোষিত কমিটির তিন নম্বর ভাইস চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকজনদের নিয়ে প্রকৃত নিবেদিতপ্রাণ বিএনপির নেতা–কর্মীদের বঞ্চিত করে একপক্ষীয় কমিটি করা হয়েছে।
তবে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে কার্যকর কমিটি করার চেষ্টা করেছি। সম্মেলন করে কমিটি হয়নি এ কথা সত্য, তবে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। একাধিকবার কর্মী সম্মেলন করে সবার মতামতের ভিত্তিতে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কমিটিতে আছেন আবার তাঁদের আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির পদ রয়েছে এবং তা যদি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।’