‘নিদ্রালু মফস্সল শহর’ ও রংপুর
Published: 19th, November 2025 GMT
১৯০১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, ‘বাংলার সাধারণ শহরগুলি বেশির ভাগই নামে মাত্রই শহর, মফস্বলের মিউনিসিপ্যালটি, যেগুলি শহর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, হয় অতিকায়ভাবে বেড়ে উঠা গ্রাম আর না হলে নিদেনপক্ষে তাদের শহরতলির বেশির ভাগ জায়গাতেই গ্রাম্য অবস্থা বিরাজ করছে।’ [এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা (৪)]
ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ জানাচ্ছেন, ১৯২০–এর দশকে কলকাতা ও ঢাকা ছাড়া বাংলার অন্য শহরগুলোকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে একটি বলা হয় স্লিপি কান্ট্রি টাউন বা নিদ্রালু মফস্সল শহর। এসব শহরের তেমন কোনো উৎপাদন বা শিল্প ছিল না। তবে তাদের কিছুটা বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল। এগুলো কাপড়, লবণ, কেরোসিন তেল ইত্যাদির বিতরণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। (এশিয়াটিক সোসাইটি, নগরায়ণ এবং নগর সংস্কৃতি প্রবন্ধ)
দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ শহর রংপুর। ১৮৬৯ সালে রংপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। রংপুর পৌরসভার আয়তন ছিল ৫০ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ডসংখ্যা ছিল ১৫। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সিটি করপোরেশনের আয়তন ২০৫ দশমিক শূন্য ৯ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ডসংখ্যা ৩৩। ৭টি ইউনিয়ন, যথা উত্তম, পরশুরাম, তামপাট, তপোধন, রাজেন্দ্রপুর, সাতগাড়া ও দর্শনা নতুন ঘোষিত সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।
আয়তনে দেশের দ্বিতীয় বড় রংপুর সিটির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৩৩টি ওয়ার্ডের বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ড এখনো গ্রামীণ অবস্থায় আছে। সিটি করপোরেশনের ১ হাজার ৪২৭ রাস্তার মধ্যে ৫০৪ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা এখনো মাটির ও সরু। মাটির রাস্তা হওয়ায় বর্ষাকালে চলাচলে খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। পিচঢালাই ৪১৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ৩৪০ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নতুন সম্প্রসারিত এলাকায় কোনো পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা নেই। ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।
একটি আদর্শ শহর কেমন হবে, তা নির্ভর করে তার পরিকল্পনার ওপর। লে কর্বুযিয়ে (Le Corbusier), যিনি আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের একজন পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত, তাঁর পরিকল্পনার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ছিল—উন্মুক্ত জনপরিসর ও চত্বর, রাজপথের পাশে সারি সারি বড় গাছ, এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা, রাস্তার শ্রেণিবিভাগ, প্রধান প্রশাসনিক ভবন, সবুজ এলাকা ইত্যাদি। তাঁর মতে, মানুষের জীবনে খাদ্য ও আশ্রয়ের যেমন প্রয়োজন, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো স্পেস, আলো ও নিয়মশৃঙ্খলা।
কিন্তু রংপুর সিটি করপোরেশনের গতিমুখ তার উল্টো দিকে। রংপুরে নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করা হয়নি ১৩ বছরেও। শুরুর দিকে একটি মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) করা হলেও সেটিও অনুমোদিত নয়। ফলে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকা গড়ে উঠেছে যার যার ‘খেয়ালখুশি’মতো। ‘বাংলাদেশের বিলুপ্ত দীঘি-পুষ্করিণী-জলাশয়’ গ্রন্থের লেখক মাহবুব সিদ্দিকী ২০১৫ সালে লেখেন, বিগত তিন দশকের মধ্যে রংপুর শহরে ৩০টি পুকুর ও দিঘি ভরাট হয়ে গেছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের নগর–পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম সম্প্রতি এই লেখককে বলছিলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যান নেই, জনবল নেই, বলা হচ্ছে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হবে। তা–ও হচ্ছে না। যার কারণে এই শহরে আমরা সন্তুষ্ট নই। এই শহর বাঁচানোর জন্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অতীব জরুরি। নইলে এই শহর অচিরেই পুরান ঢাকার মতো অবস্থা ধারণ করবে।’
অর্থাৎ ৪০০ বছর পরের রংপুর শহর ৪০০ বছর আগের শহরের দিকে যাচ্ছে। এর দায় কার? এ অবস্থার জন্য সরকার, মেয়র, কাউন্সিলর, প্রশাসক, প্রকৌশলী, নগর–পরিকল্পনাবিদ কেন দায় নেবেন না?
২.রংপুরের কথা উঠলে আসে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা। রংপুর সিটি করপোরেশনও এর বাইরে নয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) রংপুর সিটিকে এক টাকাও দেয়নি ক্ষমতাচ্যুত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারও সে ধারা অব্যাহত রাখল।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে এডিবির বরাদ্দ তালিকায় দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের নাম আছে, শুধু রংপুরের নাম নেই। এ জন্য এবারের বাজেট ঘোষণার পর রংপুর সিটি করপোরেশনের নামের ওপরে ‘জিরো বাজেট সিটি করপোরেশন’ নাম দিয়ে ব্যানার সাঁটিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। রংপুরের প্রতি বৈষম্য করা—এটা কি কোনো জিনগত বৈশিষ্ট্য?
কথা ছিল, রংপুর হবে ১ নম্বর জেলা। এ কথা গণ-অভ্যুত্থানে সরকার গঠনের পর ১০ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ আবু সাঈদের জেলা রংপুরে এসে অঙ্গীকার করেন। রংপুরের মানুষের আশা ছিল শিল্পকারখানা হবে। কর্মসংস্থান হবে। অথচ জেলার ভারী শিল্প বলতে একমাত্র শ্যামপুর চিনিকল, সেটাও চালু হলো না।
ফলে কৃষিছাড়া মানুষ, নদীভাঙা কৃষক, শিক্ষিত বেকার যুবক উপায়হীন হয়ে শহরে এসে ইজিবাইক অথবা রিকশা হাতে নিয়ে তুলে নিচ্ছেন। এটাকে শুধু যানজটের সংজ্ঞায় ফেলে সমাধান করা যাবে না। এর মূলে যেতে হবে। সেই মূল হলো দীর্ঘদিনের বৈষম্য, কর্মসংস্থানের সংকট।
রংপুর সিটির জন্য এখন পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। ইমারত নির্মাণ বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ ও খেয়ালখুশির উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে। এখনো প্রতিটি ওয়ার্ড ধরে পরিকল্পনা করে আবাসিক এলাকা, খেলার মাঠ, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনকেন্দ্র, হাসপাতাল, পর্যাপ্ত সড়ক ও উন্মুক্ত জনপরিসর করা হলে রংপুরকে বাঁচানো সম্ভব।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঘাঘট নদ, শ্যামাসুন্দরী, কে ডি খাল ও খোকসা-ঘাঘট খালকে জীবন্ত সত্তায় ফিরিয়ে এনে রংপুর শহরে আধুনিক স্থাপত্যে উদ্ভব ঘটানো যেতে পারে। এ জন্য আধুনিক স্থাপত্যধারার সঙ্গে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ভূগোল, কারিগরি বিদ্যা, জলবায়ু, নির্মাণসামগ্রী, এমনকি দার্শনিক চিন্তাধারা—সব একযোগে যুক্ত করতে হবে।
জহির রায়হান প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক
[email protected]
*মতামত লেখক
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘নিদ্রালু মফস্সল শহর’ ও রংপুর
১৯০১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, ‘বাংলার সাধারণ শহরগুলি বেশির ভাগই নামে মাত্রই শহর, মফস্বলের মিউনিসিপ্যালটি, যেগুলি শহর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, হয় অতিকায়ভাবে বেড়ে উঠা গ্রাম আর না হলে নিদেনপক্ষে তাদের শহরতলির বেশির ভাগ জায়গাতেই গ্রাম্য অবস্থা বিরাজ করছে।’ [এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা (৪)]
ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ জানাচ্ছেন, ১৯২০–এর দশকে কলকাতা ও ঢাকা ছাড়া বাংলার অন্য শহরগুলোকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে একটি বলা হয় স্লিপি কান্ট্রি টাউন বা নিদ্রালু মফস্সল শহর। এসব শহরের তেমন কোনো উৎপাদন বা শিল্প ছিল না। তবে তাদের কিছুটা বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল। এগুলো কাপড়, লবণ, কেরোসিন তেল ইত্যাদির বিতরণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। (এশিয়াটিক সোসাইটি, নগরায়ণ এবং নগর সংস্কৃতি প্রবন্ধ)
দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ শহর রংপুর। ১৮৬৯ সালে রংপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। রংপুর পৌরসভার আয়তন ছিল ৫০ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ডসংখ্যা ছিল ১৫। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সিটি করপোরেশনের আয়তন ২০৫ দশমিক শূন্য ৯ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ডসংখ্যা ৩৩। ৭টি ইউনিয়ন, যথা উত্তম, পরশুরাম, তামপাট, তপোধন, রাজেন্দ্রপুর, সাতগাড়া ও দর্শনা নতুন ঘোষিত সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।
আয়তনে দেশের দ্বিতীয় বড় রংপুর সিটির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৩৩টি ওয়ার্ডের বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ড এখনো গ্রামীণ অবস্থায় আছে। সিটি করপোরেশনের ১ হাজার ৪২৭ রাস্তার মধ্যে ৫০৪ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা এখনো মাটির ও সরু। মাটির রাস্তা হওয়ায় বর্ষাকালে চলাচলে খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। পিচঢালাই ৪১৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ৩৪০ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নতুন সম্প্রসারিত এলাকায় কোনো পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা নেই। ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।
একটি আদর্শ শহর কেমন হবে, তা নির্ভর করে তার পরিকল্পনার ওপর। লে কর্বুযিয়ে (Le Corbusier), যিনি আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের একজন পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত, তাঁর পরিকল্পনার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ছিল—উন্মুক্ত জনপরিসর ও চত্বর, রাজপথের পাশে সারি সারি বড় গাছ, এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা, রাস্তার শ্রেণিবিভাগ, প্রধান প্রশাসনিক ভবন, সবুজ এলাকা ইত্যাদি। তাঁর মতে, মানুষের জীবনে খাদ্য ও আশ্রয়ের যেমন প্রয়োজন, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো স্পেস, আলো ও নিয়মশৃঙ্খলা।
কিন্তু রংপুর সিটি করপোরেশনের গতিমুখ তার উল্টো দিকে। রংপুরে নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করা হয়নি ১৩ বছরেও। শুরুর দিকে একটি মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) করা হলেও সেটিও অনুমোদিত নয়। ফলে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকা গড়ে উঠেছে যার যার ‘খেয়ালখুশি’মতো। ‘বাংলাদেশের বিলুপ্ত দীঘি-পুষ্করিণী-জলাশয়’ গ্রন্থের লেখক মাহবুব সিদ্দিকী ২০১৫ সালে লেখেন, বিগত তিন দশকের মধ্যে রংপুর শহরে ৩০টি পুকুর ও দিঘি ভরাট হয়ে গেছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের নগর–পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম সম্প্রতি এই লেখককে বলছিলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যান নেই, জনবল নেই, বলা হচ্ছে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হবে। তা–ও হচ্ছে না। যার কারণে এই শহরে আমরা সন্তুষ্ট নই। এই শহর বাঁচানোর জন্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অতীব জরুরি। নইলে এই শহর অচিরেই পুরান ঢাকার মতো অবস্থা ধারণ করবে।’
অর্থাৎ ৪০০ বছর পরের রংপুর শহর ৪০০ বছর আগের শহরের দিকে যাচ্ছে। এর দায় কার? এ অবস্থার জন্য সরকার, মেয়র, কাউন্সিলর, প্রশাসক, প্রকৌশলী, নগর–পরিকল্পনাবিদ কেন দায় নেবেন না?
২.রংপুরের কথা উঠলে আসে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা। রংপুর সিটি করপোরেশনও এর বাইরে নয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) রংপুর সিটিকে এক টাকাও দেয়নি ক্ষমতাচ্যুত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারও সে ধারা অব্যাহত রাখল।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে এডিবির বরাদ্দ তালিকায় দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের নাম আছে, শুধু রংপুরের নাম নেই। এ জন্য এবারের বাজেট ঘোষণার পর রংপুর সিটি করপোরেশনের নামের ওপরে ‘জিরো বাজেট সিটি করপোরেশন’ নাম দিয়ে ব্যানার সাঁটিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। রংপুরের প্রতি বৈষম্য করা—এটা কি কোনো জিনগত বৈশিষ্ট্য?
কথা ছিল, রংপুর হবে ১ নম্বর জেলা। এ কথা গণ-অভ্যুত্থানে সরকার গঠনের পর ১০ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ আবু সাঈদের জেলা রংপুরে এসে অঙ্গীকার করেন। রংপুরের মানুষের আশা ছিল শিল্পকারখানা হবে। কর্মসংস্থান হবে। অথচ জেলার ভারী শিল্প বলতে একমাত্র শ্যামপুর চিনিকল, সেটাও চালু হলো না।
ফলে কৃষিছাড়া মানুষ, নদীভাঙা কৃষক, শিক্ষিত বেকার যুবক উপায়হীন হয়ে শহরে এসে ইজিবাইক অথবা রিকশা হাতে নিয়ে তুলে নিচ্ছেন। এটাকে শুধু যানজটের সংজ্ঞায় ফেলে সমাধান করা যাবে না। এর মূলে যেতে হবে। সেই মূল হলো দীর্ঘদিনের বৈষম্য, কর্মসংস্থানের সংকট।
রংপুর সিটির জন্য এখন পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। ইমারত নির্মাণ বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ ও খেয়ালখুশির উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে। এখনো প্রতিটি ওয়ার্ড ধরে পরিকল্পনা করে আবাসিক এলাকা, খেলার মাঠ, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনকেন্দ্র, হাসপাতাল, পর্যাপ্ত সড়ক ও উন্মুক্ত জনপরিসর করা হলে রংপুরকে বাঁচানো সম্ভব।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঘাঘট নদ, শ্যামাসুন্দরী, কে ডি খাল ও খোকসা-ঘাঘট খালকে জীবন্ত সত্তায় ফিরিয়ে এনে রংপুর শহরে আধুনিক স্থাপত্যে উদ্ভব ঘটানো যেতে পারে। এ জন্য আধুনিক স্থাপত্যধারার সঙ্গে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ভূগোল, কারিগরি বিদ্যা, জলবায়ু, নির্মাণসামগ্রী, এমনকি দার্শনিক চিন্তাধারা—সব একযোগে যুক্ত করতে হবে।
জহির রায়হান প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক
[email protected]
*মতামত লেখক