চট্টগ্রাম মহানগরের চান্দগাঁও থানার রাস্তার মাথা নামক চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকালে পুলিশ সদস্যদের উপর হামলার ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বায়েজিদ কুঞ্জছায়া আবাসিক এলাকার মনছুর আহমেদ এর ছেলে মো.

মোরশেদ (৩১) ও বোয়ালখালী জব্বার সওদাঘর বাড়ির শামসুল আলমের ছেলে মো. করিম (৩৮)। 

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগ থেকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। 

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চান্দগাঁও থানার এএসআই অসিত নাথ ফোর্সসহ কাপ্তাই রাস্তার মাথার মোহরা পুলিশ চেকপোস্টে ডিউটি করছিলেন। এ সময় তল্লাশিকালে মো. মোরশেদ ও মো. করিম নামের দুই ব্যক্তি পুলিশের উপর হামলা করে। এতে এক এসআইসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা হলেন– এসআই মো. হাবিবুর রহমান, এএসআই অসিত নাথ, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার, মো. আমিরুল ইসলাম ও ফরিদ শেখ। পরে ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, পুলিশের সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশের উপর আক্রমণ করে গুরুতর জখম করায় মোরশেদ ও করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা/রেজাউল/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

রাজসাক্ষীকে জেরায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় জেরা করার সময় প্রসিকিউটরের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই ঘটনা ঘটে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হককে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে আবজালুল বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি অনুমতি ছাড়া আশুলিয়া থানা ত্যাগ করেন। থানায় ফিরে আসেন গত বছরের ১৫ আগস্ট।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত ছিলেন আবজালুল। পরে তাঁকে আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

যে প্রশ্ন নিয়ে উত্তাপ ছড়াল

জেরায় আবজালুলকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান প্রশ্ন করেন, থানায় এসে এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) রাজু আহমেদের মারা যাওয়ার কথা তিনি শুনেছিলেন কি না। মূলত এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই এজলাসকক্ষে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবীর করা ওই প্রশ্নের বিরোধিতা করেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজসাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে, তবে তাঁকে এ ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না।

তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন দারোগাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এই প্রশ্ন করা যাবে না? এ রকম বিচার করতে কোর্ট এখানে আসেন নাই।’

প্রসিকিউশন যেমন একজন মায়ের আবেদনের বিচারের জন্য এখানে এসেছে, তেমনি এটাও আরেক স্ত্রীর (নিহত পুলিশ সদস্য রাজুর স্ত্রী) আবেদন বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী মিজানুর রহমান। তখন তাঁর হাতে ছিল এএসআই রাজুর স্ত্রীর করা মামলার নথি।

এ পর্যায়ে প্রসিকিউটর বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর যে ডকুমেন্টস (নথি) এনেছেন, এটা দেখানোর অনুমতি আছে কি না। ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষীর (আসামিপক্ষ) তালিকা ও ডকুমেন্টস কি দেওয়া হয়েছে?

তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, আরেকটা সুখরঞ্জন বালি (মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে গুম হন সুখরঞ্জন বালি) তৈরি করতে চান? সাফাই সাক্ষীর নাম দিলে শুরু হয়ে যায় থ্রেট (হুমকি দেওয়া) করা।

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, তাঁদের (আসামিপক্ষের আইনজীবীদের) কোর্টে আসাই উচিত হয়নি। তাঁরা বলতে পারেন, এটা হাইড (সাফাই সাক্ষীর পরিচয় গোপন রাখা) রাখুন। তাঁরা এটা বলেছেন?

এ সময় ট্রাইব্যুনাল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘সাক্ষ্য নিতে গেলেই এত কাহিনি’। পরে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আইনকে আইনের মতো করে প্রয়োগ করলে কাজ হয়।

তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, আইনে বলা আছে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) তাঁর জ্ঞানে থাকা ঘটনা সম্পর্কে সত্য ও পূর্ণ প্রকাশ করবেন। এটা (পুলিশ হত্যা) তাঁর জানার মধ্যেই আছে। তিনি (আবজালুল) ছিলেন রাজুর স্ত্রীর করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এই (আশুলিয়ায় ছয় হত্যাকাণ্ড) অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।

‘গায়ের জোর’ ও ‘হোয়াট ইজ দিস’

রাজসাক্ষী আবজালুলকে সাবেক এএসআই রাজুর স্ত্রীর করা মামলা প্রসঙ্গে আবার প্রশ্ন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান। সঙ্গে সঙ্গে আবার আপত্তি জানিয়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, আবজালুলের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা যাবে, এই বিষয়ে নয়।

তাহলে এটা কিসের বিষয়, এই প্রশ্ন রাখেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান। এই আইনজীবী বলেন, গায়ের জোরের কাছে তিনি পেরে উঠছেন না।

এরপর প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম উচ্চ স্বরে বারবার বলতে থাকেন ‘হোয়াট ইজ দিস’।

তখন বিচারকেরা দুই পক্ষকেই ট্রাইব্যুনালের পরিবেশ বজায় রাখার অনুরোধ করেন।

একপর্যায়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম কথা বলার অনুমতি চান ট্রাইব্যুনালের কাছে। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, একটু আস্তে কথা বলবেন। তখন প্রসিকিউটর বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর শুরু থেকেই প্রত্যেক সাক্ষীকে এ বিষয়ে (আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যা) জেরা করছেন। তাঁকে ট্রাইব্যুনালে এসব ডকুমেন্টস দিতে কে বাধা দিয়েছে?

আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান এর জবাব দিতে গেলে ট্রাইব্যুনাল পরের প্রশ্নে যাওয়ার অনুরোধ করেন।

আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি ১৬ জন। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ, এএসআই বিশ্বজিৎ সাহাসহ আট আসামি পলাতক। গ্রেপ্তার হওয়া বাকি আসামিরা হলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও মো. শহিদুল ইসলাম (সাভার সার্কেল); ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার এসআই আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান ও শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অনুপস্থিত থাকায় গতকাল ট্রাইব্যুনাল-২–এর নেতৃত্ব দেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এই ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজসাক্ষীকে জেরায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়