রাজশাহীতে সাংবাদিকদের আটকে রাখার হুমকি দেওয়া যুবশক্তির দুই নেতাকে অব্যাহতি
Published: 3rd, December 2025 GMT
রাজশাহীতে সাংবাদিকদের কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান এক সাংগঠনিক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। রাতে বিজ্ঞপ্তিটি সংগঠনটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুরুতর সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় যুবশক্তির রাজশাহী মহানগর শাখার মুখ্য সংগঠক মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম সদস্যসচিব সুয়াইব আহমেদকে কমিটির সব দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘একই সঙ্গে, শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কর্মকাণ্ডের দায়ে আপনাদের কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না—সে বিষয়ে আগামী ২ (দুই) কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত এবং সশরীর উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম এবং সদস্যসচিব ডা.
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান না করা হলে সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার বিকেলে রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা কমিটির সংবাদ সম্মেলনে যাওয়া সাংবাদিকদের কক্ষে তালা মেরে আটকে রাখার হুমকি দেন জাতীয় যুবশক্তির ওই দুই নেতা। সেদিন এনসিপির জেলা কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক ও কমিটির অন্য সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। নতুন কমিটির আহ্বায়ককে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’আখ্যা দিয়ে বাইরে আরেকটি অংশ বিক্ষোভ শুরু করে। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে একপর্যায়ে বাইরে থেকে ওই দুজন এসে সাংবাদিকেরা বের না হলে কক্ষে আটকে রাখার হুমকি দেন।
ওই ঘটনার পর সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সোয়াইব ও তাঁর সঙ্গীরা দৌড়ে বাইরে চলে যান। সাংবাদিকেরাও তাঁদের পিছু নেন। পর্যটন মোটেল প্রাঙ্গণে বেশ কিছুক্ষণ উত্তপ্ত পরিস্থিতির তৈরি হয়।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে যাওয়া সাংবাদিকদের ‘তালা মেরে’ আটকে রাখার হুমকি০১ ডিসেম্বর ২০২৫পরে সুয়াইব সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চান। তিনি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করতে চাই না। আপনারা বের হয়ে যান, নাহলে আমরা তালা মেরে দেব—এটা রাগের মাথায় বলেছি।’
সুয়াইবের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজশাহী নগরের আসাম কলোনিতে দুই নারীকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন থামাতে ঢিল মারারও অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিকেরা এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এর আগে গত শনিবার রাতে ১১৪ সদস্যবিশিষ্ট এনসিপির রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও রনিউর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরদিন যুগ্ম সদস্যসচিব জিহান মোবারক সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেন। এরপর সোমবার বিকেলে পর্যটন মোটেলের সামনে আরও পাঁচ সদস্য কমিটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের কথা জানান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত য় য বশক ত র সদস যসচ ব কম ট র র আহ ব এনস প স গঠন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ও মৃত্যু বেড়েছে
নভেম্বর মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা অক্টোবরের তুলনায় বেড়েছে। অক্টোবরে ৪৯টি সহিংসতার ঘটনায় ৫৪৭ জন আহত ও ২ জন নিহত হয়েছিলেন। পরের মাসে ৭২টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭২৪ জন আহত হয়েছেন আর নিহত হয়েছেন ৯ জন। সেই হিসাবে গত মাসের চেয়ে নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিসংতায় মৃত্যু সাতজন বেড়েছে।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) নভেম্বর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। আজ রোববার গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
গণপিটুনিতে মৃত্যু বেড়েছেএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসেও একই ধারাবাহিকতায় গণপিটুনি বা মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) সন্ত্রাসে হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ঘটেই চলেছে। নভেম্বরে কমপক্ষে ৪৩টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ৩৮ জন। গণপিটুনির শিকার ২৩ জনকে আহত অবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ১ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১৪ জনকে চুরির অভিযোগে, ২ জনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ১ জনকে ডাকাতি ও ১ জনকে সালিসে হত্যা করা হয়।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল ৪৪টি। ওই মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।
এমএসএফ বলছে, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। এ ক্ষেত্রে গণপিটুনির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।
কারা হেফাজতে মৃত্যুএমএসএফের পরিসংখ্যান বলছে, নভেম্বরে কারা হেফাজতে মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের মাসে এর সংখ্যা ছিল ১৩। চলতি মাসে ১ জন কয়েদি ও ১০ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী বলে জানা গেছে।
মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বন্দীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হেফাজতে মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া সরকারকে অবশ্যই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করে বন্দীদের চিকিৎসাসেবার সুযোগ দিতে হবে। চিকিৎসাসেবা থেকে কোনোভাবেই কারাবন্দীদের বঞ্চিত করা যাবে না।
নাজুক সীমান্তে পরিস্থিতিএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বরে সীমান্ত পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত নাজুক। এ মাসে ভারতীয় জলসীমার কাছে বঙ্গোপসাগর থেকে ১০৮ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। এ ছাড়াও নাফ নদী থেকে নৌকাসহ ৪৭ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
এ ছাড়া নভেম্বরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। ভারতীয় নাগরিকের গুলিতে নিহত হয়েছেন আরও একজন। ভারতীয় সীমান্তে অজ্ঞাত আরও এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। চোরাকারবারিদের হামলা ঠেকাতে গিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গুলিতেও এক যুবক নিহত হয়েছেন।
এমএসএফ বলছে, সীমান্তে পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আশাব্যঞ্জক প্রতিকার হচ্ছে না। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না। অপর দিকে প্রতিবাদ সত্ত্বেও মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে। সীমান্তে এমন ঘটনা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধারএমএসএফ বলছে, নভেম্বরেও আগের ধারাবাহিকতায় অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছে। অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ জন নারী ও ৪৫ জন পুরুষসহ মোট ৫৮টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অল্পসংখ্যক ঘটনা ছাড়া সব কটি মরদেহের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। আগের মাসে ৬৬টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
উদ্ধার হওয়া মরদেহের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। কিছু মরদেহ গলা কাটা, বস্তাবন্দী, হাত-পা বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।