‘ট্রাম্পকে হত্যার চক্রান্ত করেনি ইরান’
Published: 15th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চক্রান্ত ইরান কখনও করেনি বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
মঙ্গলবার এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ও মার্কিন সরকারের পূর্ববর্তী এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
পেজেশকিয়ান বলেন, আমরা আগেও এমন কিছু করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না। ট্রাম্পকে কথিত গুপ্তহত্যার চক্রান্তে জড়িত থাকার সন্দেহে গত নভেম্বরে এক ইরানি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে মার্কিন বিচার বিভাগ।
অভিযোগে বলা হয়, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস ওই হত্যার আদেশ দিয়েছিল। গত বছর ট্রাম্প নিজেও একাধিকবার অভিযোগ করে বলেছেন, তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টায় ইরানের হাত থাকতে পারে। রয়টার্স।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৪০টির বেশি আসনে অসন্তোষ, বিরোধ সামলাতে ব্যস্ত বিএনপি
বিভক্তি মেটাতে তৎপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
অনেক আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীর আশঙ্কা।
বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ,তৃণমূলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিতদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, কর্মীদের মধ্যে বিভাজন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ৪০টির বেশি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে। এর জেরে বিক্ষোভ, মিছিল, সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি চলছে। গতকাল শনিবারও অন্তত আটটি আসনে বিক্ষোভ হয়েছে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন বিরোধকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় দলের ঐক্য নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এলাকায় প্রভাব আছে, মনোনয়নবঞ্চিত এমন অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে পারেন, এমন আশঙ্কাও আছে।
এমতাবস্থায় বিরোধ সামলাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উদ্যোগী হয়েছেন। দায়িত্বশীল নেতারা একে একে বিরোধপূর্ণ আসনের সব পক্ষকে ঢাকায় ডেকে কথা বলছেন। সমঝোতার চেষ্টা করছেন। কিছু কিছু আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা আছে বলেও জানা গেছে।
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেওয়া আসনগুলোর একটি নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া)। সেখানে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন (পুতুল)। এতে ক্ষুব্ধ হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম (টিপু) ও প্রার্থী ফারজানা শারমিনের আপন ভাই ইয়াছির আরশাদ (রাজন)। দুজনেই এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করছেন।
জানা গেছে, দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী তাইফুল ইসলাম ও ইয়াছির আরশাদকে গত মঙ্গলবার ঢাকায় গুলশানের কার্যালয়ে ডেকে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন কর্মকাণ্ড না করতে দুজনকে নির্দেশনা দেন।
এর মধ্য দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভোট করতে চাই। আমার কাজ হচ্ছে মানুষের সঙ্গে থাকা। এটা প্রাথমিক মনোনয়ন। প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত সময় আছে। নিশ্চয়ই দল ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা মূল্যায়ন করবে।’
রাজপথ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবখানেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন মনোনয়নবঞ্চিতরা। দলীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চান তাঁরা।বিক্ষুব্ধদের ডেকে কথা বলছেন নেতারাদলীয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের কয়েকটি আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের ডেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার কথা জানান বিএনপির মহাসচিব। পর্যায়ক্রমে বিরোধপূর্ণ সব আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের নিয়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে। কোনো কোনো আসনে প্রার্থীদের সঙ্গে তারেক রহমানও কথা বলছেন।
এসব আলোচনায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বলছেন, প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনা না করলে বিজয় কঠিন হবে। প্রয়োজনে নিরপেক্ষ কাউকে দিয়ে জরিপ করার অনুরোধও করেছেন কেউ কেউ। পাশাপাশি এই নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড তাঁরা করবেন না।
অভিনব প্রতিক্রিয়া৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। মনোনয়ন ঘোষণার পর একেবারে ব্যতিক্রম ও অভিনব প্রতিক্রিয়া এসেছিল ফেনী-২ আসন থেকে। ঘোষিত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ফেনীর তিনটি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (ফেনী-১), চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদীন (ফেনী-২) এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু (ফেনী-৩)। এর মধ্যে ফেনী-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অন্তত ছয়জন। তাঁদের একজন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন (আলাল)।
মাথায় হ্যাট পরে বিস্তীর্ণ ধানখেতে দাঁড়িয়ে আলাল উদ্দিন ক্রিকেট খেলার ধাঁচে দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে প্রতীকী আবেদন করেন—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আরও অনেকে তাঁকে অনুসরণ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেনী-২ আসনের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য জেলা বিএনপির সাত নেতা—আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন, চার যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, এয়াকুব নবী, এম এ খালেক ও গাজী হাবীবুল্যাহ এবং জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন মিস্টার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেন।
আলাল উদ্দিন জানান, তিনি এখন পর্যন্ত তাঁর আবেদনের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতিতে যে শৈল্পিকতা আছে, আমি সেই দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই। সে জন্য একটা শান্তিপূর্ণ পন্থায় আমি মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছি। তা ছাড়া ম্যাডাম এখানে (ফেনী-৩) নির্বাচন করবেন। সে কারণে বিশৃঙ্খলা হতে পারে, এমন কর্মকাণ্ড থেকে আমরা বিরত থাকছি।’
স্থগিত সেই আসনমাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণার পরপর ওই দিন সন্ধ্যায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকেরা। তাঁরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে প্রতিক্রিয়া দেখান। পরে ঘোষিত প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। সেখানে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মনোনয়ন স্থগিত করা মাদারীপুর-১ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বেশ জটিলতায় পড়েছেন। লাভলু সিদ্দিকীর এলাকায় দুর্নাম নেই। সাবেক ফুটবলার ও ঢাকার একটি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর লাভলু সিদ্দিকী ২০১৮ সালে এই আসনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। পরে ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে হেরে যান। এলাকায় তাঁর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকলেও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এ বিষয়গুলো বিবেচনা করছেন।
অন্যদিকে ‘ভাসাবি ফ্যাশন’ ও ‘ভাসাবি জুয়েলার্সের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল জামান মোল্লা এলাকায় বেশ আলোচিত। তাঁকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও বিগত আন্দোলনে শিবচর ও ঢাকায় ভূমিকার কারণে দল তাঁকে উপেক্ষা করতে পারছে না। এ ছাড়া সামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকায় কামাল জামান মোল্লার অবস্থান ভালো বলেও দলীয় পর্যালোচনায় এসেছে। কামাল জামান মোল্লার বড় ভাই আবদুল লতিফ মোল্লা শিবচর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত শিবচরে তাঁদের প্রভাব আছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ভোটে জয়-পরাজয়ের হিসাব মিলিয়ে এই আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।
বিক্ষোভ, বিতর্কপ্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো ঢাকায়ও অন্তত তিনটি আসনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে। এর মধ্যে ঢাকা-১২ (সাইফুল আলম নীরব) ও ঢাকা-১৫ (শফিকুল ইসলাম খান) উল্লেখযোগ্য। তাঁদের নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা আছে।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) ও নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও মশালমিছিল করেছেন বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা।
কুমিল্লার দুটি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বিক্ষোভ আছে। এর মধ্যে কুমিল্লা-৬ আসনে (সদর, সদর দক্ষিণ, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস) মনিরুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে প্রায় প্রতিদিন কর্মসূচি করছেন আমিন-উর-রশিদ (ইয়াসিন)। দুজনই বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপির কোন্দল বেশ পুরোনো। প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) এম আনোয়ার উল আজিম এবং বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালামের (চৈতি কালাম) অনুসারীরা দুই ভাগে বিভক্ত।
আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়ার পর মাঠে নামেন আনোয়ার উল আজিমের মেয়ে সামিরা আজিম (দোলা)। এলাকায় দুই পক্ষে সংঘাতও হয়। তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে ঢাকায় বৈঠকের পর বিরোধের অবসান হয়। সামিরাকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য করার আশ্বাস দিয়ে ক্ষান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কাফনের কাপড় পরে প্রতিক্রিয়াদুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ কাফনের কাপড় পরে প্রতিক্রিয়া জানান সেখানকার নেতা-কর্মীদের একাংশ। এর একটি নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সদরের আংশিক), অন্যটি দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসন।
নোয়াখালী-৫ আসনের প্রার্থী ফখরুল ইসলামকে পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরীর সমর্থকেরা গত বুধবার বিকেলে উপজেলার কবিরহাট বাজারে এ কর্মসূচি পালন করেন।
দিনাজপুর-২ আসনে সাদিক রিয়াজ চৌধুরীর মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মশালমিছিল, কাফনের কাপড় পরিধান করে মানববন্ধন, ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন মোজাহারুল ইসলাম, বজলুর রশিদ কালু ও মনজুরুল আলমের অনুসারীরা। এ ছাড়া দিনাজপুর-১ ও দিনাজপুর-৪ আসনেও মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণার পরদিনই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীর সমর্থকেরা। তাঁরা সীতাকুণ্ডের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে অংশ নেওয়ায় আসলামপন্থী স্থানীয় চার নেতাকে পরে বহিষ্কার করে দল। আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা গতকালও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ মানববন্ধন করেছেন।
দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বঞ্চিতদের এমন বিক্ষোভকে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি বড় দলে এ ধরনের প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুবই স্বাভাবিক। তবে এ ধরনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ চার-পাঁচটি আসনের বেশি হবে না। আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করার চেষ্টা করছি।’
বিভিন্ন আসনে অসন্তোষ৩ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন আসনে মনোনয়নবঞ্চিতরা সংগঠিত হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। শুক্রবারও কুমিল্লা সদরে আমিন-উর-রশিদ ও শিবচরে কামাল জামানের সমর্থকেরা মিছিল করেছেন।
চাঁদপুর-২ আসনে জালাল উদ্দিনের নাম ঘোষণার পর থেকে সেখানকার দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল হুদার জ্যেষ্ঠ পুত্র তানভীর হুদা আগে থেকে মাঠে সক্রিয়। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ড্যাবের নেতা সরকার মাহবুব আহমেদও (শামীম) এলাকায় সক্রিয়। এই দুজনের অনুসারীরা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, প্রার্থী পরিবর্তন করা না হলে এই আসন বিএনপির হাতছাড়া হতে পারে।
একইভাবে চাঁদপুর-৪ আসনেও প্রার্থিতা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে।
সুনামগঞ্জ-১, ৩ ও ৫ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ হয়েছে। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদের বিপরীতে আরেক প্রবাসী মো. আনোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সিলেট-৩ আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের মনোনয়ন ঘিরে অসন্তোষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম।
ফরিদপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী। ফরিদপুর-১ আসনে পাল্টাপাল্টি মিছিল থেকে সংঘর্ষও হয়। এ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
রাজবাড়ী-১, মাগুরা-২, সাতক্ষীরা-২ ও সাতক্ষীরা-৩ আসনেও ঘোষিত প্রার্থী নিয়ে দলের অসন্তোষ রয়েছে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে।
টাঙ্গাইলের সাতটি আসনের চারটিতে মনোনয়ন ঘোষণার পর নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-১, ২ ও ৮—এই তিনটি আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ-সমাবেশ, মহাসড়ক অবরোধ, এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও এসেছে।
কুষ্টিয়ার তিনটি আসনে (কুষ্টিয়া-২, ৩ ও ৪) মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ অংশ মহাসড়ক অবরোধ, নারী সমাবেশ, মশালমিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে মেহেদী আহমেদ রুমীর পরিবর্তন চেয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শেখ সাদীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের ১৬ জন নেতা।
গাইবান্ধা-৪ আসনে শামীম কায়সারের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদকসহ একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
মনোনয়ন ঘিরে রাজশাহী ও পাবনায় একাধিক আসনে তীব্র বিভক্তি তৈরি হয়েছে। রাজশাহীর ছয়টি আসনের চারটিতেই বিক্ষোভ-অবরোধ হয়েছে। একই পরিস্থিতি পাবনা-৩, পাবনা-৪; জয়পুরহাট-১, জয়পুরহাট-২ এবং নওগাঁর ঘোষিত পাঁচটি আসনের সব কটিতে।
ঐক্যে জোর, উদ্বেগও আছেবিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বশীল নেতারা বিক্ষুব্ধ নেতাদের ঢাকায় ডেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কারও কারও সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও কথা বলছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। কারণ, অনেক জায়গাতেই দু-তিনজন করে নেতা আছেন মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষোভ মিটিয়ে নিচ্ছি।’
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও ঐক্য রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে বঞ্চিতদের পর্যায়ক্রমে ডেকে বোঝানো হচ্ছে। তবে একাধিক নেতা মনে করছেন, কিছু আসনে ‘এলিট-পছন্দের’ (প্রভাবশালীদের পছন্দের) প্রার্থী দেওয়াই মাঠের ক্ষোভের একটা বড় কারণ। এসব অসন্তোষ, বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর আশঙ্কা দলীয় নেতৃত্বের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তাতে বিএনপির ভোট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—এমন উদ্বেগও আছে দলের নেতাদের মধ্যে।