জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গোলান মালভূমি, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা ও এসব অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে দুটি প্রস্তাব পাস করেছে।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। 

আরো পড়ুন:

সিরিয়ায় ‘হস্তক্ষেপ’ না করতে ইসরায়েলকে সতর্ক করলেন ট্রাম্প

আইএসবিরোধী মার্কিন নেতৃত্বধীন জোটে যোগ দিচ্ছে সিরিয়া

প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে ইসরায়েলকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৫১টি দেশ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১১টি দেশ এবং ১১টি দেশের ভোটদানে বিরত থেকে পাস হয়। ফিলিস্তিন, জর্ডান, জিবুতি, সেনেগাল, কাতার ও মৌরিতানিয়া প্রস্তাবটি জমা দেয়। 

একই দিনে সাধারণ পরিষদ গোলার মালভূমিতে ইসরায়েলি দখলদায়িত্বে বিরুদ্ধে মিশরের জমা দেওয়া প্রস্তাবটিও গ্রহণ করেছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১২৩টি দেশ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছে সাতটি দেশ এবং ভোটদানে অংশ নেয়নি ৪১টি দেশ।

উভয় ক্ষেত্রেই, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গোলান মালভূমি সংক্রান্ত প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এলো, যখন ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তির দিকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন প্রস্তাবটির সমালোচনা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে ড্যানন বলেন,  “জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আবারো প্রমাণ করে যে তারা বাস্তবতা থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন। ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো অপরাধ এবং সিরিয়ায় মিলিশিয়াদের বিপজ্জনক কার্যকলাপের বিষয়ে আলোচনা করার পরিবর্তে, তারা ইসরায়েলকে গোলান মালভূমি থেকে সরে যাওয়ার দাবি করেছে- যা আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা লাইন।”

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত এই প্রস্তাবগুলো আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মালভূমি দখল করে এবং ১৯৮১ সালে এটিকে নিজের অংশ বলে ঘোষণা করে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়নি।

গোলান মালভূমিতে ৩০টিরও বেশি অবৈধ বসতি স্থাপন করে যেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি ইহুদি ইসরায়েলি বসবাস করছে। গত বছর ইসরায়েল সিরিয়ার অভ্যন্তরে তাদের সেনা উপস্থিতি আরো বাড়িয়েছে এবং অধিকৃত অঞ্চল ও সিরিয়ার বাকি অংশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের বাফার জোন দখল করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল প রস ত ব ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

পৌর কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

‘উন্নয়ন প্রকল্প’ যে অনেক সময় সুপরিকল্পিত দখলদারির অংশ হতে পারে, তার আরেক উদাহরণ দেখা গেল যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায়। সেখানে চিত্রা নদীতে দখলের নেতৃত্ব দিচ্ছে কোনো ভূমিদস্যু বা অপরাধ চক্র নয়; এর নেতৃত্ব দিচ্ছে পৌরসভা। অর্থাৎ রাষ্ট্রের টাকায়, রাষ্ট্রের নামেই, রাষ্ট্রের আইন ভেঙে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখলের এক খারাপ নজির স্থাপন করা হচ্ছে।

ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল, ১৯৯০ স্পষ্ট ভাষায় বলছে, যে স্থান শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে এবং বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায়, তা নদীতট বা ফোরশোর। এই ভূমির ওপর কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা দপ্তরেরই কোনো অধিকার নেই। এখানে কোনো ভবন তোলা তো দূরের কথা, সীমানার খুঁটি বসানোরও আইনগত সুযোগ নেই। অথচ এ নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে চিত্রা নদীর বুকেই একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে—পৌরসভা ভবন, শৌচাগার, দলীয় কার্যালয়, দোকান, স্মৃতিস্তম্ভ। আর এবার সেই দখলকে পাকাপোক্ত করতে নদীর ভেতর কংক্রিটের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছে বাঘারপাড়া পৌরসভা।

যে পৌরসভার জনগণের সেবা দেওয়ার কথা, সেই পৌরসভাই যদি নদী দখল করে, তাহলে যে বার্তা যায়, তা হলো আইন দুর্বল মানুষের জন্য; শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান চাইলেই তা অমান্য করতে পারে। এ বার্তা পরিবেশ ধ্বংসের চেয়েও ভয়াবহ। ২০২০ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে স্পষ্টভাবে চিত্রা নদী দখলের চিত্র উঠে আসে। সেখানে দখলদার হিসেবে পৌরসভার নামও রয়েছে। এরপরও যদি নদীর ভেতর সীমানাপ্রাচীর দাঁড় করানো হয়, তবে সেটি কেবল আইন ভঙ্গ নয়, এটি আদালত ও কমিশনের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ।

আরেক দিকে সরকারেরই পানি উন্নয়ন বোর্ড জানাচ্ছে, ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে চিত্রা নদী পুনঃখনন করা হবে। অর্থাৎ এক হাতে নদী উদ্ধারের প্রকল্প, আর অন্য হাতে নদী দখলের অবকাঠামো। এ যেন রাষ্ট্রের দুই হাতেই একে অপরের গলা টিপে ধরা! এই দ্বিচারিতা কেবল হাস্যকর নয়, এটি  সুশাসনের কফিনে পেরেক ঠোকার শামিল।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘আমি নতুন এসেছি, জানতাম না।’ এটি কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হতে পারে না।

চিত্রা নদীর ভেতরে চলমান সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে যে অংশ নির্মিত হয়েছে, তা দ্রুত ভেঙে ফেলতে হবে। পৌরসভার জড়িত কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দখলের সঙ্গে যুক্ত সব স্থাপনার তালিকা প্রকাশ ও উচ্ছেদ পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। আমরা আশা করি, নদী রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় প্রশাসন আশু পদক্ষেপ নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পৌর কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন