ডলারের দাম বাড়ায় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ বাড়ছে ২৬,১৮১ কোটি টাকা
Published: 3rd, December 2025 GMT
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ২৬ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের খরচ বাড়ছে। এখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের খরচ বেড়ে হচ্ছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এমন প্রস্তাব জমা পড়েছে। গত ১১ নভেম্বর এই প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। আগামী সপ্তাহে আবার বৈঠক হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজের খরচ যৌক্তিক করার কারণে বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব এসেছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন পাবনার রূপপুরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে।
কেন খরচ বাড়ছেপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির খরচ প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তনের বিষয়টি সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশি টাকায় মোট প্রকল্প ব্যয় সঠিকভাবে নির্ণয় হয়নি। মোট প্রকল্প ব্যয় সঠিকভাবে নির্ণয় করা না হলে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচে সঠিক হিসাব জানা যাবে না। এ ছাড়া আয়–ব্যয় বিশ্লেষণও সঠিক হবে না। এসব কারণে প্রকল্পের হিসাবে বাড়তি খরচ যুক্ত করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে।
প্রকল্পের দলিল অনুসারে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে রাশিয়ার এক্সিম ব্যাংক। যখন প্রকল্প প্রস্তাবনা বা ডিপিপি তৈরি করা হয়, তখন ডলারের বিনিময় হার ধরা হয় প্রতি ডলারে ৮০ টাকা। এ পর্যন্ত ৮ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা হয়েছে। এই অর্থের জন্য প্রতি ডলারের দাম গড়ে ৯৫ দশমিক ২৮ টাকা হিসেবে ধরা হয়েছে।
এখনো ঋণের ৩ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। এই ঋণের বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা ৪০ পয়সা। এসব বিবেচনায় প্রকল্পের খরচ বাড়ানোর সুপারিশ করতে যাচ্ছে বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রকল্পের খরচ কত২০১৬ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। তখন এর খরচ ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯১ হাজার কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে রাশিয়ার এক্সিম ব্যাংক।
এখন খরচ বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা করা হচ্ছে। খরচ বাড়ছে ২৬ হাজার ১৮১ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশ।
এই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন ২০২৮ সালের জুনে শেষ হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র খরচ র খরচ ব ড় প রস ত ব দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
আজ ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস
আজ ৩ ডিসেম্বর, ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই এবং মুক্তিকামী জনগণের প্রতিরোধে চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে পাকিস্তানি সেনাদের। সেদিন, সকালে হাজার হাজার মানুষ মুক্ত ঠাকুরগাঁও শহরের রাস্তায় বের হয়ে আসেন। বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ।
ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ড আব্দুল মান্নান জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করে। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালায় নির্যাতন। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে মেতে ওঠে তারা। পাশাপাশি চলতে থাকে অগ্নিসংযোগ। ১৫ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও।
আরো পড়ুন:
‘১৭ বছরে ৯৪ হাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা আড়াই লাখ করা হয়েছে’
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে পুলিশে চাকরি
এরই মধ্যে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলোন দুর্বার প্রতিরোধ। ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম. খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এই মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা শক্তি বৃদ্ধি করে সদলবলে প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁয়ে।
তিনি জানান, ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনপণ লড়াইয়ে সে রাতেই শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোরে ঠাকুরগাঁও শহর শত্রুমুক্ত হয়। সেদিন সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকেন। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ। তাদের অনেকের হাতে ছিল প্রিয় স্বদেশের পতাকা।
এলাকাবাসী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও ছিল মহকুমা। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা ছিল এই মহকুমার অন্তর্গত। ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে পল্লী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত গণকবর আর বধ্যভূমি। ঠাকুরগাঁও জেলার অধিকাংশ গণকবর আর বধ্যভূমিগুলো এখন বেহাল অবস্থায় রয়েছে। অযত্ন আর অবহেলার মধ্যে পড়ে থাকা গণকবরগুলো দেখার কেউ নেই। অধিকাংশ গণকবর আর বধ্যভূমি এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
আব্দুল মজিদ বলেন, “ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুর ইউনিয়নে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে মারা যাওয়াদের শুকানপুকুরীতে মাটি চাপা দেয় তারা। আমাদের এই শুকানপুকুরী বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার দাবি জানাচ্ছি।”
রাজাগাঁও ইউনিয়নের বিমলা রাণী বলেন, “পাকিস্থানি বাহিনী আগে খরিলুপের বাড়িত আইছিল। খরিলুপের বাড়ি থেকে আসিল হামার বাড়ি। হামরা সবাই দৌঁড়াদৌঁড়ি করি। কিন্তু হামাক সবাকে ধরে নিয়ে আসিল। হামার বস্তির তামাক লোকলাকে ধরে নিয়ে আসিছিল। সবাকে লাইন করে দাড়ায় থুইল। ওই সময় মুই গর্বপতি ছিনু। মিলিটারি বন্দুনটা দিয়ে মোর পেটটাতে গুতা দিছে আর মুই কিছু কহিবা পারু না।”
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ