আটটি বাচ্চা হারিয়ে মন খারাপ ছিল মা কুকুর টমের। ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের আশপাশে খুঁজে ফিরছিল বাচ্চাদের। দুধ সেবন করার ছানাগুলো না থাকায় স্তন ফুলে গিয়েছিল।

আট বাচ্চা হারালেও নতুন দুই বাচ্চা পেয়েছে টম। এতে ব্যথা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। অন্য একটি কুকুরের জন্ম দেওয়া কয়েকটি বাচ্চা থেকে দুটি সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে টমকে। দুটি ছানা পেয়ে স্বস্তি দেখা গেছে মা কুকুরটির চোখে-মুখে।

দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের কোণায় থাকে একটি কুকুর। সেটির নাম দেওয়া হয় টম। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ছানাগুলো দেখতে না পেয়ে ছুটাছুটি করতে দেখা যায় টমকে। পরে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীরা জানতে পারে, আটটি কুকুর ছানাকে বস্তায় ভরে মুখ বেঁধে গত রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে উপজেলা পরিষদের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সকালে মৃত কুকুর ছানাগুলো পাওয়া যায়।

বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে কুকুরছানা দুটি সংগ্রহ করেন সামাজিক সংগঠন ঈশ্বরদীয়ানের মুখপাত্র শাহরিয়ার অমিত ও তার বন্ধুরা। পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছানা দুটি মা কুকুর টমের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ছানা দুটি মা কুকুর টমের দুধ সেবন শুরু করে। ছানা দুটিকে আপন করে নেয় টম। 

এ সময় সেখানে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

মনিরুজ্জামান, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবকরা উপস্থিত ছিলেন।

সামাজিক সংগঠন ঈশ্বরদীয়ানের মুখপাত্র শাহরিয়ার অমিত বলেন, ‘‘অন্য একটা কুকুরের, যেটির অনেকগুলো ছানা আছে; সেখান থেকে দুটি ছানা এনে টমকে দেওয়া হয়েছে। যাতে বাচ্চা হারানোর ব্যথা কিছুটা হলেও টম ভুলতে পারে।’’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘নতুন বাচ্চা পেয়ে মা কুকুরের চোখে-মুখে স্বস্তি দেখেছি। বাচ্চা দুটিকে মা কুকুরটি আপন করে নিয়েছে দেখে আমাদেরও ভালো লাগছে।’’ 

ঢাকা/শাহীন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা চান বিনিয়োগকারীরা

বেসরকারি পর্যায়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রির জন্য সরকার সম্প্রতি মার্চেন্ট পাওয়ার পলিসি (এমপিপি) অনুমোদন করেছে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে এবং গ্রাহকেরা সরাসরি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারবে।

তবে এই নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও ক্রেতারা (গ্রাহক)। তাঁরা বলছেন, নীতি অনুমোদন হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক চূড়ান্ত করা বাকি রয়েছে। বিশেষ করে হুইলিং চার্জ (প্রক্রিয়াগত মাশুল), গ্রিড লস হিসাব, বিতর্ক নিষ্পত্তিপ্রক্রিয়া ও প্রণোদনা–সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা বা নীতিমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আজ বুধবার রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। নর্ডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআই) বাংলাদেশ এবং ঢাকায় নরওয়ে দূতাবাস যৌথভাবে সভার আয়োজন করে।

সভায় বক্তারা বলেন, এমপিপি চালু হলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। এখানে সরকারের সঙ্গে প্রচলিত পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) করার প্রয়োজন হবে না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নর্ডিক চেম্বারের সভাপতি তানভীর মোহাম্মদ বলেন, এমপিপি কাঠামো বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ রূপান্তরের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে যাচ্ছে। পরিকল্পিত এমপিপি কাঠামো করা গেলে তা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্চেন্ট পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বাস্তবায়ন পরিবেশের পাশাপাশি টেকসই অর্থনৈতিক রূপান্তরেও ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে নির্ধারিত প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম, গ্রামীণফোনের প্রধান ইএসজি (পরিবেশ, সামাজিক ও প্রশাসন) কর্মকর্তা ফারহানা ইসলাম, এইচঅ্যান্ডএমের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার শায়ান শাফি, আইএফসির অপারেশন অফিসার সায়েফ তানজীম কায়িউম, প্যারামাউন্ট সোলারের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা। সঞ্চালনা করেন জিআইজেড বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বেসরকারি খাত উন্নয়ন উপদেষ্টা কাজী আহসান উদ্দিন।

প্যানেল আলোচনায় গ্রামীণফোনের এনভায়রনমেন্ট, সোশ্যাল ও গভর্ন্যান্স (ইএসজি) বিভাগের প্রধান ফারহানা ইসলাম বলেন, গ্রামীণফোন ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ফুটপ্রিন্ট ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভালো মাধ্যম হতে পারে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো বৃহৎ পরিসরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ কম। যদিও এমপিপি হওয়ায় সরাসরি বিদ্যুৎ কেনার পথ খুলেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হুইলিং চার্জ, গ্রিড লসের হিসাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ঠীকরণ প্রয়োজন।

এইচঅ্যান্ডএমের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার শায়ান শাফি বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য সরবরাহকারীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোর মানদণ্ড মেনে চলতে হয়। এ জন্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সহজলভ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমপিপি কাঠামোর মাধ্যমে সম্ভব। এমপিপি কার্যকর হলে আমরা আরও বড় পরিসরে বাংলাদেশি পণ্য বাজারে প্রবেশের সুযোগ নিতে পারব।’

আইএফসির অপারেশনস অফিসার সায়েফ তানজীম কাইয়ুম বলেন, ‘ভারতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম। ফলে অনেক ব্র্যান্ড সে দেশে সোর্সিং বাড়াচ্ছে। আমরা চাই না এর প্রভাব বাংলাদেশি বস্ত্র খাতের ওপর পড়ুক। এমপিপি বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখার বড় সুযোগ। একই সঙ্গে গ্রামীণফোনসহ যেসব কোম্পানি তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য ঘোষণা করেছে, তাদের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।’

প্যারামাউন্ট সোলারের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এমপিপি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন একটি ধারণা। এতে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। তাই এখনই আমরা কী কী সুযোগ আছে তা স্পষ্টভাবে বলতে পারি না। প্রথমে আমাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। এমপিপি প্রকল্প তখনই সফল হবে, যখন আমরা প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে পারব।’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, এমপিপি বাস্তবায়নে বিনিয়োগকারীর প্রধান দায়িত্ব হলো বড় বা বাল্ক গ্রাহক খুঁজে বের করা। তবে পাশাপাশি যদি তারা উৎপাদিত বিদ্যুতের ২০ শতাংশ বিপিডিবিকে দিতে চায়, সেটির ব্যবস্থাও নীতিতে রয়েছে।

রেজাউল করিম আরও বলেন, হুইলিং চার্জ নিয়ে যেটা বলা হয়, তা কোনো বড় বাধা হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ইতিমধ্যে একটি হুইলিং চার্জ ঠিক করেছে। ভবিষ্যতে যদি সামান্য কমানো বা বাড়ানো হয়, সেটি বেসরকারি প্রকল্পের জন্য বড় বোঝা হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ