হন্ডুরাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মধ্যপন্থী লিবারেল পার্টির নেতা সালভাদর নাসরাল্লা রক্ষণশীল প্রার্থী নাসরি আসফুরার চেয়ে সামান্য এগিয়ে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য দিয়েছে। আসফুরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প–সমর্থিত প্রার্থী।

হন্ডুরাসে গত রোববার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। এরই মধ্যে ভোট গণনায় দেরি হওয়াকে কেন্দ্র করে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ আংশিক ভোট গণনায় প্রাপ্ত সর্বশেষ ফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ৬৮ শতাংশ ভোট গণনা শেষে নাসরাল্লা পেয়েছেন ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট এবং ন্যাশনাল পার্টির আসফুরা পেয়েছেন ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশ ভোট।

প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান ৯ হাজার ১২৯। এর আগে গত সোমবার প্রকাশিত আংশিক ফলাফলে আসফুরা প্রায় ৫০০ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।

মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলে ক্ষমতাসীন বামপন্থী দল লিব্রে পার্টির রিক্সি মোনকাদা ১৯ দশমিক ০৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

গতকাল সকালে হন্ডুরাসের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তারা ওই সময় ভোট গণনা ব্যবস্থায় ত্রুটি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিল। ওই ত্রুটির কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় ২০ শতাংশ ভোট গণনার বাইরে থেকে যায়। এতে ট্রাম্প সম্ভাব্য ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন।

গত সোমবার নির্বাচন কর্তৃপক্ষ বলেছে, আসফুরা এবং নাসরাল্লা প্রায় সমান সমান অবস্থানে আছেন। তাঁরা দুজনই ৪০ শতাংশের সামান্য কিছু কম ভোট পেয়েছেন। এখন এ ভোট হাতে গণনা করা হবে।

হন্ডুরাসের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রাথমিকভাবে দ্রুত ভোট গণনার ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে যে ওয়েব পোর্টালে তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফলের তথ্য হালনাগাদ করার কথা ছিল, সেটিতেও সমস্যা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুনহন্ডুরাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সিওমারা কাস্ত্রোর শপথ গ্রহণ২৮ জানুয়ারি ২০২২

গত সোমবার ওয়েবসাইট দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। অনেকে অভিযোগ করছেন, গত রোববার ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই হয়তো ভোট জালিয়াতি হয়েছে।

ভোট গণনা চলাকালে হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজকে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনসের এক নথিতে এমনটা উল্লেখ আছে। হার্নান্দেজ যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালান ও আগ্নেয়াস্ত্রসংক্রান্ত অভিযোগে ৪৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন।

ট্রাম্প হন্ডুরাসের ভোটারদের ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী আসফুরাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর পর হার্নান্দেজকে মুক্তি দেওয়া হয়। আসফুরার জন্য ভোট চাওয়ার পাশাপাশি তিনি হার্নান্দেজকে ক্ষমা করে দেবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ট্রাম্প হার্নান্দেজকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

গত সোমবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, হন্ডুরাস তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।

ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যদি তারা এটা করে, তবে তাদের কঠিন পরিণতি হবে। হন্ডুরাসের মানুষ ৩০ নভেম্বর বিপুল সংখ্যায় ভোট দিয়েছে।’

অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস নামের সংগঠনটি হন্ডুরাসে ভোট পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা বলেছে, রোববারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক ছিল। দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। সংগঠনটি গত সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দেশটির কিছু শহরে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা বাদ দিলে ভোট গ্রহণ স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’

তবে ভোট গণনা দীর্ঘায়িত হলে নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এবং বিক্ষোভ–সহিংসতা শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এখন গণনা–সম্পর্কিত তথ্য সরাসরি সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রকাশ করবে। জনগণ যেন ফলাফলের দিকে নজর রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র হন ড র স র ভ ট গ রহণ ভ ট গণন প রক শ ফল ফল

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করছে সরকার 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ন্যায়বিচার, জলবায়ু ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিসে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। 

উপদেষ্টা বলেন, “আমার সারাজীবনের লড়াই একই—কীভাবে কর্পোরেটের দখলদারিত্ব থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা যায়, কীভাবে অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করা যায়, কীভাবে তাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং কীভাবে উন্নয়নকে পরিবেশমুখী করা যায়।”

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি তিনটি জাতীয় অগ্রাধিকার তুলে ধরেন: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, শাসন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ প্রশাসনে চলমান সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে আছে ২২ বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকা একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগের  ব্যবহার বন্ধ করা, দেশজুড়ে প্লাস্টিকমুক্ত অঞ্চল সম্প্রসারণ, প্রধান নদী ও বনজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জোরদার করা।

বনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারও তিনি তুলে ধরেন। সম্প্রতি অনুমোদিত বন নীতিতে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর অবাধ, পূর্বানুমতিপ্রাপ্ত ও অবহিত সম্মতির বিধানকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেন।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক পরিবেশগত অবস্থার কথা তুলে ধরে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, প্রবাল বাস্তুতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে সেখানে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিপজ্জনক বায়ুদূষণ কমাতে জোরদার অভিযান অব্যাহত আছে, যদিও কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ফেনীতে নজিরবিহীন বন্যা, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, আকস্মিক সীমান্তপারের পানির প্রবাহসহ দেশের বাড়তে থাকা জলবায়ু ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, জলবায়ু ন্যায়বিচার তার দুই মন্ত্রণালয়ের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। 

উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মেগা প্রকল্পনির্ভরতা কমিয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আরো বিনিয়োগ করতে হবে। 

তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে জানান, সরকারি সকল কার্যালয়ে কার্যকর রুফটপ সোলার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নির্মূলের চলমান সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পরিবেশ ন্যায়বিচার একটি মূল্যবোধনির্ভর ধারণা। মানুষ ও প্রকৃতিকে সত্যিকারের মূল্য দিতে চাইলে আমাদের কার্যক্রমে সেই প্রতিফলন ঘটাতে হবে।” 

তিনি আশা প্রকাশ করেন, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এ সংস্কারগুলো ধরে রাখবে এবং আরো এগিয়ে নেবে।

সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; ইউএনডিপি বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম আসাদুজ্জামান; সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ডেপুটি হেড অব কো-অপারেশন নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম; বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বেলা) চেয়ারম্যান মির্জা কামরুল হাসান এবং বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা ইসলাম।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ