১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপাল শহরের বাসিন্দারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সেদিন মধ্যরাতে কীটনাশক কারখানায় দুর্ঘটনার পর হাজারো ঘুমন্ত মানুষের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে চুপিসারে হাজির হয়েছিল প্রাণঘাতী গ্যাস। যার প্রভাবে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঝরে যায় কয়েক হাজার নিরীহ প্রাণ। যে ক্ষত বয়ে বেড়াতে হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ এই শিল্পবিপর্যয়ের ৪১ বছর কেটে গেছে। এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।

কী হয়েছিল সেদিন

সেদিন ছিল ২ ডিসেম্বর। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা পেরিয়ে গেছে। ভোপালের প্রায় ৯ লাখ বাসিন্দা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন ইউনিয়ন কার্বাইড কীটনাশক কারখানায় তখন রাতের পালার কাজ শুরু হয়েছে।

কিছুক্ষণ পরে শ্রমিকেরা শারীরিক প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে শুরু করেন। কীটনাশক কারখানায় এ ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া ছিল স্বাভাবিক। শ্রমিকেরা পরিস্থিতি দেখার জন্য চা-বিরতি পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

একটা ট্যাংকের ভেতর চাপ ও তাপ বাড়তে বাড়তে একসময় তা বিপৎসীমার ওপর চলে যায়। সোয়া ১২টার দিকে বিস্ফোরণে কারখানাটি কেঁপে উঠলে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। অতিরিক্ত চাপে ট্যাংকের একটি ভালভ ভেঙে গেলে ভেতর থেকে গ্যাস বের হতে শুরু করে। বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়া রোধের উদ্দেশ্যে স্থাপিত যন্ত্র ‘ভেন্ট গ্যাস স্ক্রাবার’ নষ্ট থাকায় কারখানা থেকে বেরিয়ে যায় ৪০ টনের বেশি বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস।

বিষয়টি প্রথমে টের পায় কারখানা এলাকার কিছু বস্তিবাসী। তারা নাকে একটা দুর্গন্ধ অনুভবন করে। এর প্রভাবে তাদের চোখ জ্বালাপোড়া শুরু করে। প্রথম দিকে বিষয়টিকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কেউ কেউ মনে করে, আশপাশে কোথাও হয়তো শুকনো মরিচ পোড়ানো হচ্ছে।

কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ঝাঁজালো গন্ধ আরও প্রকট হয়ে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানকার বাসিন্দাদের নিশ্বাস নিতে কষ্টে হতে শুরু হয়। তীব্র গন্ধের কারণে অনেকে বমি করতে থাকে।

কারখানার লাগোয়া বাসিন্দাদের কাছে সেই ‘গ্যাসের রাতের’ ঘটনা এখনো দুঃস্বপ্নের স্মৃতি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হোমনায় সরকারি গাড়ির চাপায় শিশু নিহত, বিচারের দাবিতে মিছিল

কুমিল্লার হোমনায় সরকারি গাড়ির চাপায় দুই বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হোমনা সদরে টিউলিপ প্রশাসন ইনস্টিটিউশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহাম্মেদ মোফাচ্ছেরের দাপ্তরিক গাড়ি। তবে দুর্ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না।

নিহত ফাইজা আক্তারের (২) বাবার নাম ফাইজুল হক। তিনি একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির স্থানীয় বিক্রয় প্রতিনিধি। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে হোমনায় থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার তেরদ্রন গ্রামে।

রমিজ উদ্দিন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ফাইজার ভাই আরিয়ান টিউলিপ প্রশাসন ইনস্টিটিউশনে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আজ সকালে মায়ের সঙ্গে ওই এলাকায় আসে ফাইজা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িটি দ্রুতগতিতে এসে শিশু ফাইজাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন গাড়িটি আটক করেন। তবে গাড়িচালক পালিয়ে যান। পরে লোকজন বিচারের দাবিতে দফায় দফায় মিছিল করেন।

খবর পেয়ে হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শহিদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহাম্মেদ মোফাচ্ছের, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুসরাত জাহান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে আসেন।

ইউএনও শহিদুল ইসলাম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিহত শিশু ফাইজার মা–বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত লোকজনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহাম্মেদ মোফাচ্ছের জানান, তিনি আজ সকাল থেকে উপজেলা পরিষদে বিআরডিবির নির্বাচন পরিচালনার কাজে ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না। চালক তাঁর সরকারি দাপ্তরিক গাড়িটি গ্যারেজ থেকে বের করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে গাড়িচালক তাওয়াবুর রহমান পলাতক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ