আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যায়
Published: 3rd, December 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী কৌশলে পালিয়ে যায়। লক্ষ্মীপুর সদরের অবরুদ্ধ মানুষ পায় মুক্তির স্বাদ, বিজয়ের আনন্দ।
পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই জেলায় প্রথম প্রতিরোধ গড়ে ওঠে এপ্রিল মাসে। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ (নবম খণ্ড) বইয়ে বলা হয়েছে, শত্রুবাহিনী যেন লক্ষ্মীপুর সদরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য স্বাধীনতাকামী জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুর সদর পর্যন্ত প্রধান সড়কের মাদাম ব্রিজ, মন্দারী বাজার ব্রিজ ও চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম বাজার ব্রিজ ভেঙে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই স্মৃতি হিসেবে মাদাম ব্রিজের পিলারগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
বইটিতে উল্লেখ আছে, পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর সদরে ঢুকে বাজারডিতে সার্কেল অফিসারের কার্যালয় ও বাসভবনে প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করে। ওই দিনই মজপুর গ্রামে হামলা চালায় এবং ৩৫ জনকে হত্যা করে। লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসে এ ঘটনা ‘মজপুর গণহত্যা’ নামে পরিচিত। পরে তারা লক্ষ্মীপুর সদরের বাজারের বটু চৌধুরীর বাড়ি, দালাল বাজার হাইস্কুল, মান্দারী হাইস্কুল, বাজারের বড় মসজিদ, প্রবণাতন হাইস্কুল, পেয়ারাপুর, মজপুর ও আলমপুরে সাব–ক্যাম্প স্থাপন করে।
লক্ষ্মীপুর সদরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দালাল বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন, মান্দারী বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন, প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুল আক্রমণ, বড়ালিয়া অপারেশন ইত্যাদি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান (দ্বিতীয় খণ্ড) বইয়ে এমন ১৭টি সম্মুখযুদ্ধের তথ্য দেওয়া আছে।
৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্পে রাজাকারদের রেখে কৌশলে নোয়াখালীর চৌমুহনীর দিকে পালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর সকালে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুক্তির আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়েন লক্ষ্মীপুরের মানুষ।নভেম্বরের দিকে সম্মুখযুদ্ধ বাড়তে থাকে। সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে স্থানীয় দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম ও খোরশেদ আলম পাটোয়ারী (ফিরোজ) প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল। সীমিত চলাফেরা করত। অবস্থান ছিল শুধু বাগবাড়ির মাদাম ও থানার ক্যাম্পে। ২ ডিসেম্বর রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা রফিকুল হায়দার চৌধুরী, আক্তারুজ্জামান ও সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনীর দুই ক্যাম্প ঘিরে ফেলেন। ৩ ডিসেম্বর ভোরের আলো ফুটতেই পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণে রাজি হয়নি। তারপর শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। সেদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা বন্দুকের শব্দ, মর্টারের বিস্ফোরণ আর আকাশজুড়ে কালো ধোঁয়া ছিল।
ওই বিকেলে অভূতপূর্ব এক দৃশ্য দেখা যায় লক্ষ্মীপুরে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে এলাকার হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। হাতে লাঠি, বাঁশ, কাস্তে—যা পেয়েছেন, তা নিয়েই ছুটে এসেছেন তাঁরা। মনে হচ্ছিল, আর কোনো শক্তিই বিজয় আটকে রাখতে পারবে না।
হয়েছিলও তা–ই। ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্পে রাজাকারদের রেখে কৌশলে নোয়াখালীর চৌমুহনীর দিকে পালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর সকালে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুক্তির আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়েন লক্ষ্মীপুরের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে রাজাকাররা।
মাহবুবুল আলম ও খোরশেদ আলম সেই সময়কার লড়াই ও বিজয়ের কথা বলার পাশাপাশি একটি বেদনার কথাও জানান। সেটি হলো জেলার রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে ওই দিন রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ মারা যান। আহত হন আরও তিনজন। এভাবেই আনন্দ–বেদনায় রচিত হয় বিজয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র র ড স ম বর আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
‘হে প্রতিপালক, আপনার শোকর আদায়ের সামর্থ্য দিন’
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী-রাসুল ও নেককার বান্দাদের কিছু বরকতময় ও সর্বজনীন দোয়া শিখিয়েছেন, যা মানব জীবনের প্রতিটি প্রয়োজনীয় দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে সুরা আহকাফের ১৫ নং আয়াতে বর্ণিত দোয়াটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ:
“সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যেন আমি আপনার নেয়ামতসমূহের শোকরিয়া আদায় করতে পারি, যা আপনি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে দান করেছেন এবং আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন। আর আমার জন্য আমার সন্তানদের মধ্যে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয় আমি আপনার দিকেই ফিরে এলাম এবং নিশ্চয় আমি আত্মসমর্পণকারীদের (মুসলিমদের) অন্তর্ভুক্ত।’” (সুরা আহকাফ, আয়াত: ১৫)
এই দোয়াটি যেন মানব জীবনের সমস্ত সফলতাকে একটি সরল প্রার্থনায় গেঁথে দিয়েছে। এটি শোকর, সৎকাজ, বংশের কল্যাণ ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের এক পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা।
বিশেষত, চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর বান্দার আধ্যাত্মিক নবায়ন ও তওবার প্রতি এই আয়াত ইঙ্গিত দেয়।
ইসলামের নেয়ামতই সবচেয়ে বড় নেয়ামত, যার শুকরিয়া প্রকাশ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যক।শোকর আদায়ের সামর্থ্য ও উপলব্ধিদোয়ার প্রথম অংশ হল, “রব্বি আওযি'নি আন্ আশকুর নি’মাতাকাল্লাতি আন’আমতা ‘আলাইয়্যা ওয়া ‘আলা ওয়ালিদাইয়্যা” অর্থাৎ, “হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যেন আমি আপনার নেয়ামতসমূহের শোকরিয়া আদায় করতে পারি যা আপনি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে দান করেছেন।”
‘আওযি'নি’ শব্দের অর্থ হল, আমাকে অনুপ্রাণিত করুন, সামর্থ্য দিন বা এমনভাবে আমার মনকে আকৃষ্ট করুন যেন আমি সেই শুকরিয়া থেকে এক মুহূর্তও বিচ্ছিন্ন না হই। (সিদ্দিক হাসান খান, ফাতহুল বায়ান, ৬/৩০১)
আল্লাহর নেয়ামত অগণিত। এই দোয়ায় ‘নেয়ামত’ শব্দটি একবচন আকারে ব্যবহৃত হলেও যার সঙ্গে সর্বনাম যুক্ত রয়েছে (নি’মাতাকা), তা ব্যাপকতা ও সামগ্রিকতা বোঝায়। অর্থাৎ, তা দুনিয়াবি ও ধর্মীয় সকল প্রকার নেয়ামতকে অন্তর্ভুক্ত করে।
এর মধ্যে ইসলামের নেয়ামতই সবচেয়ে বড় নেয়ামত, যার শোকরিয়া প্রকাশ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যক।
এখানে দোয়াকারী নিজের নেয়ামতের সঙ্গে পিতামাতার ওপর আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতসমূহেরও শোকরিয়া আদায় করার সামর্থ্য চেয়েছে। এর অন্তর্নিহিত কারণ হলো, পিতামাতার ওপর আল্লাহর নেয়ামত তাদের সন্তানের ওপরও বর্তায়।
বিশেষ করে, যদি পিতামাতা দ্বীনের নেয়ামত লাভ করেন, তবে সেই নেক প্রভাব সন্তানের জীবনেও সঞ্চারিত হয়।
আরও পড়ুন‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’১৭ অক্টোবর ২০২৫এ কারণে আল্লাহ তায়ালা নিজের নেয়ামতের কথা বলার পরপরই পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন, “আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তার স্তন্য ছাড়াতে দুই বছর লাগে। সুতরাং যখন সে পূর্ণ শক্তি ও চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়, তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন...’” (সুরা আহকাফ, আয়াত: ১৫)
এই আয়াত প্রমাণ করে যে, জীবনের পূর্ণতা ও বুদ্ধিমত্তা যখন চল্লিশ বছর বয়সে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়, তখন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে নতুন করে তওবা ও ইবাদতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। (ইবনে কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিম, ৪/২০২, দারুল হিলাল, বৈরুত)
সন্তোষজনক সৎকর্মের প্রার্থনাদোয়ার দ্বিতীয় অংশ হল, “ওয়া আন্ আ'মালা সলিহান তারদাহু” অর্থাৎ, “এবং আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন।”
শুকরিয়া শুধু মুখের কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দোয়াকারী আল্লাহর কাছে ভবিষ্যতে এমন সৎকর্ম করার তাওফীক চেয়েছে, যা কেবল বাহ্যিকভাবে সৎকাজ হলেই হবে না, বরং তা আল্লাহর কাছে সন্তোষজনক হতে হবে।
জীবনের পূর্ণতা ও বুদ্ধিমত্তা যখন চল্লিশ বছর বয়সে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়, তখন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে নতুন করে তওবা ও ইবাদতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য।ইবনে কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিমএখানে 'তারদাহু' বা ‘যা আপনি পছন্দ করেন’ শব্দটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করে। এর অর্থ হল, কেবল সৎকাজ করলেই হবে না, বরং সেই কাজকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দুটি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে:
১. শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি: কাজটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠভাবে করা।
২. নবীজির অনুসরণ: কাজটি অবশ্যই শরীয়তের নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশিত পন্থায় সম্পন্ন করা।
কারণ, অনেক কাজ বাহ্যত সৎ মনে হলেও, যদি তাতে ইখলাস বা সুন্নাতের অনুসরণ না থাকে, তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। এই অংশে দোয়াকারী আল্লাহর গুণাবলির একটির (আল-রিদা বা সন্তুষ্টি) মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যা আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গুণ। (ইবনে উসাইমিন, তাফসিরু আলি ‘ইমরান, ১/৩০৮)
এই প্রার্থনা করে বান্দা মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কাজ, কথা ও নৈতিকতা অর্জনের চেষ্টা করে।
আরও পড়ুনজ্ঞান বৃদ্ধির জন্য মহানবী (সা.) যে দুটি দোয়া শিখিয়েছেন২৬ নভেম্বর ২০২৫সন্তানদের কল্যাণের জন্য প্রার্থনাদোয়ার তৃতীয় অংশ হল, “ওয়া আসলিহ লী ফী যুররিয়্যাতী” অর্থাৎ, “আর আমার জন্য আমার সন্তানদের মধ্যে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করুন।”
সন্তান-সন্ততি হল জীবনের সবচেয়ে বড় নেয়ামত ও পরীক্ষা। দোয়াকারী কেবল নিজের জন্য নয়, বরং তার সন্তানদের মধ্যে স্থায়ী ও গভীর কল্যাণ কামনা করেছে। এখানে ‘আমার সন্তানদের মধ্যে’ বোঝাতে আরবিতে ‘ফী’ অব্যয়টি ব্যবহার করা হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে, কল্যাণ যেন তাদের মাঝে গভীরভাবে প্রোথিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত হয় (সিদ্দিক হাসান খান, ফাতহুল বায়ান, ৬/৩০১)
পিতা-মাতার কল্যাণের প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। এই দোয়ায় সন্তানের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করা হল দুনিয়া ও আখেরাতে মানব জীবনের চূড়ান্ত সফলতার অংশ। কারণ, সৎ সন্তান হলো পৃথিবীতে নেক আমলের একটি নিরবচ্ছিন্ন ধারা, যা মৃত্যুর পরও তার পিতামাতার জন্য সওয়াব বয়ে নিয়ে আসে।
এই কারণে একজন নেককার বান্দার জন্য নিজের ইবাদত, শোকরিয়া ও তওবার পাশাপাশি সন্তানের কল্যাণের জন্য সর্বদা প্রার্থনা করা উচিত।
দোয়াকারী তার জীবনের সকল ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত একজন মুসলিম হিসেবে ঘোষণা করে।তওবা ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সমাপ্তিএই বরকতময় দোয়াটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে তওবা ও ইসলামের ঘোষণা দ্বারা: “ইন্নী তুবতু ইলাইকা ওয়া ইন্নী মিনাল মুসলিমীন” অর্থাৎ, “নিশ্চয় আমি আপনার দিকেই ফিরে এলাম এবং নিশ্চয় আমি আত্মসমর্পণকারীদের (মুসলিম) অন্তর্ভুক্ত।”
দোয়ার শেষে তওবা ও ইবাদতের ঘোষণা দেওয়া দোয়া কবুলের অন্যতম কারণ।
দোয়াকারী তার জীবনের সকল ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে (ইন্নী তুবতু ইলাইকা) এবং নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত একজন মুসলিম (ওয়া ইন্নী মিনাল মুসলিমীন) হিসেবে ঘোষণা করে।
তওবা: তওবা হলো সকল পাপ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। এই স্বীকারোক্তি দোয়া কবুলের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যমগুলোর একটি।
ইসলাম: নিজেকে মুসলিম হিসেবে ঘোষণা করা মানে আল্লাহর আদেশ-নিষেধের কাছে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে আত্মসমর্পণ করা। এটিই সৎকর্মের ভিত্তিমূল।
এই সমাপ্তি অংশটি বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর কাছে তার ইমান ও আমলের অঙ্গীকার। যখন বান্দা নিজের ভালো কাজের মাধ্যমে (যেমন তওবা ও ইসলাম) আল্লাহর কাছে কিছু চায়, তখন তা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য অধিক উপযোগী হয়।
এটি আমল দ্বারা আল্লাহর কাছে তওয়াসসুল বা মাধ্যম গ্রহণ করার এক উত্তম দৃষ্টান্ত।
শেষ কথাসুরা আহকাফের এই দোয়াটি মানব জীবনের সার্থকতা অর্জনের এক পূর্ণাঙ্গ দলিল। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবনের পূর্ণতায় পৌঁছে একজন মুমিনের প্রধান কাজ হল:
১. আল্লাহর নেয়ামতসমূহের জন্য শোকর আদায় করার তাওফিক চাওয়া।
২. ইখলাস ও সুন্নাহর ভিত্তিতে আল্লাহর সন্তোষজনক সৎকর্ম করা।
৩. নিজের ও মুসলিম উম্মাহর জন্য সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কল্যাণ চাওয়া।
৪. সর্বদা তওবা ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করা।
এই দোয়াটিকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করা প্রতিটি মুমিনের জন্য অপরিহার্য, বিশেষত যখন তারা জীবনের পরিপক্কতার পর্যায়ে পৌঁছায়।
আরও পড়ুনসম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা১২ অক্টোবর ২০২৫