অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিসহ ভারতীয় ৪ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আবার পেছাল
Published: 3rd, December 2025 GMT
অনুপ্রবেশের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে মুক্ত অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিসহ চার ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে আজ বুধবার আদালতে অভিযোগ গঠনের দিন ছিল। তবে আজ শুনানি হয়নি।
২৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (তৃতীয়) বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম। এ নিয়ে তিনবার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানো হলো।
আরও পড়ুনএখনই দেশে ফিরতে পারছেন না বিএসএফের পুশ ইন করা ভারতীয় ৬ নাগরিক২৪ অক্টোবর ২০২৫আসামিপক্ষের আইনজীবী একরামুল হক জানান, গত সোমবার আসামিরা আদালত থেকে জামিন পান। এদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তির দেড় ঘণ্টা পর আবারও ছয় ভারতীয় নাগরিককে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে সবাইকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় এক জিম্মাদারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ছয়জনের মধ্যে দুটি শিশু আছে, তাই তাদের আসামি করা হয়নি। তিনি জানান, আজ আদালতে তিন আসামি হাজির হয়েছিলেন।
ছয় ভারতীয় নাগরিক হলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার ধিতোরা গ্রামের দানিশ শেখ (২৮), তাঁর স্ত্রী সোনালি বিবি (২৬), তাঁদের ৮ বছর বয়সী ছেলে এবং সুইটি বিবি (৩৩) ও তাঁর ১৬ ও ৬ বছর বয়সী ছেলে। তাঁদের মধ্যে সোনালি বিবি অন্তঃসত্ত্বা। আত্মীয়তার সূত্রে তাঁদের জিম্মাদার হয়েছেন ফারুক হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি জানান, ভারতীয় নাগরিকেরা এখন ভালো আছেন।
আসামিদের জিম্মায় দেওয়ার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন আকন্দ জানিয়েছিলেন, স্থানীয় ফারুক হোসেনের কাছে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়। তবে তাঁরা ২৪ ঘণ্টা পুলিশের পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকবেন। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ১০ দিন পরপর তাঁদের অবস্থান বিষয়ে আদালতে লিখিত প্রতিবেদন দিতে হবে জিম্মাদারকে।
পুলিশ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই ভারতীয় নাগরিকেরা দিল্লিতে কাগজ কুড়ানোর কাজ করতেন। দিল্লি পুলিশ তাঁদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মাধ্যমে কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক হলে তাঁদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ আইনে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
ভারতীয় নাগরিক হওয়ার যাবতীয় প্রমাণ সাপেক্ষে প্রথমে ভারতের কলকাতা হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্ট সোনালি বিবিদের ফেরত আনার নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার তেমন উদ্যোগী হচ্ছিল না।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মানবিক কারণে সোনালি বিবিদের দ্রুত ফেরত আনার নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্তর এজলাসে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন সোনালি বিবি ও তাঁর ছেলেকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিচ্ছে ভারত৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
এবার নিজ দলের কর্মীর মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হক
নিজ দল আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) এক কর্মীর করা চাঁদাবাজির মামলায় শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পৃথক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দিন আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
আজ সকালে মোজাম্মেল হককে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে তাঁকে লিফটে চড়িয়ে আদালত ভবনের নবম তলায় ওঠানো হয়। এ সময় তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরানো ছিল। দুই পাশে ছিল ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্যের বেষ্টনী। সামনে লাঠি, ঢালসহ ছিলেন ৫ জন পুলিশ সদস্য।
আদালতকক্ষে কাঠগড়ায় ওঠানোর আগে মোজাম্মেল হকের হেলমেট খুলে রাখা হয়। ঘড়িতে তখন ১১টা ৩৫ মিনিট। বাদীপক্ষের করা গ্রেপ্তার আবেদনের শুনানি শুরু হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেনসহ অন্যরা জামিনের আবেদন করেন। তখন কাঠগড়ার সামনের অংশে সরে আসেন মোজাম্মেল হক। মনোযোগ দিয়ে শুনানি শোনেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা মিথ্যা। হয়রানি করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০১৪ সালের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে ২০২৪ সালে এসে। এ মামলার বাদী আর আসামি একই দলের, একই এলাকার। কমিটিতে পদ না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোজাম্মেল হকের আইনজীবীরা আরও বলেন, মোজাম্মেল হক ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতা। ঢাকা শহরে তাঁর কোনো ফ্ল্যাট-প্লট কিছুই নেই। কোনো আমলেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। তাঁর বয়স ৬৮ বছর। তিনি অসুস্থ। তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য।
আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এ মামলার বাদী বাংলাদেশ অক্সাইড–বেজ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মো. খলিলুর রহমান। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়। আজ আদালতে শুনানি চলার সময় খলিলুরকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী।
আরও পড়ুনসাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক গ্রেপ্তার০৫ অক্টোবর ২০২৫মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতা বি এম মোজাম্মেল হক ভুক্তভোগী খলিলুর রহমানকে রাজধানীর ধানমন্ডির অফিসে ডেকে নেন। নির্বাচনের খরচ হিসেবে তাঁর কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা পরিশোধের জন্য তাঁকে তিন দিনের সময় দেওয়া হয়। পরিশোধ করা না হলে খলিলুরকে গুম করার হুমকিও দেওয়া হয়।
পরে নির্বাচনের সময় নিজ এলাকা শরীয়তপুরে খলিলুরের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক সমিতির কাছে নানা অভিযোগ ও হুমকি দেওয়া হয়। এসব করে তাঁর ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করেছেন খলিলুর।
রাজধানীর নিকেতন থেকে বি এম মোজাম্মেল হককে গত ৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তখন থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
তখন ডিএমপি জানিয়েছিল, বি এম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন–সংক্রান্ত একটি হত্যা মামলা ছাড়াও ঢাকা মহানগর এলাকায় আরও আটটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুনগণ–অভ্যুত্থানে হত্যার মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল কারাগারে০৬ অক্টোবর ২০২৫