এই মুহূর্তে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে রাজনৈতিক মতৈক্য যেখানে গিয়ে দাঁড়াবে আমরা সে অনুযায়ী নির্বাচন করব। এই মুহূর্তে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। এটা একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতি, তাই একটি রাজনৈতিক সমঝোতা অনুযায়ী আমরা নির্বাচন করব।

আজ বুধবার বিকেলে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে খুলনা অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, খসড়া ভোটার তালিকা গত ২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছে এবং আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই কার্যক্রমের পাশাপাশি আমরা ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং যাচাইকরণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকার হালনাগাদ করা হবে।  

নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আবুল ফজল মো.

সানাউল্লাহ বলেন, আপনারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে জনগণের ভোটার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব না করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে উৎসাহ দিতে হবে। নারীরা যেন তাদের বিভিন্ন নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বিশেষ নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ভোটার হওয়ার গুরুত্বের দিকটি সবাইকে জানাতে হবে। 

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ, খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির ও পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন। খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য না হলে দেশে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে

জুলাই সনদের ধারণাটাই একটা অভিনব ধারণা। সেটাকে সংবিধানে সংযুক্ত করা, আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করা—এগুলো একটা দীর্ঘ কাজের ব্যাপার, যা এর আগে বাংলাদেশে কখনো করা হয়নি। ফলে এই কাজে মতভিন্নতা স্বাভাবিক। তবে নাগরিক হিসেবে আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে। যতটুকু ছাড় দিলে কোনো দলের বড় কোনো মৌলিক ক্ষতি হয় না, তার বিনিময়ে যদি একটা বৃহত্তর ঐক্য হয়; সেটা তারা বিবেচনা করবে বলে আমরা মনে করি।

আমাদের প্রত্যাশা, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে, দল ও গোষ্ঠীর স্বার্থকে উপেক্ষা করে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কতগুলো ন্যূনতম জায়গায় শিথিলভাবে হলেও তারা একমত হবে। ঐকমত্য হলে হয়তো ১০০–এর বদলে ৮০ বা ৬০ মেনে নিতে হবে। যদি ঐকমত্য না হয়, এমন সম্ভাবনা আছে যে সবারই ১০০–ই হারাতে হবে। দেশ আরেকবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে, টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে।

আরও পড়ুনযেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে৮ মিনিট আগে

গণভোট ও অধ্যাদেশ

গণভোট হয় আসলে নীতিনির্ধারণী বিষয়। ধরা যাক, আমরা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই কি না, নির্বাচিত সরকার এসে সনদের বাস্তবায়ন কত দিনের মধ্যে করবে—এ রকম নীতিনির্ধারণী দু–চারটি প্রশ্ন হলে গণভোট ঠিক আছে। কিন্তু যদি জুলাই সনদের এই ধারা–ওই ধারা নিয়ে প্রশ্ন থাকে বা প্রশ্ন দু–চারটির বেশি হয়, তখন সেটা একটা দুরূহ ব্যাপার হবে। গণভোটের প্রশ্নপত্রের আদলে ব্যালট তা কে বা কারা তৈরি করবেন, বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয়ই ভেবেছেন।

এই মুহূর্তে অধ্যাদেশ জারি করে গণভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। একটা পক্ষ বলছে, সনদে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু বিদ্যমান আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা এটা পারবেন না। অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন কেবল রাষ্ট্রপতি।

কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রপতি স্বৈরাচারের নিয়োগ দেওয়া এবং তাদের ধারা বহন করা ব্যক্তি। আবার এ কথাও সত্য যে এই রাষ্ট্রপতির কাছেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদকে শপথ নিতে হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর আমরা এমন কোনো বিপ্লবী সরকার গঠন করিনি, যারা এই সংবিধান রদ করেছে বা এই রাষ্ট্রপতিকে অস্বীকার করেছে।

এই রাষ্ট্রপতি যদি অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন, জুলাইয়ে প্রাণ দেওয়া ও আত্মত্যাগকারী এবং তাঁদের পরিবার, স্বজন ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক পক্ষগুলোর জন্য এটা মেনে নেওয়া কঠিন। সব পক্ষের আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে একটা পথ বের করতে হবে। এটা খুঁজে দেখা যেতে পারে, পৃথিবীতে কোথাও এমন কোনো দৃষ্টান্ত আছে কি না, যেখানে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি ছাড়া অন্য কেউ অধ্যাদেশ জারি করেছেন। কিংবা এ–সংক্রান্ত এখতিয়ার রাষ্ট্রপতি কাউকে অর্পণ করতে পারেন কি না এবং তাঁর বদলে অন্য কেউ স্বাক্ষর করতে পারেন কি না।

তবে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির বিষয়টাকে জনগণের ক্ষমতার কাছে বিগত রেজিমের লিগ্যাসি বহনকারী রাষ্ট্রপতির মাথা নোয়ানো হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

দলগুলোর সহযোগিতা সরকারের লাগবে

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য লাগবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় সহযোগিতা সরকারের লাগবে। অন্তত একটা কার্যকর আলাপ–আলোচনা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর লাগবে।

মাঠে যে পুলিশ আছে, সেই পুলিশের ওপর এখনো জনগণের পুরোপুরি আস্থা নেই। পুলিশের মধ্যে বিগত রেজিমের অপচ্ছায়া আছে। সেই পুলিশ, সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীকে যখন মাঠে মোতায়েন করা হবে, ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকবে কি না—এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা যাতে নির্বাচনে অবাধে কাজ করতে পারেন, তা–ও নিশ্চিত করতে হবে।

একটা জাতীয় ঐকমত্য তৈরির ক্ষেত্রে যেন সরকার এখন থেকেই উদ্যোগী হয়—যাতে সব নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উদ্দীপ্ত হন। জনগণ যদি ভাবেন যে ভোটকেন্দ্রে গেলে গোলাগুলি হবে, তাহলে তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন না। জনগণের মনে আস্থা, সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কাজ করতে হবে। আমরা চাইব, সরকার সর্বতোভাবে একটা জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একটি দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি কীভাবে বলেন ‘নো হাঙ্কি পাঙ্কি’, প্রশ
  • ৭ নভেম্বর: ঐতিহাসিক বাস্তবতা, গণতন্ত্র ও বিএনপির প্রাসঙ্গিকতা
  • জুলাই সনদ ও নোট অব ডিসেন্টের রাজনীতি
  • ‘জাতীয় ইস্যুতে সর্বদলীয় ঐকমত্য জরুরি’
  • ঐকমত্য না হলে দেশে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে
  • জামায়াতের কেউ এমপি হলে সরকারি প্লট ও বিনা ট্যাক্সের গাড়ি নেবেন না : শফিকুর রহমান
  • চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতে চাই: নাসীরুদ্দীন
  • এনসিপির প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • প্রয়োজনে প্রথম আলোর সম্পাদককে মনোনয়ন দেবে এনসিপি: নাসীরুদ্দীন
  • নির্বাচন দেরি হলে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা–বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা আছে: জামায়াতের আমির