পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে অনশনে ৪৭তম বিসিএস প্রিলি উত্তীর্ণদের একাংশ
Published: 19th, November 2025 GMT
৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। আজ বুধবার বিকেল চারটায় শহীদ মিনারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে তাঁরা অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা দেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
পিএসসি কেন কোনো ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে না
বিসিএসসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে থাকে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা এবং আবেদন গ্রহণ করার দায়িত্বও থাকে তাদের। মূলত প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক—এই তিন ধাপের পরীক্ষার মাধ্যমে সেরা প্রার্থী বাছাই করে তাঁদের নিয়োগের জন্য পিএসসি সুপারিশ করে।
পুরো প্রক্রিয়ায় কর্ম কমিশনের দায়িত্বশীলতা ও গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একেকটি বিসিএস পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন কোনো ক্যালেন্ডার বা সময়সূচি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
হচ্ছে না বলেই নিয়োগ প্রার্থীরা বারবার সমস্যার মুখে পড়ছেন। যেমন এ মুহূর্তে ৪৭তম বিসিএসে আবেদনকারীদের একটা বড় অংশ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ নভেম্বর। অথচ অন্যান্য বিসিএস পরীক্ষায় এ ব্যবধান চার-পাঁচ মাস কিংবা তার বেশি হতে দেখা গেছে। হঠাৎ এই বিসিএসের জন্য কেন এত তাড়াহুড়া, সেটি প্রার্থীদের বোধগম্য নয়। পিএসসিও তাঁদের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। অথচ এই প্রশ্ন তুলে তাঁরা একাধিকবার লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন!
আরও পড়ুনবিসিএস কেন তরুণদের ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠছে? ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩দেখা যাচ্ছে, ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ২৮ নভেম্বর। বিজ্ঞপ্তিতে প্রিলিমিনারি বা প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছিল এ বছরের মে মাস। পরে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৭ জুন। সেটিও পরিবর্তন করে নতুন তারিখ দেওয়া হয় ৮ আগস্ট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখ। এভাবে বারবার তারিখ বদলানোর পেছনে কিছু বাস্তব কারণও ছিল। ওই সময়ে ৪৬তম বিসিএস প্রার্থীদের পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনের কারণে লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়নি। তা ছাড়া ৪৪তম বিসিএস প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষাও তখন বাকি ছিল।
পিএসসি যদি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের সময়সূচি নির্ধারণ করে দিত এবং সেই অনুযায়ী প্রতিটি বিসিএসের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলমান রাখত, তবে নিয়োগ প্রার্থীদের আপত্তি থাকত না।দেখা যাচ্ছে, একটি বিসিএসের সঙ্গে অন্য বিসিএসের সময়সূচির সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তাই বলে এক বা একাধিক বিসিএসের সময় জটিলতার কারণে অন্য বিসিএস প্রার্থীদের সংকটে ফেলা যায় না। ৪৭তম বিসিএসে আবেদনকারী নতুন প্রার্থীরা যে কারণে নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। অথচ পিএসসি আগেই পূর্ণ সময়সূচি নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হতো না। ক্যালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তার কথা কর্ম কমিশন নিজেও অনেকবার স্বীকার করেছে, কিন্তু তারা সেটি কখনো প্রণয়ন করেনি। এটি করা গেলে বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতারও অবসান ঘটতে পারে।
এ সময়সূচি নির্ধারণের মূলনীতি হবে, প্রতিটি বিসিএসের কার্যক্রমকে আলাদা রাখা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মধ্যে কেবল আবেদনের সর্বশেষ তারিখ থাকবে না, একই সঙ্গে থাকবে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সম্ভাব্য সময়। এমনকি সুপারিশপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য সময়ও উল্লেখ থাকবে। পুরো প্রক্রিয়া এক বছরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নিতে হবে।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে আবেদন জমা নেওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন সময় রাখা যায়। এর আড়াই মাস পর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হতে পারে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য কমবেশি এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এভাবে সাড়ে তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে প্রথম ধাপ শেষ করা যায়।
এরপর পিএসসির কাজ লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা। প্রিলিমিনারিতে বাছাই করা প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সাড়ে তিন মাস সময় দেওয়া যায়। ওই সময়ের মধ্যেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশনের কাজ সারতে হবে। পরীক্ষা গ্রহণের জন্য এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে, অর্থাৎ মধ্যবর্তী সাড়ে চার মাসে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের কাজটি শেষ করা যায়। এর সঙ্গে খাতা দেখার জন্য আরও এক মাস লাগবে। বর্তমানে খাতা দেখার জন্য পিএসসি যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে, তাতে এর বেশি সময় লাগার কথা নয়। অর্থাৎ শুরু থেকে ৯ মাসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব।
সবশেষে বাকি থাকে মৌখিক পরীক্ষা। ১৫ মিনিটের মৌখিক পরীক্ষার জন্য নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা উচিত। এই পরীক্ষা দুই থেকে আড়াই মাসে শেষ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর একত্র করে চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। তালিকা প্রকাশের জন্য লাগতে পারে আরও ৭ থেকে ১০ দিন, অর্থাৎ তিন মাস সময়ের আগেই শেষ ধাপের কাজ সম্পন্ন হতে পারে। এভাবে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে একটি বিসিএস পরীক্ষা শেষ করা যায়।
বিসিএস পরীক্ষাগুলো এ মুহূর্তে জট পাকানো অবস্থায় আছে। বাইরে থেকে বুঝে ওঠা যায় না, কোনটির প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে, কোনটির লিখিত পরীক্ষা হয়ে গেল আর কোনটির মৌখিক পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে আছে চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন ও আন্দোলন—কখনো পরীক্ষা পেছানোর, কখনো দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের। অথচ পিএসসি যদি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের সময়সূচি নির্ধারণ করে দিত এবং সেই অনুযায়ী প্রতিটি বিসিএসের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলমান রাখত, তবে নিয়োগ প্রার্থীদের আপত্তি থাকত না।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক