ক্যালেন্ডারে শীত আসার আগেই প্রকৃতিতে শীতের রং লেগেছে। ঝুপ করে নেমে আসছে সন্ধ্যা, হিমের চাদর জড়িয়ে নিচ্ছে আকাশ। মাঠ, ঘাস আর রাতে ফোটা শিউলি ফুল সকালের শিশিরে জবুথবু। জবুথবু হয়ে আছে পথের ধারে ফোটা ছোট্ট নীল ফুলের হাসি, তার নাম জেনেছি কানাইবাঁশি। আসলে ফুল ফোটাবে বলেই বৃষ্টিহীন দিনে বুনো গাছ ভিজিয়ে দিয়ে যায় শিশিরের কণা।
আচ্ছা এই যে কুয়াশা, শিশির আর শিরশিরানি—এসবই কি হেমন্তের নিজস্ব? শীতের কাছে কি তার কোনো ঋণই নেই? আবার এ কথাও তো ঠিক, হেমন্ত আছে বলেই না শীতের এত আড়ম্বর। আর তা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
ধুলা ঝেরে বাইরে এসেছে তোরঙ্গ। রাগ-অভিমান নয়, তবু এত দিন যাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল, এই হিম দিনে ‘সমারোহে এসো’ বলে বের করা হচ্ছে শীতের নানা রঙের পোশাক। গায়ে জড়ানোর আগে বাড়ির ছাদ ও উঠানগুলোতে রোদ পোহাচ্ছে নানা রঙের উল।
আমার মায়ের ছিল টিনের তোরঙ্গ। এই তোরঙ্গ বাইরে এলেই বোঝা যেত, শীত সমাসন্ন। তোরঙ্গ খুলতেই বেরিয়ে আসত ন্যাপথলিনের গন্ধমাখা ছোটবেলার সোয়েটার, গায়ে দেওয়ার জন্য পরে আর কোনো দিন যার ডাক পড়েনি। বেরিয়ে আসত ঠাকুরমার বোনা পুরোনো কাঁথা। ঠাকুরমা নেই, তবু প্রতি শীতে একবার কাঁথায় মা ছুঁয়ে নিতেন তাঁর মায়ের আঙুল।
তোরঙ্গের একদম নিচে পাট করা থাকত বাবার তরুণ বয়সের মাফলার আর চাদর। ওই মাফলার ও চাদর কখনো রোদ পেত না, পেত আদর। তোরঙ্গ থেকে বের করে গলা ও গায়ে জড়িয়ে আবার গুছিয়ে রেখে দিতেন পরের শীতে নেড়ে দেখার জন্য। এমনই প্রেম আর ম্যাজিক নিয়ে আসত শীতকাল।
ছোটোবেলায় শীতকাল আসত ভয় সঙ্গে নিয়ে। পরীক্ষার ভয়। ভয় কাটিয়ে স্কুলফেরত পথে হঠাৎ ফাঁকা জমিতে দেখা যেত বিশাল তাঁবু। জোড়া হাতি ও জোকারের ছবি আঁকা গেটে লেখা, ‘দ্য রওশন সার্কাস’ বা ‘বুলবুল সার্কাস’।
এই তাঁবুই বুঝিয়ে দিত, ‘এসেছে শীতের দূত,/ এ লগন রোদ পোহাবার।’ ভোরে শিশিরভেজা ঘাসে হাঁটলে ঠান্ডায় লাল হয়ে যেত নাক। তাই মনে হতো, সার্কাসের জোকার লাল বলের নাকে করে বয়ে এনেছে শীতের রসদ। এবার ম্যাজিক করে তা ছড়িয়ে দেবে পুরো মফস্সলে।
অন্য সব মফস্সলের মতোই আমাদের মফস্সলে আকাশে ধোঁয়ার চাদর বিছিয়ে বিষণ্নতা নিয়ে আসত ক্ষণস্থায়ী বিকেল। ঠান্ডার অজুহাতে চিকলির বিলে গা ঘেঁষে বসে থাকত প্রেমিক-প্রেমিকা। কেউ আবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যেত ঝুপ করে নেমে আসা সন্ধ্যায়, সাদা কুয়াশায় ভরে যেত চারপাশ। এ রকম বহু প্রেম ও বিচ্ছেদের স্মৃতি হয়ে আসত শীত।
আরও পড়ুনশীতের আগে লেপ–কম্বল সঠিকভাবে পরিষ্কার করবেন যেভাবে৩০ অক্টোবর ২০২৫দুইশীতকাল এলেই ‘পোড় পোহানো’র এমন দৃশ্য চোখে পড়ে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত রঙ গ
এছাড়াও পড়ুন:
জার্মানিতে সেনাবাহিনীর ২০ হাজার গুলি চুরি, কে কীভাবে এ কাণ্ড ঘটাল
জার্মানির স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের বুর্গ শহরে সেনাবাহিনীর ব্যারাকে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়া একটি ডেলিভারি ট্রাক থেকে হাজার হাজার গুলি চুরি হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে এ চুরির বিষয় নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই গুলি কে বা কারা চুরি করেছে, তা এখনো জানা যায়নি। চালক অনির্ধারিত স্থানে ট্রাক থামানোয় এ ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জার্মানির দুই সংবাদমাধ্যম এমডিআর ও সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ডেয়ার স্পিগেলকে চুরির ঘটনাটি গত ২৫ নভেম্বর ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে।
স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যে গোলাবারুদ ‘হারানোর’ ঘটনা আগেও ঘটেছে। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে বার্নবুর্গ ও আইসলেবেন শহরে পুলিশের গোলাবারুদ খোয়া যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।জার্মান সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি বেসামরিক মালিকানাধীন ট্রাক সেদিন গুলি বহন করছিল। রাত হওয়ায় বুর্গের একটি হোটেলের পার্কিংয়ে ট্রাক থামান চালক। পরের দিন ট্রাক ব্যারাকে পৌঁছানোর পর বেশকিছু গুলি উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।
তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়, পিস্তলের প্রায় ১০ হাজারটি তাজা গুলি ও প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত অ্যাসল্ট রাইফেলের ৯ হাজার ৯০০ গুলি ট্রাকে নেই।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা চুরির বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। এসব গুলি ভুল হাতে পড়া উচিত নয়।’ মন্ত্রণালয় আরও মনে করছে, চালকের এমন জায়গায় ট্রাক থামানো ঠিক হয়নি।
চুরির ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, তা জানতে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তদন্ত শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যে গোলাবারুদ ‘হারানোর’ ঘটনা আগেও ঘটেছে। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে বার্নবুর্গ ও আইসলেবেন শহরে পুলিশের গোলাবারুদ খোয়া যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।