খুলনা ওয়াসার পদায়নকৃত এমডির যোগদানে ছাড়পত্র রহস্যজনকভাবে আটকে গেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। গত ৯ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল হায়াত মো. রফিক রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানকে খুলনা ওয়াসার এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) পদে পদায়ন করেন। 

গত ২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেননি। তার যোগদান করার জন্য ছাড়পত্রটি আটকে আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওয়াসা সংক্রান্ত দপ্তরে। আর এই সুযোগে খুলনা ওয়াসার সেই বহুল আলোচিত নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফেস-২ প্রকল্পের পিডি হিসেবে নিয়োগ দিতে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে।

আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিতব্য খুলনা ওয়াসার বোর্ড মিটিংয়ে এটি উত্থাপন হতে পারে বলে ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

খুলনা ওয়াসার এক ঠিকাদার ও একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, বিগত দিনে খুলনা তথা দেশের আলোচিত ‘শেখ বাড়ির টাকার মেশিন’ খ্যাত নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

রেজাউল ইসলাম খুলনা ওয়াসার ফেস-২ প্রকল্পের পিডি হিসেবে নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ চলমান থাকা সত্ত্বেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে তার নাম ইতিপূর্বে প্রেরণ করা হয়। ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার ফেস-২ প্রকল্পের পিডি হতে পারলে খুলনা ওয়াসার আওয়ামী দোসরদের ষোলকলা পূর্ণ হবে। তবে এর পেছনে কাজ করছে কয়েকজন বোর্ড সদস্য ও কতিপয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।

সূত্রটি জানায়, পিডি হতে ৪র্থ গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলী হতে হবে। কিন্তু মো. রেজাউল ইসলাম ৬ষ্ঠ গ্রেডের। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে বিগত দিনে ডিএমডি প্রকৌশলী মো. কামাল আহমেদ এসিআর দিয়ে গেলেও সম্প্রতি সেই এসিআরের ফাইল দপ্তর থেকে রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়েছে বলে জানা গেছে। নতুন করে তার পক্ষে এসিআর নেওয়ার তোড়জোর চলছে। এসব বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ে দৌড়-ঝাঁপ করছেন আলোচিত একজন বোর্ড সদস্য।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “খুলনা ওয়াসার পদায়নকৃত এমডি’র ফাইলটি কী অবস্থায় আছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। গ্রাহক সেবা থেকে প্রশাসনিক কাজে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটির জরুরি সমাধান দরকার।”

অপর দিকে, আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) খুলনা ওয়াসার বোর্ড মিটিং হচ্ছে এমনটি স্বীকার করে খুলনা ওয়াসার চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার বিভাগের (পরিকল্পনা) যুগ্ম সচিব ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, “নিয়োগ সংক্রান্তসহ সকল কাজ মন্ত্রণালয় থেকে হয়। এখানে চেয়ারম্যানের প্রশাসনিক কাজ খুবই কম। তাই পিডি নিয়োগ বা দায়িত্ব প্রদান সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।”

বছর পার হলেও রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে শুরু হয়নি তদন্ত 

খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ঘটনার বিষয়ে তদন্তে গঠিত হওয়া কমিটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে রয়েছে। পক্ষান্তরে ওই নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ম-বিধি উপেক্ষা করে পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৩ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহমুদুল হাসান খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় কয়েক কোটি টাকা অপচয়, ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়া, চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে সরাসরি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়াসহ কয়েকটি অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেন। 

অভিযোগের পর খুলনা ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তবে ওই কমিটির আহ্বায়ক থাকেন তিনি নিজেই আর সদস্য রাখা হয় অন্য একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে। কিন্তু কমিটিকে কোন নির্দিষ্ট দিন-তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়নি। এর ফলে এখন পর্যন্ত ওই অভিযোগের কোনো তদন্ত শুরু হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, ওয়াসা’র সাবেক সচিব নিজেই তদন্ত কমিটির প্রধান থেকে ওই নির্বাহী থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চক্রান্ত করছেন। এদিকে অভিযুক্ত রেজাউল ইসলামকে পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও ওয়াসার একটি সূত্র জানায়।

খুলনা ওয়াসার সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস ওয়াসার বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে খবরদারি করতেন। বিভিন্ন সাপ্লায়ারদের সাথে তিনি যোগসাজসে সুবিধার মাধ্যমে তাদেরকে মালামাল সাপ্লাইয়ের সুযোগ করে দেন। বিগত এক বছরের অধিককাল তিনি এই কাজ করে আসছেন। যদিও এ ধরনের কাজের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের। তিনি ইনটেক পয়েন্ট এবং ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পাম্প মোটর মেরামত, সাপ্লাই এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট কেমিক্যাল সাপ্লাই ইত্যাদি তার অনুগত সাপ্লাইয়ারদেরকে দিয়ে থাকেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম দুর্নীতিগ্রস্ত এবং বিতর্কিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলীর ব্যানারে আইবি ইলেকশন করেছেন। তিনি প্রোডাকশন টিউবাল কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন।

আপিল গেটের ৫.৫ এম এল ডি, ট্রিটমেন্ট প্লান্ত প্লান্ট ঠিকমতো কাজ করে না বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রোডাকশন টিউব ওয়েলস অধিকাংশই অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। খুলনা ওয়াসার মোট পাম্প রয়েছে ৪৮টি বর্তমানে পাম্প সচল রয়েছে ৩১টি এবং পাম্প বন্ধ রয়েছে ১৭টি। 

এই টিউবারগুলো নির্মাণে যথাযথ ডিজাইন অনুসরণ করা হয়নি। যার ফলে অধিকাংশ টিউবল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আপিল গেটের ৫.৫ এম এল ডি, সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো। যা খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ কাজে ভূমিকা রাখতে পারছে না।

এর আগে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী নথি উপস্থাপন করে মো. রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে এ বছরের ২০ এপ্রিল তৎকালীন খুলনা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. হুসাইন শওকত অফিস আদেশটি বাতিল করেন।

এ ব্যাপারে খুলনা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম বলেন, “পদোন্নতির তালিকায় থাকা কারো এসিআর আপডেট নেই। আপডেট না হলে পদোন্নতির আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলে আগামীকালের বোর্ড মিটিংয়ে পদোন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই।”

আড়াই হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “পিডি হওয়ার জন্য চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা হতে হবে। কিন্তু খুলনা ওয়াসায় যোগ্য কেউ নেই। ফলে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আইন লঙ্ঘণ করে ওয়াসা বা বোর্ড থেকে কাউকে সুপারিশ করা হবে না।”

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স থ ন য় সরক র প রকল প র প ট র টম ন ট কর মকর ত সদস য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

যেসব অভ্যাসের কারণে ‘ডিমেনশিয়ার’ ঝুঁকি বাড়ে

একজন মানুষের স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা এবং যুক্তির ক্ষমতা কমে আসার সঙ্গে তার জীবনে অনেক পরিবর্তন সূচিত হয়। ‘ডিমেনশিয়া’ হলো এমন একটি রোগ যা ব্যক্তির স্মৃতিহারানোর ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি জেনেটিকগত হতে পারে। যদি পরিবারের মধ্যে কেউ এই রোগের শিকার থেকে থাকেন, তবে বর্তমান প্রজন্ম কেউ প্রভাবিত হতে পারেন। এ ছাড়াও আরও যেসব কারণে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকে বাড়ে সেগুলো হলো:

পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা 
নিয়মিত পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। মনে করা হয় যে, প্রতিদিন ব্যায়াম কররে রক্ত প্রবাহকে বৃদ্ধি করে। এবং কার্ডিওভাসকুলার অসুস্থতার ঝুঁকি কমিয়ে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।  
  
ডায়েট

অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে এই ডিমেনশিয়া হতে পারে। বিশেষ করে কোলেস্টেরল, স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট এবং মিষ্টির খাওয়ার ফলে হতে পারে। এই ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য  ফল, শাকসবজি, শস্যজাতীয় খাবার এবং ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মত খাবার খেতে হবে। যা মস্তিষ্কের ভাল রাখবে।  
  
মদ্যপান

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মদ্যপান করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে রোগ বৃদ্ধি আরও দ্রুতগতিতে হয়ে থাকে।  
  
ঘুমের ব্যাঘাত 
একটানা ঘুমাতে সমস্যা হলে   সেক্ষেত্রে ডিমেনশিয়া দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘ধূমপান এবং ডিমনেশিয়া বৃদ্ধির মধ্যে একটি সংযোগ আছে। কেননা তামাকে বিষাক্ত যৌগ থাকে যা রক্তনালীর ক্ষতির কারণ হতে পারে। সমাজিক যোগাযোগ কমে আসলে ডিমনেশিয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিদের সামাজিক জীবন বজায় রাখতে হবে। এই রোগের ঝুঁকি কমাতে হলে মানসিকভাবে সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

শীতের সকালে পাতে পড়ুক ‘পোড়া বেগুনের ভর্তা’

বাংলাদেশের অকৃত্রিম দুই বন্ধু

সূত্র: টিভি নাইন

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ