ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে পিকনিকের কথা বলে ডেকে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকালে এসব তথ্য দিয়েছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম সুমন।

আরো পড়ুন:

কর্মবিরতি করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কড়া বার্তা

শিক্ষকদের কর্মবিরতি: ঝিনাইদহে ৪৬২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি

মঙ্গরবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ভুক্তভোগীর বোন বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।

গ্রেপ্তার করা চারজন হলেন- দেলোয়ার ভূঁইয়া (২৬), তাজুল ইসলাম তাজ (২৩), শ্রাবণ সাহা (২৩) ও অন্তু দেওয়ান (২৮)। তারা সাভারের আশুলিয়ার বেসরকারি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ওই তরুণী আশুলিয়ার একটি বেসরকারি বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি পরিবারের সঙ্গে ধামরাই পৌরসভায় বসবাস করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পিকনিকের কথা বলে ভুক্তভোগীকে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে যান দেলোয়ার, তাজ ও শ্রাবণ। যাওয়ার সময় তাকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে অচেতন করার ওষুধ খাওয়ালে কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগী অচেতন হয়ে পড়েন। বিকাল ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি ওই বাসায় তিনজনকে দেখতে পান।

মামলার বর্ণনায় বলা হয়েছে, জ্ঞান ফেরার ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন তাকে ডেকে নেওয়া তিনজন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেছে ও ঘটনার ভিডিও ও ছবি ধারণ করে। তখন তিনি প্রতিবাদ করেন। লোকজন ডাকার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। সেসময় আসামিরা তাকে হুমকি দেন। আইনগত ব্যবস্থা নিলে ধারণ করা আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ও এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেন।

ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, সামাজিকভাবে হেয় ও সম্মানহানী করার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে শুধু চুপ করিয়েই তারা ক্ষান্ত হননি; হুমকি দিয়ে কয়েক ধাপে মোট ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন আসামিরা।

এজাহারে লেখা হয়েছে, গত ৬ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে ভুক্তভোগীকে ফের আশুলিয়ার বাইশ মাইল এলাকায় আটকে ৪ নম্বর অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ানের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করতে বলেন। এতে রাজি না হলে তাকে প্রথম তিন অভিযুক্ত দেলোয়ার, তাজ ও শ্রাবণ মিলে চড়থাপ্পড়সহ মারধর করেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক নেশাজাতীয় বিষাক্ত পানীয় পান করান তারা। তাদের কবল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে সেখানেই অচেতন হয়ে পড়েন।

অচেতন অবস্থায় ভুক্তভোগীকে প্রথমে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় জানিয়ে মামলার বর্ণনায় বলা হয়েছে, অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি চিকিৎসাধীন থাকার মধ্যে তার পরিবারের এক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

ঘটনার পরম্পরায় লেখা হয়েছে, চিকিৎসার পর ভুক্তভোগী ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে গত ২৬ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে তার ওপর নিপীড়নকারীদের দেখতে পান তিনি। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা তাকে একটি কক্ষে নিয়ে দরজা আটকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেন ও নতুন জীবন শুরু করতে পরামর্শ দেন। এতে তিনি সায় না দিয়ে বের হতে গেলে তারা তাকে গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন।

আশুলিয়া থানার এসআই শফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, “এ ঘটনায় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আদালতে পাঠানো হবে।” 

আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, এটা ছিল ৪ এপ্রিলের ঘটনা। চারজনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের ১৭ ঘণ্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তাদের আদালতে পাঠানো হবে।

ঢাকা/সাব্বির/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি

সিলেটের বহুল আলোচিত রায়হান উদ্দিন হত্যা মামলার রায় আগামী ৭ জানুয়ারি ঘোষণা করবেন আদালত। রবিবার (৩০ নভেম্বর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সিলেট মহানগর দায়রা জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন। 

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নেয় পুলিশ। পরদিন সকালে তাকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। পরিবারের দাবি ছিল-পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

আরো পড়ুন:

খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন

মেহেরপুরে ১০ স্বর্ণের বার উদ্ধার, ভারতীয়সহ গ্রেপ্তার ২

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বদরুল ইসলাম বলেন, “আদালতে কারাবন্দি বহিষ্কৃত এএসআই আশেক এলাহির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর আগে, ২৬ নভেম্বর মামলার পলাতক থাকা পাঁচ আসামির যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়। আদালত আগামী ৭ জানুয়ারি রায়হান হত্যার রায় ঘোষণা করবেন বলে জানান।”

সূত্র জানায়, মামলার অন্য আসামিদের বেশির ভাগই জামিনে বের হওয়ার পর থেকে পলাতক। প্রধান আসামি বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হলেও পরবর্তীতে তাঁর জামিন স্থগিত করা হয় এবং ১০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি আদালতে হাজির না হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

নিহতের স্ত্রীর করা মামলায় গঠিত তদন্ত কমিটি রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। এরপর এসআই আকবরসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে পিবিআই তদন্ত করে মামলায় ৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় ২০২১ সালের ৫ মে।

অভিযুক্তরা হলেন- ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, এসআই হাসান উদ্দিন এবং সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।

এ মামলায় ৬৯ সাক্ষীর মধ্যে ৬৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। চার বছর পর এখন রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন রায়হানের পরিবার।

ঢাকা/রাহাত/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি