দেশে ভুমিকম্প এখন নতুন আতঙ্ক ও ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২১ নভেম্বর সকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই কম্পনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং অনেকে আহত হন। এরপরে বিভিন্ন মাত্রায় আরো বেশ কয়েকবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে দেশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের চারপাশে পাঁচটি প্রধান ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল রয়েছে। মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট বাউন্ডারি-১, নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত প্লেট বাউন্ডারি-২ এবং সিলেট হয়ে ভারতের দিকে যাওয়া প্লেট বাউন্ডারি-৩; এগুলোই বড় কম্পনের সম্ভাব্য উৎস। এ ছাড়া ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্টও ঝুঁকির কারণ।

জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম নোয়াখালী সরকারি কলেজ। ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষী এই প্রতিষ্ঠান দুটি ক্যাম্পাসে বিভক্ত; যার একটিতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী, অন্যটিতে ডিগ্রি, ১৭ বিষয় নিয়ে অনার্স এবং ১৫ বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সের ক্লাস চলে। প্রশাসনিক ভবন, কলেজ লাইব্রেরি, শিক্ষক পরিষদ, কলেজ অডিটোরিয়াম, ছাত্র সংসদ কার্যালয় সহ সকল কার্যক্রম চলে মাত্র এ কয়েকটি জীর্ণশীর্ণ ভবনে। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর এই শিক্ষাঙ্গনে এখন বড় হুমকি ভবনগুলোর জীর্ণদশা। নতুন ক্যাম্পাসের ৮টি ভবনের মধ্যে ৬টিই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, মাঝারি মাত্রায় বা অতিমাত্রায় ভূমিকম্প হলে দেখা দিতে পারে বড় বিপর্যয়। ক্লাস চলাকালীন দুর্ঘটনার শিকার হলে ঘটতে পারে অনেক প্রাণহানির ঘটনা।

সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ভেঙে পড়া ভীম, খসে পড়া ছাদের পলেস্তারা, দেবে যাওয়া দেয়াল, ভাঙা জানালার কাচ, শেওলায় ঢেকে থাকা পরিত্যক্ত কক্ষ। বিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগের প্রায় সব কক্ষেই রড পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে। কোথাও কোথাও জোড়াতালি দিয়ে সেই রড ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে কক্ষজুড়ে জমে থাকে পানি; পচে ওঠা দেয়াল থেকে খসে পড়ে প্লাস্টার।

শিক্ষার্থীরা বলছে, ক্লাস চলাকালীন একাধিকবার ভীমের অংশ খসে পড়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন শিক্ষকরা। শৌচাগারগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী। গত পাঁচ বছর ধরে চলছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেই শিক্ষা কার্যক্রম।

১৯৬৩ সালে একাদশ শ্রেণির মাধ্যমে শুরু হওয়া কলেজটি ১৯৬৮ সালে জাতীয়করণ হয়। নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ছয়টি ভবন আজ ৩৫ বছর বা তিন দশক পেরিয়ে গেলেও হয়নি কোনো সংস্কার। সাম্প্রতিক বছরেও নির্মাণ হওয়া দুই ভবন ছাড়া বাকিগুলো নড়বড়ে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

প্রশাসন বলছে, ভবন উন্নয়ন ও ক্যাম্পাস আধুনিকায়ন নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে চিঠি চালাচালি হয়েছে, তবে কাজ শুরু হতে সময় লাগবে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভবনগুলো বর্ষায় সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ক্লাসের মধ্যে পানি পড়ে, প্লাস্টার খসে পড়ে। কখন কোন ভীম ভেঙে পড়বে বুঝতে পারি না। জীবনের ঝুঁকি জেনেও তার ক্লাস করছেন।

তাদের অভিযোগ, ভবনগুলোর অবস্থা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একই রকম। তবুও মিলছে না স্থায়ী সমাধান।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.

জাকির হোসেন বলেন, “পুরাতন ভবন সংস্কার, নতুন ভবন নির্মাণসহ ক্যাম্পাসকে আধুনিকায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

নোয়াখালী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার নাজমুল ইসলাম বলেন, “অনার্স ক্যাম্পাসে নতুন ভবন নির্মাণ ও আধুনিকায়নের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। অনুমোদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোয়াখালী সরকারি কলেজ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। লক্ষ্মীপুর ও ফেনী থেকেও অনেক শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। ভবন সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে তারা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে। তা ছাড়া, দ্রুত সংস্কার না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বড় কোনো বিপর্যের আগেই পুরাতন ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

ঢাকা/সুমাইয়া/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ম কম প ন ভবন

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালী কলেজের ৮ ভবনের ৬টিই ঝুঁকিপূর্ণ, ভূমিকম্পে বিপর্যয়ের শঙ্ক

দেশে ভুমিকম্প এখন নতুন আতঙ্ক ও ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২১ নভেম্বর সকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই কম্পনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং অনেকে আহত হন। এরপরে বিভিন্ন মাত্রায় আরো বেশ কয়েকবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে দেশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের চারপাশে পাঁচটি প্রধান ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল রয়েছে। মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট বাউন্ডারি-১, নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত প্লেট বাউন্ডারি-২ এবং সিলেট হয়ে ভারতের দিকে যাওয়া প্লেট বাউন্ডারি-৩; এগুলোই বড় কম্পনের সম্ভাব্য উৎস। এ ছাড়া ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্টও ঝুঁকির কারণ।

জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম নোয়াখালী সরকারি কলেজ। ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষী এই প্রতিষ্ঠান দুটি ক্যাম্পাসে বিভক্ত; যার একটিতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী, অন্যটিতে ডিগ্রি, ১৭ বিষয় নিয়ে অনার্স এবং ১৫ বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সের ক্লাস চলে। প্রশাসনিক ভবন, কলেজ লাইব্রেরি, শিক্ষক পরিষদ, কলেজ অডিটোরিয়াম, ছাত্র সংসদ কার্যালয় সহ সকল কার্যক্রম চলে মাত্র এ কয়েকটি জীর্ণশীর্ণ ভবনে। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর এই শিক্ষাঙ্গনে এখন বড় হুমকি ভবনগুলোর জীর্ণদশা। নতুন ক্যাম্পাসের ৮টি ভবনের মধ্যে ৬টিই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, মাঝারি মাত্রায় বা অতিমাত্রায় ভূমিকম্প হলে দেখা দিতে পারে বড় বিপর্যয়। ক্লাস চলাকালীন দুর্ঘটনার শিকার হলে ঘটতে পারে অনেক প্রাণহানির ঘটনা।

সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ভেঙে পড়া ভীম, খসে পড়া ছাদের পলেস্তারা, দেবে যাওয়া দেয়াল, ভাঙা জানালার কাচ, শেওলায় ঢেকে থাকা পরিত্যক্ত কক্ষ। বিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগের প্রায় সব কক্ষেই রড পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে। কোথাও কোথাও জোড়াতালি দিয়ে সেই রড ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে কক্ষজুড়ে জমে থাকে পানি; পচে ওঠা দেয়াল থেকে খসে পড়ে প্লাস্টার।

শিক্ষার্থীরা বলছে, ক্লাস চলাকালীন একাধিকবার ভীমের অংশ খসে পড়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন শিক্ষকরা। শৌচাগারগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী। গত পাঁচ বছর ধরে চলছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেই শিক্ষা কার্যক্রম।

১৯৬৩ সালে একাদশ শ্রেণির মাধ্যমে শুরু হওয়া কলেজটি ১৯৬৮ সালে জাতীয়করণ হয়। নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ছয়টি ভবন আজ ৩৫ বছর বা তিন দশক পেরিয়ে গেলেও হয়নি কোনো সংস্কার। সাম্প্রতিক বছরেও নির্মাণ হওয়া দুই ভবন ছাড়া বাকিগুলো নড়বড়ে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

প্রশাসন বলছে, ভবন উন্নয়ন ও ক্যাম্পাস আধুনিকায়ন নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে চিঠি চালাচালি হয়েছে, তবে কাজ শুরু হতে সময় লাগবে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভবনগুলো বর্ষায় সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ক্লাসের মধ্যে পানি পড়ে, প্লাস্টার খসে পড়ে। কখন কোন ভীম ভেঙে পড়বে বুঝতে পারি না। জীবনের ঝুঁকি জেনেও তার ক্লাস করছেন।

তাদের অভিযোগ, ভবনগুলোর অবস্থা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একই রকম। তবুও মিলছে না স্থায়ী সমাধান।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, “পুরাতন ভবন সংস্কার, নতুন ভবন নির্মাণসহ ক্যাম্পাসকে আধুনিকায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

নোয়াখালী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার নাজমুল ইসলাম বলেন, “অনার্স ক্যাম্পাসে নতুন ভবন নির্মাণ ও আধুনিকায়নের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। অনুমোদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোয়াখালী সরকারি কলেজ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। লক্ষ্মীপুর ও ফেনী থেকেও অনেক শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। ভবন সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে তারা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে। তা ছাড়া, দ্রুত সংস্কার না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বড় কোনো বিপর্যের আগেই পুরাতন ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

ঢাকা/সুমাইয়া/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ