খননত্রুটির ভুক্তভোগী কেন সাধারণ মানুষ
Published: 3rd, December 2025 GMT
নদীভাঙনের শিকার মানুষের আর্তনাদ শোনার কেউ নেই এ রাষ্ট্রে। ভুক্তভোগী মানুষগুলো ভিটেমাটি ও কৃষিজমি হারিয়ে কোথায় যাচ্ছে, সে খবরও কেউ রাখে না। শুধু কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে মানুষ? না, এর সঙ্গে আছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনা। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সীমাবাড়ি ইউনিয়নের বাঙ্গালী নদীর ভাঙনের ঘটনায় সেটিই স্পষ্ট হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ইউনিয়নটির ঘাশুড়িয়া, নলুয়া ও চকপাহাড়ির মতো তিনটি গ্রাম এখন শুষ্ক মৌসুমেই ভাঙনের হুমকিতে। সেখানে অর্ধশতাধিক পরিবার এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। গ্রামবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী, নদীভাঙনের প্রধান কারণ হলো নদী খননকালে ঠিকাদারদের চরম গাফিলতি ও কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব। মানচিত্র অনুযায়ী নদীর মূল প্রবাহ ছিল বর্তমান অবস্থান থেকে অন্তত ৬০০ ফুট উত্তরে। কিন্তু গ্রামবাসী বারবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও খনন করা হয়েছে নদীর দক্ষিণ পাশে পাড় ঘেঁষে, যেখানে পাড়টি আশপাশের জমির তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু প্রশাসন গ্রামবাসীর এ অভিযোগ আমলে নেয়নি। ফলে দেখা গেল, জনগণের সতর্কতা ও স্থানীয় জ্ঞানকে উপেক্ষা করার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
যাঁরা বাড়িঘর হারিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দিনমজুরি করে সংসার চালান। বসতভিটা হারিয়ে তাঁরা এখন দিশাহারা। অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্বল ঘরগুলোও ভাঙনের মুখে। ভাঙন শুধু ঘরবাড়িই কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে কৃষকদের জীবন-জীবিকা। ৫০০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য যে সেচঘরগুলো ছিল, সেগুলো নদীতে বিলীন হওয়ায় আগামী মৌসুমের চাষাবাদ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ একটি ভুল খননকাজের ফলস্বরূপ খাদ্যনিরাপত্তা ও স্থানীয় অর্থনীতিও ঝুঁকিতে পড়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কর্তৃপক্ষের জবাবে ‘দায় এড়ানোর’ সেই পুরোনো সুর স্পষ্ট। এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা বা জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড, বগুড়ার একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভিটেমাটি ও জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
তবে কেন নদী খননের সময় মূল ম্যাপের বাইরে গিয়ে পাড় ঘেঁষে খনন করা হলো এবং কেন লিখিত অভিযোগগুলো গুরুত্ব পেল না, তার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ ও কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
খননত্রুটির ভুক্তভোগী কেন সাধারণ মানুষ
নদীভাঙনের শিকার মানুষের আর্তনাদ শোনার কেউ নেই এ রাষ্ট্রে। ভুক্তভোগী মানুষগুলো ভিটেমাটি ও কৃষিজমি হারিয়ে কোথায় যাচ্ছে, সে খবরও কেউ রাখে না। শুধু কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে মানুষ? না, এর সঙ্গে আছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনা। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সীমাবাড়ি ইউনিয়নের বাঙ্গালী নদীর ভাঙনের ঘটনায় সেটিই স্পষ্ট হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ইউনিয়নটির ঘাশুড়িয়া, নলুয়া ও চকপাহাড়ির মতো তিনটি গ্রাম এখন শুষ্ক মৌসুমেই ভাঙনের হুমকিতে। সেখানে অর্ধশতাধিক পরিবার এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। গ্রামবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী, নদীভাঙনের প্রধান কারণ হলো নদী খননকালে ঠিকাদারদের চরম গাফিলতি ও কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব। মানচিত্র অনুযায়ী নদীর মূল প্রবাহ ছিল বর্তমান অবস্থান থেকে অন্তত ৬০০ ফুট উত্তরে। কিন্তু গ্রামবাসী বারবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও খনন করা হয়েছে নদীর দক্ষিণ পাশে পাড় ঘেঁষে, যেখানে পাড়টি আশপাশের জমির তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু প্রশাসন গ্রামবাসীর এ অভিযোগ আমলে নেয়নি। ফলে দেখা গেল, জনগণের সতর্কতা ও স্থানীয় জ্ঞানকে উপেক্ষা করার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
যাঁরা বাড়িঘর হারিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দিনমজুরি করে সংসার চালান। বসতভিটা হারিয়ে তাঁরা এখন দিশাহারা। অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্বল ঘরগুলোও ভাঙনের মুখে। ভাঙন শুধু ঘরবাড়িই কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে কৃষকদের জীবন-জীবিকা। ৫০০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য যে সেচঘরগুলো ছিল, সেগুলো নদীতে বিলীন হওয়ায় আগামী মৌসুমের চাষাবাদ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ একটি ভুল খননকাজের ফলস্বরূপ খাদ্যনিরাপত্তা ও স্থানীয় অর্থনীতিও ঝুঁকিতে পড়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কর্তৃপক্ষের জবাবে ‘দায় এড়ানোর’ সেই পুরোনো সুর স্পষ্ট। এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা বা জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড, বগুড়ার একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভিটেমাটি ও জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
তবে কেন নদী খননের সময় মূল ম্যাপের বাইরে গিয়ে পাড় ঘেঁষে খনন করা হলো এবং কেন লিখিত অভিযোগগুলো গুরুত্ব পেল না, তার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ ও কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।