দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গাজায় আজ রবিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া কথা ছিল। কিন্তু হামাস জিম্মিদের তালিকা এখনো দেয়নি বলে যুদ্ধবিরতি এখনই শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। খবর আল জাজিরার।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছেন, আজ সকাল পর্যন্ত হামাস তার শর্ত পূরণ করতে পারেনি। চুক্তি অনুযায়ী হামাস ইসরায়েলকে জিম্মিদের তালিকা দেয়নি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে, যতক্ষণ পর্যন্ত হামাস তার দায়িত্ব পালন না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না।
আরো পড়ুন:
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে আজ, নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি
ইসরায়েলের ব্যাপক হামলার আতঙ্কে ফিলিস্তিনিরা
আর এরপরই দক্ষিণ খান ইউনিস এবং কেন্দ্রীয় নুসাইরাতে ইসরায়েলি কামানের গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলা পুনরায় শুরু হয়েছে। এতে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় উত্তর গাজায় তিনজন এবং গাজা সিটিতে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরো অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত হলেও, গাজায় মানুষ এখনও আনন্দ উদযাপন করছেন। আল জাজিরার খবর অনুসারে, ঘড়িতে সকাল সাড়ে ৮টা বাজতেই গাজার মানুষ আনন্দ ও উৎসবে মেতে ওঠে। তারা আশা করছে, জিম্মি তালিকা ইস্যুটির সমাধান দ্রুত হবে।
হামাস একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া বন্দীদের তালিকা ‘যে কোনো মুহূর্তে’ হস্তান্তর করা হবে।
দোহাভিত্তিক কর্মকর্তা যিনি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি এএফপিকে বলেছেন, “যে কোনো মুহূর্তে তিন জিম্মির নাম হস্তান্তর করা হবে। মাঠ পরিস্থিতির জটিলতা ও অব্যাহত বোমা হামলার কারণে বিলম্বিত হয়েছে।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি