২০০১ সালে ১৯ হাজার টাকা নিয়ে ২৮ শতক জমিতে শুরু করেছিলেন মাটির তৈজসপত্র তৈরির কাজ। তখন চার–পাঁচজন শ্রমিক মিলে মাটির ব্যাংক, খেলনা, সীমিত আকারে থালাবাটি তৈরি করতেন। বর্তমানে শ খানেক শ্রমিক কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ওই সব শ্রমিক ডিনার সেটসহ ৮০ প্রকারের বাসনকোসন তৈরি করছেন। প্রায় ১২ বিঘা জমিসহ বর্তমানে পুঁজি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।

এ সফলতা দেখিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব বট কৃষ্ণ পাল। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুরের কে বি পটারী ইন্ডাস্ট্রির মালিক। কালের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম আর কাচের তৈরি বাসনের ভিড়ে বংশপরম্পরায় প্রাচীন এই মৃৎশিল্প ধরে রেখেছেন তিনি। ছেলেকে তিনি এ ব্যবসার কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর কারখানার অধিকাংশ শ্রমিক নারী। 

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে মাটির তৈজসপত্র। তবে পাঁচ প্রজন্মের বংশপরম্পরায় এ পেশা ধরে রেখেছেন কল্যাণপুর গ্রামের বট কৃষ্ণ পাল। তিনি ২০১০ সালে তাঁর কারখানা আধুনিকায়ন করেন। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বর্তমানে তাঁর কারখানা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে। এর মধ্যে ৫ বিঘা জমি নিজের ও বাকি ৭ বিঘা ইজারা নেওয়া। সেখানে শ খানেক মৃৎশিল্পী, কর্মচারী ও শ্রমিক রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে অন্তত ৭০ জন স্বামী পরিত্যক্ত, সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় নারী। তাঁরা অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাভিত্তিক প্রতি মাসে ৫ থেকে ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান। সেখানে প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার মাটির তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রি হয়। কাঁচামাল, যন্ত্রাংশের অপচয়, বেতনসহ প্রতিদিন খরচ প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তবে মাটির তৈজসপত্র বিক্রি হয় প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। সেই হিসাবে কারখানাটিতে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। 

সম্প্রতি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ বল যন্ত্রের সাহায্যে মাটির সঙ্গে পানি মেশাচ্ছেন। কেউ ছাঁকনি দিয়ে কাদাপানির নোংরা, আবর্জনা পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। আবার কেউ শুকনা কাদা দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে হাঁড়ি, পাতিল, গ্লাস, ব্যাংক, ফুলদানি, চায়ের কাপ তৈরিতে ব্যস্ত। এভাবে অন্তত ৮০ প্রকারের মাটির তৈজসপত্র তৈরি করছেন। তৈরির পর রোদে শুকিয়ে সেগুলোতে রং করছেন। আঁকছেন নকশাও। চূড়ান্ত আঁচড় দিয়ে সেগুলো আগুনের বড় চুলায় পোড়াচ্ছেন। এভাবেই প্রায় ১২ জনের হাতবদলে তৈরি হচ্ছে হরেক রকম মাটির তৈজসপত্র। 

কথা প্রসঙ্গে বট কৃষ্ণ পাল জানান, আধুনিক যুগের প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য ব্যবহার করে মানুষ অনেক রোগাক্রান্ত হচ্ছে। তবে মাটির তৈরি তৈজসপত্র কেমিক্যালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। তাঁর কারখানায় উৎপাদিত পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন শৌখিন মানুষ। অনেকে বেড়াতে এসে এসব জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন। দেশের অনেক জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে। 

বট কৃষ্ণ পাল বলেন, ছেলে অনলাইনে বিভিন্ন রকম নকশা দেখে সেগুলো তৈরি করেন কারখানায়। সাধারণত বিদেশে বসবাসরত বাঙালিরা গুগল ম্যাপে দেওয়া কে বি পটারীর ঠিকানা ও ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠানে সরাসরি লোক পাঠিয়ে মালামাল কিনে সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছেন। 

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুবল পাল বলেন, প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মাল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজে করে বিদেশে পাঠানো হয়। সৌদি আরব ও কুয়েতে গ্লাস, জগ, কাপসহ পানির কাজে ব্যবহৃত পাত্রের চাহিদা বেশি। 

বট কৃষ্ণ পাল ২০১০ সালে তাঁর কারখানা আধুনিকায়ন করেন। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বর্তমানে তাঁর কারখানা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে। এর মধ্যে ৫ বিঘা জমি নিজের ও বাকি ৭ বিঘা ইজারা নেওয়া। সেখানে শ খানেক মৃৎশিল্পী, কর্মচারী ও শ্রমিক রয়েছেন।

সুবল পালের ভাষ্য, বিদেশের জন্য অর্ডারে মাল ডেলিভারিতে সাধারণত ক্রেতারা সময় দেন না। পুঁজির স্বল্পতায় প্রস্তুত করা মাল গুদামজাতও নেই। আবার মাটির তৈজসপত্র প্রস্তুত করতে অনেক সময় লাগে। তবে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে পারলে বিদেশে ব্যবসা করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বছরে অন্তত ৫০ লাখ টাকা বা তারও বেশি ব্যবসা হতো। 

মৃৎশিল্পের এই কারখানায় ছয় বছর ধরে কাজ করছেন উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সালমা খাতুন। তিনি বলেন, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে এখানে তৈজসপত্রে রঙের কাজ করেন। ছয় বছর আগে ৩ হাজার টাকা বেতন ছিল। ৩০০ থেকে ৪০০ করে বাড়তে বাড়তে এখন বেতন ৬ হাজার টাকা। 

মির্জাপুর গ্রামের ছাকিরন নেছা (৫০) আট বছর ধরে কাজ করছেন কারখানায়। তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবিকার জন্য কাজ করছি। অনেক অসহায় মানুষ কাজ করে এখানে। তবে ৬ হাজার টাকা বেতনে বর্তমান বাজারে টিকে থাকা মুশকিল।’ তাঁর ভাষ্য, বেতন ৮-১০ হাজার হলে ভালো হয়। 

জয়পুরহাট থেকে এসে কাজ করছেন মৃৎশিল্পী বজলুর রহমান। তিনি বলেন, অন্তত ১২ জনের ছোঁয়ায় এখানে প্রায় ৮০ প্রকার জিনিসপত্র তৈরি হয়। আদিম পেশায় কাজ করতে পেরে খুশি। 

যশোরের কেশবপুর থেকে মাটির তৈজসপত্র কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রাচীনকালের পণ্য হলেও ইদানীং চাহিদা বেড়েছে মাটির পাত্রের। কল্যাণপুরের কারখানাটিতে বেশ বড় ও সুন্দর সুন্দর পণ্য আছে। নিয়মিত এখান থেকে মাল কিনে বিক্রি করছি।’ 

উদ্যোক্তা বট কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘বংশপরম্পরায় পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছি। ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে মাটির পাত্রের। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার পাত্রের চাহিদা রয়েছে। তবে পুঁজির অভাবে মাত্র ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার পাত্র তৈরি ও বিক্রি হয়। সহজ শর্তে ৩০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা ঋণ পেলে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।’ 

প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার পাত্রের চাহিদা রয়েছে। তবে পুঁজির অভাবে মাত্র ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার পাত্র তৈরি ও বিক্রি হয়।বট কৃষ্ণ পাল, উদ্যোক্তা

বট কৃষ্ণের ছেলে সুবল পাল বলেন, ‘গুণগত মান ভালো হওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা বেশি। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি শৌখিন মানুষদেরও চাহিদা বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকার বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের মাল কিনে আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন। আমরা অনলাইনে এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে মালামাল পৌঁছে দিয়ে থাকি। পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী মাল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ 

বট কৃষ্ণ পালকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান কুষ্টিয়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক আশানুজ্জামান। তিনি বলেন, বিসিক সাধারণত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নিয়ে কাজ করে। ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণ দিতে পারে না। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি কারখানাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। বৃহৎ আকারে ঋণ প্রদানের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ট র ত জসপত র প র য় ১২ প ল বল ন ক জ করছ ক জ কর স বল প ব যবস করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মৃৎশিল্পের ‘বটবৃক্ষ’ বট কৃষ্ণ পাল

২০০১ সালে ১৯ হাজার টাকা নিয়ে ২৮ শতক জমিতে শুরু করেছিলেন মাটির তৈজসপত্র তৈরির কাজ। তখন চার–পাঁচজন শ্রমিক মিলে মাটির ব্যাংক, খেলনা, সীমিত আকারে থালাবাটি তৈরি করতেন। বর্তমানে শ খানেক শ্রমিক কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ওই সব শ্রমিক ডিনার সেটসহ ৮০ প্রকারের বাসনকোসন তৈরি করছেন। প্রায় ১২ বিঘা জমিসহ বর্তমানে পুঁজি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।

এ সফলতা দেখিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব বট কৃষ্ণ পাল। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুরের কে বি পটারী ইন্ডাস্ট্রির মালিক। কালের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম আর কাচের তৈরি বাসনের ভিড়ে বংশপরম্পরায় প্রাচীন এই মৃৎশিল্প ধরে রেখেছেন তিনি। ছেলেকে তিনি এ ব্যবসার কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর কারখানার অধিকাংশ শ্রমিক নারী। 

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে মাটির তৈজসপত্র। তবে পাঁচ প্রজন্মের বংশপরম্পরায় এ পেশা ধরে রেখেছেন কল্যাণপুর গ্রামের বট কৃষ্ণ পাল। তিনি ২০১০ সালে তাঁর কারখানা আধুনিকায়ন করেন। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বর্তমানে তাঁর কারখানা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে। এর মধ্যে ৫ বিঘা জমি নিজের ও বাকি ৭ বিঘা ইজারা নেওয়া। সেখানে শ খানেক মৃৎশিল্পী, কর্মচারী ও শ্রমিক রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে অন্তত ৭০ জন স্বামী পরিত্যক্ত, সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় নারী। তাঁরা অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাভিত্তিক প্রতি মাসে ৫ থেকে ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান। সেখানে প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার মাটির তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রি হয়। কাঁচামাল, যন্ত্রাংশের অপচয়, বেতনসহ প্রতিদিন খরচ প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তবে মাটির তৈজসপত্র বিক্রি হয় প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। সেই হিসাবে কারখানাটিতে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। 

সম্প্রতি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ বল যন্ত্রের সাহায্যে মাটির সঙ্গে পানি মেশাচ্ছেন। কেউ ছাঁকনি দিয়ে কাদাপানির নোংরা, আবর্জনা পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। আবার কেউ শুকনা কাদা দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে হাঁড়ি, পাতিল, গ্লাস, ব্যাংক, ফুলদানি, চায়ের কাপ তৈরিতে ব্যস্ত। এভাবে অন্তত ৮০ প্রকারের মাটির তৈজসপত্র তৈরি করছেন। তৈরির পর রোদে শুকিয়ে সেগুলোতে রং করছেন। আঁকছেন নকশাও। চূড়ান্ত আঁচড় দিয়ে সেগুলো আগুনের বড় চুলায় পোড়াচ্ছেন। এভাবেই প্রায় ১২ জনের হাতবদলে তৈরি হচ্ছে হরেক রকম মাটির তৈজসপত্র। 

কথা প্রসঙ্গে বট কৃষ্ণ পাল জানান, আধুনিক যুগের প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য ব্যবহার করে মানুষ অনেক রোগাক্রান্ত হচ্ছে। তবে মাটির তৈরি তৈজসপত্র কেমিক্যালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। তাঁর কারখানায় উৎপাদিত পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন শৌখিন মানুষ। অনেকে বেড়াতে এসে এসব জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন। দেশের অনেক জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে। 

বট কৃষ্ণ পাল বলেন, ছেলে অনলাইনে বিভিন্ন রকম নকশা দেখে সেগুলো তৈরি করেন কারখানায়। সাধারণত বিদেশে বসবাসরত বাঙালিরা গুগল ম্যাপে দেওয়া কে বি পটারীর ঠিকানা ও ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠানে সরাসরি লোক পাঠিয়ে মালামাল কিনে সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছেন। 

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুবল পাল বলেন, প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মাল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজে করে বিদেশে পাঠানো হয়। সৌদি আরব ও কুয়েতে গ্লাস, জগ, কাপসহ পানির কাজে ব্যবহৃত পাত্রের চাহিদা বেশি। 

বট কৃষ্ণ পাল ২০১০ সালে তাঁর কারখানা আধুনিকায়ন করেন। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বর্তমানে তাঁর কারখানা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে। এর মধ্যে ৫ বিঘা জমি নিজের ও বাকি ৭ বিঘা ইজারা নেওয়া। সেখানে শ খানেক মৃৎশিল্পী, কর্মচারী ও শ্রমিক রয়েছেন।

সুবল পালের ভাষ্য, বিদেশের জন্য অর্ডারে মাল ডেলিভারিতে সাধারণত ক্রেতারা সময় দেন না। পুঁজির স্বল্পতায় প্রস্তুত করা মাল গুদামজাতও নেই। আবার মাটির তৈজসপত্র প্রস্তুত করতে অনেক সময় লাগে। তবে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে পারলে বিদেশে ব্যবসা করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বছরে অন্তত ৫০ লাখ টাকা বা তারও বেশি ব্যবসা হতো। 

মৃৎশিল্পের এই কারখানায় ছয় বছর ধরে কাজ করছেন উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সালমা খাতুন। তিনি বলেন, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে এখানে তৈজসপত্রে রঙের কাজ করেন। ছয় বছর আগে ৩ হাজার টাকা বেতন ছিল। ৩০০ থেকে ৪০০ করে বাড়তে বাড়তে এখন বেতন ৬ হাজার টাকা। 

মির্জাপুর গ্রামের ছাকিরন নেছা (৫০) আট বছর ধরে কাজ করছেন কারখানায়। তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবিকার জন্য কাজ করছি। অনেক অসহায় মানুষ কাজ করে এখানে। তবে ৬ হাজার টাকা বেতনে বর্তমান বাজারে টিকে থাকা মুশকিল।’ তাঁর ভাষ্য, বেতন ৮-১০ হাজার হলে ভালো হয়। 

জয়পুরহাট থেকে এসে কাজ করছেন মৃৎশিল্পী বজলুর রহমান। তিনি বলেন, অন্তত ১২ জনের ছোঁয়ায় এখানে প্রায় ৮০ প্রকার জিনিসপত্র তৈরি হয়। আদিম পেশায় কাজ করতে পেরে খুশি। 

যশোরের কেশবপুর থেকে মাটির তৈজসপত্র কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রাচীনকালের পণ্য হলেও ইদানীং চাহিদা বেড়েছে মাটির পাত্রের। কল্যাণপুরের কারখানাটিতে বেশ বড় ও সুন্দর সুন্দর পণ্য আছে। নিয়মিত এখান থেকে মাল কিনে বিক্রি করছি।’ 

উদ্যোক্তা বট কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘বংশপরম্পরায় পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছি। ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে মাটির পাত্রের। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার পাত্রের চাহিদা রয়েছে। তবে পুঁজির অভাবে মাত্র ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার পাত্র তৈরি ও বিক্রি হয়। সহজ শর্তে ৩০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা ঋণ পেলে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।’ 

প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার পাত্রের চাহিদা রয়েছে। তবে পুঁজির অভাবে মাত্র ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার পাত্র তৈরি ও বিক্রি হয়।বট কৃষ্ণ পাল, উদ্যোক্তা

বট কৃষ্ণের ছেলে সুবল পাল বলেন, ‘গুণগত মান ভালো হওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা বেশি। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি শৌখিন মানুষদেরও চাহিদা বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকার বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের মাল কিনে আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন। আমরা অনলাইনে এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে মালামাল পৌঁছে দিয়ে থাকি। পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী মাল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ 

বট কৃষ্ণ পালকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান কুষ্টিয়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক আশানুজ্জামান। তিনি বলেন, বিসিক সাধারণত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নিয়ে কাজ করে। ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণ দিতে পারে না। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি কারখানাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। বৃহৎ আকারে ঋণ প্রদানের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ