চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও মিরসরাই উপজেলার ১১ জন নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চিঠি দিয়েছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের আবেদন জানিয়ে আজ বুধবার এই চিঠি দেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক কয়েকজন নেতাও রয়েছেন।

মিরসরাই আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হয় মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনকে। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের একটি অংশের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। এর জের ধরেই এই চিঠি দেওয়া হয় বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান।

প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে পাঠানো ওই চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম ডি এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো.

নুরুল আমিন, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী, সাবেক আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন কবির, সদস্যসচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী, সদস্য জিয়াদ আমিন খান, বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মঈন উদ্দিন, সদস্যসচিব জসীম উদ্দীন, মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক জামশেদ আলম ও সদস্যসচিব কামরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মিরসরাই উপজেলায় একের পর এক বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য বহিষ্কৃত হন নুরুল আমিন। তাঁকে তড়িঘড়ি করে দলে ফিরিয়ে প্রার্থী করার বিষয়টি উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশই মেনে নিতে পারেননি। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রার্থী করলে এই আসনে বিএনপির বিজয় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই যাঁরা দলের দুঃসময়ে মাঠে থেকে আন্দোলন–সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রার্থী করার আবেদন জানানো হয়েছে।

ওমরা হজ পালন করতে দেশের বাইরে থাকায় মিরসরাই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে নুরুল আমিনের অনুসারী মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিরসরাইয়ের জননন্দিত নেতা নুরুল আমিনকে প্রার্থী করার আগেও এমন চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বিএনপি বড় দল। অনেক যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করেই নুরুল আমিনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাই আমাদের অনুরোধ, অপতৎপরতা না চালিয়ে দল যাকে প্রার্থী করেছে, তাঁকে জয়যুক্ত করতে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রসর ই উপজ ল ব এনপ র স ব ক সদস যসচ ব ন র ল আম ন আহ ব য ক উদ দ ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশুদ্ধ পানির ফিল্টারই দূষিত, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) একাডেমিক ভবনে স্থাপিত পানির ফিল্টারগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে সেগুলোতে শ্যাওলা ও ময়লার আস্তরণ জমে বিশুদ্ধ পানির এ উৎসই এখন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

একাডেমিক ভবনটিতে পাঁচটি অনুষদের ১৭টি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগে পাঠরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার।

আরো পড়ুন:

অতিরিক্ত ভিটামিন এ খেলে কী হয়

অতিরিক্ত ভিটামিন সি খেলে কী হয়

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের বিভিন্ন স্থানে থাকা ফিল্টারগুলোর ট্যাপে ও পাশের দেয়ালে সবুজ রঙের শ্যাওলা জমে রয়েছে। অনেক ফিল্টারের ট্যাপ অচল অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু ফিল্টারের ভেতরের অংশে জমে থাকা শ্যাওলা বাইরে থেকেও দৃশ্যমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বাধ্য হয়ে এই পানি পান করছেন।

ফিল্টারগুলোর গায়ে ‘একুয়া প্রো’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের লোগো ও স্টিকার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় পর কিট পরিবর্তন না করলে ফিল্টার পানি বিশুদ্ধ রাখার ক্ষমতা হারায় এবং তা ব্যবহারকারীর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।

আইন বিভাগের প্রথম সেমিস্টারে শিক্ষার্থী সাদিদ শারাফ বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হয়েছি প্রায় ৬ মাস হলো। এই সময়ে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছি, তার মধ্যে অন্যতম খাবার পানির সমস্যা। আমাদের বিভাগে পানির জন্য ফিল্টার দেওয়া থাকলেও সেগুলো ঠিকঠাকভাবে পরিষ্কার না করায় শ্যাওলা ও ময়লা জমেছে।”

তিনি বলেন, “পানি খাওয়ার সময় বাজে গন্ধ পাওয়া যায় এবং তিক্ত লাগে। প্রতিদিন বাসা থেকেও পানি আনা সম্ভব না। অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে এই পানিই পান করতে হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী ও  হেলথ ক্লাবের সদস্য মো. মইন হাসান বলেন, “পানি হলো জীবনের মূল উপাদান। কিন্তু যদি সেই পানি পরিষ্কার না থাকে। তবে সেটাই হতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। ফিল্টারে নোংরা ও শ্যাওলা জমে, পানির মান নষ্ট হয়ে যায়। পানি ঘোলা-দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে ওঠে এবং এতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু জন্মায়।”

তিনি বলেন, “এই পানির কারণে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হতে পারে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, চর্মরোগ এমনকি লিভার ও কিডনির সমস্যায়ও। কিছু সহজ পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। যেমন- ফিল্টারের মেয়াদ শেষ হলে বা কাজ না করলে নতুন ফিল্টার বসানো, নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা।”

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ আলম বলেন, “শ্যাওলা বা ময়লা জমে থাকা কোনো ফিল্টারের পানি পান করলে আপাতদৃষ্টিতে পানিবাহিত রোগ কিংবা ফুড পয়জনিংয়ের ঝুঁকি থাকে। ফিল্টারগুলো সময়মতো পরিষ্কার না করলে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়।”

তিনি বলেন, “অবশ্য সব ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর নয়, নন-প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া থাকলে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু যদি প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া থাকে, তাহলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই মাসে অন্তত এক-দুইবার পানি পরীক্ষা করা উচিত, ব্যাকটেরিয়া আছে কি না তা জানতে। পাশাপাশি ফিল্টারের নির্ধারিত ক্যাপাসিটি শেষ হলে সেটি পরিবর্তন বা পরিষ্কার করা বাধ্যতামূলক।”

এ বিষয়ে দায়িত্বরত বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ সহকারী নাজমুল হাসান বলেন, “পানির ফিল্টারগুলো ৬ মাস পর পর পরিষ্কার করা হয়। বিগত কিছুদিন আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। আমরা আজও কিছু নতুন ফিল্টার ও মটরের জন্য আবেদন করেছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করব।”

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ