খুলনায় আদালতের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে গুলিতে দুই যুবক নিহতের ঘটনার তিন দিন পরও কোনো মামলা হয়নি। আজ বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই। তিনি জানান, নিহত ব্যক্তিদের পরিবার রাজি না হওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রিপন শেখ নামের একজনকে (৩৩) গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত সোমবার রাত ১০টার দিকে নগরের নতুনবাজার চরের স্কুল গলি এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। রিপন নতুনবাজার মাছ গলির বাসিন্দা আবদুল জলিলের ছেলে।

আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, রিপনকে থানায় নিয়ে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলায় তাঁর সম্পৃক্ততা পেলে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে, তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত দুই ব্যক্তির পরিবার মামলা করতে চাচ্ছে না। তাই পুলিশ বাদী হয়ে আজ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে।

গত রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে হাসিব হাওলাদার (৪১) ও ফজলে রাব্বি রাজন (৩৭) গুলিতে নিহত হন। হাসিব নগরের নতুনবাজার ওয়াপদা বেড়িবাঁধের মিনারা গলি ও রাব্বি রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসার বাগমারা এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের তথ্য মতে, হাসিব ও ফজলে রাব্বির বিরুদ্ধে ছয়টি করে মামলা আছে। তাঁরা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ পলাশের সহযোগী ছিলেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি চৌধুরী ওরফে ‘গ্রেনেড বাবু’র সহযোগীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

আরও পড়ুনখুলনায় আদালতে হাজিরা দিতে আসা দুজনকে গুলি করে হত্যা৩০ নভেম্বর ২০২৫

এদিকে রিপন শেখকে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। এ বিষয়ে আজ দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্যে রিপনের স্ত্রী মিসেস আঁখি বলেন, রিপন মাছ ব্যবসায়ী, অহেতুক হয়রানির জন্য তাঁকে হত্যাকাণ্ডের সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ ঘটনার দিন তিনি ফকিরহাটের ফলতিতা বাজারে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাছ কিনছিলেন—এ বিষয়ে ভিডিও ও চালান বই আছে। রিপন কোনো গ্যাং, সন্ত্রাসী গ্রুপ বা মাদক চক্রের সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিলেন না।

তবে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আটক রিপন বিলুপ্ত হওয়া ‘ইহুদি বাহিনী’র শীর্ষ সদস্যদের একজন ছিলেন। এটির প্রধান ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর ২০০৩ সালে বাহিনীটি বিলুপ্ত হয়। তবে তখনকার সদস্যরা অন্য গ্রুপে যুক্ত হয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে আঁখি বলেন, বাহিনীটি ২০০৩ সালে বিলুপ্ত হয়েছে। এখন রিপনের বয়স ৩৩। ২২ বছর আগে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। এ ধরনের ‘হাস্যকর গল্প’ এলাকায় অস্বস্তি তৈরি করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে নতুনবাজার এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নিহত হাসিব হাওলাদারের ভাই সুমন হাওলাদার। মামলা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারা হত্যা করেছে, আমরা জানি না। এর ওপর আমরা আতঙ্কে আছি। পরিবারে এখন একমাত্র ছেলে আমি। বড় ভাই মারা গেলেন—তাঁর ও আমার সন্তানসহ সবার নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের ওপর যদি আক্রমণ আসে? তাই আমরা কোনো মামলায় যেতে চাই না। বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’

আরও পড়ুনরাব্বির ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি৩০ নভেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

বড়পুকুরিয়ার কয়লা বিক্রি করে মুনাফা করছে খনি, কিনে লোকসানে বিদ্যুৎেকন্দ্র

আমদানি করা কয়লা কিনতে যেখানে প্রতি টনে গড়ে খরচ পড়ছে ৭৫ ডলার, সেখানে দেশের একমাত্র খনি বড়পুকুরিয়া থেকে উত্তোলিত কয়লার দাম ধরা হয়েছে ১৭৬ ডলার। এই বাড়তি দামে কয়লা বিক্রি করে টানা তিন অর্থবছর বিপুল মুনাফা করেছে সরকারি কয়লা কোম্পানি। সেই মুনাফার অংশও পাচ্ছেন কোম্পানির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। আর এ দাম শোধ করে নিয়মিত লোকসান করছে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

মুনাফার উৎস খনি, লোকসানের বোঝা বিদ্যুৎকেন্দ্রে

জ্বালানি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) একটি কোম্পানি বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি। চীনের ঠিকাদারের মাধ্যমে তারা খনি থেকে কয়লা তুলে বিক্রি করে। পাশেই অবস্থিত বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন থাকা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র সেই কয়লা কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বড়পুকুরিয়ায় কয়লার দাম প্রতি টনে ১৩০ থেকে বাড়িয়ে ১৭৬ ডলার করা হয়। এরপর কোম্পানির মুনাফা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। প্রতিবছর এই মুনাফার ১০ শতাংশ করে নেন কয়লা কোম্পানির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। বেতন–ভাতার বাইরে বছরে ১০ লাখ টাকা আয় করেন তাঁরা।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বড়পুকুরিয়ায় কয়লার দাম প্রতি টনে ১৩০ থেকে বাড়িয়ে ১৭৬ ডলার করা হয়। এরপর কোম্পানির মুনাফা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। প্রতিবছর এই মুনাফার ১০ শতাংশ করে নেন কয়লা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেতন-ভাতার বাইরে বছরে ১০ লাখ টাকা আয় করেন তাঁরা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, বড়পুকুরিয়ার কয়লা ব্যবহার করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিইআরসির নির্ধারিত দামে বিক্রি করে পিডিবি। এতে টানা তিন অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র আরও বলেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির পাশে থাকা পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে এই খনির কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। কেন্দ্রটির যন্ত্রপাতিও সে হিসেবেই বসানো। এখন চাইলেও বাইরে থেকে কয়লা আমদানি করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

তবে গত বছর বিদ্যুৎকেন্দ্রের লোকসান কিছুটা কমে এসেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গত জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়া সূচক দরে কয়লার দাম পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই বৈঠকে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা এতে আপত্তি করেননি। এ হিসাবে গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়ে ৯৯ দশমিক ৫৮ ডলার করে পরিশোধ করা হয়েছে। এতে লোকসান কমেছে। যদিও ১৭৬ ডলার দাম ধরে পরিশোধ করা হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঘাটতি হতো ১ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।

বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র

সম্পর্কিত নিবন্ধ