‘এমন কোনো প্রস্তাব দেওয়া যাবে না, যেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে’
Published: 26th, October 2025 GMT
সবার ঐক্যের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারির দাবির প্রেক্ষাপটে রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গণ অধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
আমির হামজাকে মসজিদে রাজনৈতিক আলোচনা না করার অনুরোধ, বিএনপি নেতা লাঞ্ছিত
তারুণ্য নির্ভর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে: সেলিম
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,“জনগণের কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার (সাংবিধানিক ক্ষমতা) গণভোটের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে বলেই সংসদ এর বাইরে যেতে পারবে না। এখন যদি আবেগপ্রবণ হয়ে রাজনৈতিকভাবে গণভোট করার জন্য বাক্য ব্যয় করা হয়, বিভিন্ন আদেশ কার্যকর করা হয়, তাহলে এগুলো নিয়ে সামনে প্রশ্ন উঠতে পারে। সেটা না করে সবার ঐক্যের ভিত্তিতে যাতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করা হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”
এনসিপির উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাস্তবতার ভিত্তিতে কথা বলতে হবে। এমন কোনো প্রস্তাব দেওয়া যাবে না, যেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমন কোনো আদেশ দেওয়া যাবে না, যেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। পুরো প্রক্রিয়াকে যাতে কেউ কখনো অবৈধ বলে আওয়াজ দিতে না পারে। ১০-১৫ বছর পরও যাতে কেউ এই প্রশ্ন নিয়ে আদালতে যেতে না পারে, সে রকম একটা ভিত্তি এখনই রচনা করতে হবে। অতি সাবধানে অর্জিত সাফল্যকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সনদে সই না করার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আশা করা যায়, সুষ্ঠু একটা সমাধান হবে। তারপর তারাও স্বাক্ষর করতে পারবে। তাহলে জুলাই সনদ হবে রাজনীতিতে সমঝোতার একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকারবদ্ধ।”
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত জাতীয় সংসদই সুনির্দিষ্ট ফোরাম—এ মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, “এখানে কোনো দলের বিশেষ দ্বিমত নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সংসদ যাতে বাধ্য থাকে, সেটার একটি আইনি ভিত্তি রচনার জন্য একটা প্রস্তাব বা সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেওয়া হবে। এরপর কী প্রক্রিয়ায় আইনি ভিত্তি দিতে চাচ্ছে, সেটি জানা যাবে। নোট অব ডিসেন্টসহ যেভাবে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, হুবহু সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে যখন একটি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হবে। তখন সেখান থেকে জাতীয় সংসদ বা কোনো সংসদ সদস্য সরতে পারবে না।”
আবেগের চেয়ে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “অনেকে আবেগের বশে বলে থাকেন, জুলাই অভ্যুত্থানে জনগণের যে অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে, সে অভিপ্রায়ের শক্তিবলে অনেক বৈপ্লবিক আদেশ জারি করা যায়। এগুলো আবেগী বক্তব্য। কারণ, জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্যই সংবিধানের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার গঠিত হয়েছে। এখনো সাংবিধানিকভাবে এই রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে।”
‘ফ্যাসিবাদের’ প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে সবাইকে এক থাকার আহ্বান জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চোখ হারানো শ্রমিক নেতা রুবেল হোসেন, অভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজ হোসেনের বাবা আবদুর রব, ইমাম হাসান ভূঁইয়ার ভাই রবিউল আওয়াল ভূঁইয়া, শহীদ গোলাম নাফিজের মা নাজমা আক্তারও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ জ ল ই গণঅভ য ত থ ন দ দ ন আহমদ জ ল ই সনদ র সদস য সদস য স ব এনপ র জনগণ র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পার্টি যদি আ.লীগকে ছাড়া নির্বাচনে না আসতে চায়, সেটা তাদের স্বাধীনতা: সালাহউদ্দিন
জাতীয় পার্টি যদি আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন না করতে চায়, সেটা তাদের স্বাধীনতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, শিগগিরই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এ মামলা হবে। এখন যদি জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন না করতে চায়, সেটা তাদের স্বাধীনতা।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের জানামতে, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাদের নিবন্ধনও বহাল আছে। দল হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলা এখনো হয়নি। তাই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার মতো কোনো অযোগ্যতা নেই। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের পুরাতন সঙ্গী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যদি তারা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে চায়, সেটাও তাদের নিজস্ব ব্যাপার।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। তাদের প্রতীকও ইসির ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন তাদের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং গণহত্যার অপরাধে বিচার চলছে। অনেকেই বাকি আছে। তারাও হয়তো বিচারের আওতায় আসবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। শেষ হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হতে পারে শিগরিই। তদন্তটা আরও আগে হতে পারত। কারণ, সেই লক্ষ্যে আইন পরিবর্তিত হয়েছে আরও অনেক আগে। কিন্তু তদন্তটা শুরু করেছে অনেক পরে। তারপরও আশা করা যায়, শিগগিরিই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হবে।
আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে না, সাবেক এক সেনাপ্রধান এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিএনপি এমন কোনো শঙ্কা দেখে কি না, জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং শক্তি, তাদের মধ্যে কেউ কি আজ পর্যন্ত বলেছে তারা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন চায় না? কেউ কি বলেছে? তো যদি না বলে থাকে, জনগণ তো নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচন চায়, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। পারলে আরও আগে, তাহলে নির্বাচনের অনুষ্ঠানের বিষয়ে কেন শঙ্কা প্রকাশ করতে হবে? কোনো কারণ তো নেই।’