বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও জাতি গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের প্রশংসা করে দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের ত্যাগ ও নিষ্ঠাকে দৃষ্টান্তমূলক বলে বর্ণনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি) ২০২৫-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

আরো পড়ুন:

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিলেন তিন বাহিনী প্রধান

আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পেশাদার সেনাবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় সেনাপ্রধানের

বাসস লিখেছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। 

জাতীয় নিরাপত্তা, অগ্রগতি, জাতি গঠন এবং সংকটকালে জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের প্রশংসা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মহামারির মতো সংকটে সশস্ত্র বাহিনীর অব্যাহত প্রচেষ্টা দেশের জনগণের কল্যাণে তাদের প্রস্তুতি ও অটল নিষ্ঠার প্রমাণ বহন করে।”

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তিতে অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই অংশগ্রহণ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি বাড়িয়েছে।

আগামী নির্বাচনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমাদের জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে সত্যিই একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে। এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে না, বরং শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করবে। ভোটাররা যখন ভোট দিতে বের হবেন, তা উৎসবমুখর হবে এবং জাতি গর্বের সঙ্গে স্মরণ করবে যে তারা দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে অংশ নিয়েছেন।”

প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যের শুরুতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, “এটি একটি বিশেষ মাস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক বিজয়ের মাস। আমরা সকলেই গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি সেই বীরদের, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ ছাড়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আত্মত্যাগকে আমরা স্মরণ করি, যারা দেশের মুক্তির সংগ্রামে অবদান রেখেছেন।”

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গ করা সকল শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সম্ভব করা সকল শিক্ষার্থী ও দেশবাসীর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা, যারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সঙ্গে জীবন উৎসর্গ করেছেন ও আহত হয়েছেন।”

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় তিনি দেশবাসীকে দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানের এই আনন্দময় মুহূর্তে আসুন আমরা সকল বাংলাদেশির সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।”

স্নাতক সম্পন্ন করা অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজকের গ্র্যাজুয়েশন আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করা সত্যিই একটি বড় অর্জন।”

“এটি আপনার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত। এই অর্জন বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের প্রতিফলন। এখন আপনি উচ্চতর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, যা আপনাকে জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্র পরিচালনা, নীতি নির্ধারণ, কৌশল প্রণয়ন এবং জাতীয় উন্নয়নের জটিলতাগুলো বোঝার ক্ষমতা প্রদান করবে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা। 

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কলেজটি এমন নেতৃবৃন্দ গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যারা জটিল ও ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেকে নিবেদিত করতে সক্ষম হবেন।

তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা এমন এক এক সময়ে আছি যখন অর্থনৈতিক কেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব এশিয়ার দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, বাংলাদেশ এমন একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে যা অসাধারণ সুযোগ প্রদান করে। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য এই অনন্য ভূ-রাজনৈতিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স একটি কৌশলগত স্তরের কোর্স, যা অংশগ্রহণকারীদের জাতীয় নিরাপত্তা বোঝার, বিশ্লেষণ এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম এবং নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।”

“আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স কৌশলগত ও অপারেশনাল স্তরের ওপর কাজ করে এবং কৌশলগত ও ট্যাকটিক্যাল স্তরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়ক। এই কোর্স চলাকালীন, আপনি বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যেমন সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাইবার হুমকি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিশ্লেষণে যুক্ত হয়ে পড়েছেন,” যোগ করেন অধ্যাপক ইউনূস। 

বিদেশি গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি আশা করি, এখানে আপনার সময়কালে আপনি এমন বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন যা দিগন্ত বিস্তারী যা আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরতর বোঝাপড়া তৈরি করে।”

তিনি আরো বলেন, “আপনাদের উপস্থিতি আমাদের প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেছে এবং আমি বিশ্বাস করি, আপনারা আপনার নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করবেন। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও মজবুত করবেন। আমি আপনাদের আগামীর জন্য সফলতা কামনা করছি।”

এনডিসির অবদানের প্রশংসা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে এনডিসি কেবল সামরিক ক্ষেত্রে নয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতি বছর বেসরকারি প্রশাসন,পররাষ্ট্র ক্যাডার, পুলিশ, আর্মি ও বিডিপির উঁচু পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এনডিসি কোর্সে অংশগ্রহণ করা আমাকে অত্যন্ত আনন্দ দেয়।”

বিদেশি কর্মকর্তাসহ কোর্সটি চিন্তাধারা বিনিময়, বন্ধুত্ব সৃষ্টি এবং বোঝাপড়া সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য অসাধারণ সুযোগ প্রদান করে বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি কমান্ড্যান্ট, শিক্ষক ও স্টাফদের আন্তরিক প্রশংসা জানাই, যারা ২০২৫ সালের এনডিসি কোর্স এবং সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধ কোর্সটি উৎকর্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন।”

অধ্যাপক ইউনূস কোর্সে অবদান রাখার জন্য রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স পার্সন এবং বিশেষ বক্তাদের প্রশংসা জানিয়ে বলেন, “আমি সেই দেশের সমর্থনকেও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করি, যারা স্টাডি ট্যুরের আয়োজন করেছে, যা এই কোর্সের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

“ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী যে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ তার মূলমন্ত্র ‘সুরক্ষা থেকে জ্ঞান’ বজায় রাখবে। এই প্রচেষ্টা আপনাদের নতুন ভূমিকা গ্রহণের সময় প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ধারণে পথ দেখাবে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জটিলতা মোকাবিলায় সহায়ক হবে,” যোগ করেন তিনি। 

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সশস ত র ব হ ন র অবদ ন র ক শলগত আম দ র কর ছ ন র জন য অন ষ ঠ এনড স স মরণ গ রহণ আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখলের দাবি রাশিয়ার

পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। শহরটি ইউক্রেন থেকে দনবাস অঞ্চলের প্রবেশদ্বারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ একটি লজিস্টিক হাব হিসেবেও পরিচিত। দীর্ঘদিনের লড়াই শেষে রুশ বাহিনী এই দাবি করল।

রবিবার (২ ডিসেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ওই শহর ও হাবটিতে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র লড়াই চলছিল। এটির দখল নিতে রাশিয়ার অনেক সেনা নিহত ও আহত হয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনের অসংখ্য সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা: রাশিয়ার ২ ট্যাংকারে আগুন

কিয়েভের আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার ড্রোন হামলা

যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন ও ইউক্রেনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি দখলের দাবি করে ক্রেমলিন। 

সোমবার (১ ডিসেম্বর) টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে পোকরোভস্ক শহর দখলের তথ্য জানায় ক্রেমলিন। রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে উদ্ধৃত করে পোস্টে আরো বলা হয়, খারকিভ অঞ্চলের ভভচানস্ক শহরটিও রুশ বাহিনী দখল করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস-এর খবর অনুসারে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রবিবার গভীর রাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফ্রন্টলাইনের একটি কমান্ড সেন্টার পরিদর্শন করার সময় ‘মুক্তির’ খবরটি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন পেরাসিমভ। 

পোকরোভস্ক দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি বড় পরিবহন কেন্দ্র। পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি রাশিয়া নিজেদের দখলে নিয়েছে বলে দাবি করেছে।

একসময় ৬০ হাজার মানুষের বাসস্থান এই শহরটিতে দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ান ড্রোন, কামান ও বোমাবর্ষণ ফলে অনেক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেন এখনও রাশিয়ার শহর দখলের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তবে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মস্কো পোকরোভস্কের রাস্তায় সৈন্যদের মিছিল করে রাশিয়ার পতাকা উড়িয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করেছে।

রুশ বার্তা সংস্থা তাস-এর খবর অনুসারে, পুতিন পরে রাশিয়ান বাহিনীকে তাদের বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হবিগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী বদল, মনোনয়ন পেলেন সাংবাদিক অলিউল্লাহ
  • ইউক্রেন চুক্তি চূড়ান্ত করতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প
  • ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখলের দাবি রাশিয়ার