বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলার অর্থ উদ্ধারে দেশটির সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

কানাডীয় হাইকমিশনারকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের সহযোগীরা বাংলাদেশ থেকে শত শত বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। এসব অর্থের একটি অংশ কানাডায় পাচার করা হয়েছে, যার মধ্যে টরন্টোর কুখ্যাত ‘বেগম পাড়া’ পাড়ায় সম্পদ কেনাও অন্তর্ভুক্ত।

অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা এসব অবৈধ সম্পদ শনাক্ত, জব্দ ও পুনরুদ্ধারে সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের জনগণের টাকা চুরি করে বেগম পাড়ায় সম্পদ কিনেছে। অর্থ পুনরুদ্ধারে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন। এগুলো আমাদের জনগণের টাকা।

এ সময় হাইকমিশনার অবৈধ অর্থ পুনরুদ্ধারে কানাডার সমর্থনের আশ্বাস দেন। অজিত সিং জানান, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক চিহ্নিতদের পাচার করা অর্থ আটকে রাখার একটি ‘প্রক্রিয়া’ কানাডার রয়েছে।

গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগেও কানাডার সমর্থনের কথা জানান হাইকমিশনার। তিনি বলেন, ‘আপনি যে প্রশংসনীয় কাজ করছেন তা আমরা সমর্থন করি।’

কানাডা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগে আগ্রহী জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, ‘‘পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য কানাডার একজন মন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।’’

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ড.

ইউনূসের সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে হাইকমিশনার বলেন, ঢাকার আরও কানাডিয়ান বিনিয়োগ প্রয়োজন।

‘বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। আমরা আপনার দেশের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চাই এবং আমরা চাই কানাডিয়ান কোম্পানিগুলো তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করুক,’ বলেন অজিত সিং।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনেক বাংলাদেশি এখন কানাডায় বসবাস ও পড়াশোনা করেন। অটোয়ার উচিত ঢাকায় তাদের ভিসা অফিস স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া। 

বৈঠকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী এবং সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করবে বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে দেশে দুর্নীতিতে লাগাম টানার পাশাপাশি যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নির্বাচন কমিশনের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলীয় এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তারেক রহমান। বিএনপির উপস্থাপিত দেশ পরিচালনার পরিকল্পনাগুলো জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার ট্র্যাক রেকর্ড বিএনপির আছে। এ কাজটি করতে গিয়েই খালেদা জিয়া সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করেছিল। সে সময় এ কমিশনকে এতটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যে সরকারের কোনো বিষয়ে তদন্ত করতে চাইলে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন ছিল না। এই নিয়ম স্বৈরাচার সরকার পাল্টে দিয়েছিল। বিএনপি জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় এলে প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে এটি আবার পরিবর্তন করা হবে।

দুর্নীতির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও ঠিক রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মতো আমাদের আরেকটি কাজে সফল হতে হবে। সেটাও দুর্নীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেটি হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। যেকোনো মূল্যে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে।’

বিএনপির মূল পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন তারেক রহমান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অতীত উদাহরণ বিএনপির আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় থেকেছে তখনো দলের কোনো সদস্য অন্যায় করলে চেষ্টা করেছে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে আইন দিয়ে বিচার করতে।’

বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। আজকের এই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ওলামা দলের নেতারা অংশ নেন।

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, শিল্পে উন্নতি করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, নারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করার কাজ অতীতে সফলভাবে করার ট্র্যাক রেকর্ড একমাত্র বিএনপির আছে। প্রতিটি কাজ আবার শুরুর পরিকল্পনা একমাত্র বিএনপিই উপস্থাপন করেছে। এই পরিকল্পনাগুলো গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিএনপির কাছেই নিরাপদ দাবি করে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণ আমাদের কাছে শুধু কথার ফুলঝুরি প্রত্যাশা করে না। জনগণ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে যে আমরা কীভাবে দেশ পরিচালনা করব। জনগণের সমস্যাগুলোকে কীভাবে মিটআপ (মোকাবিলা) করব। পুরো পরিকল্পনা জনগণ আমাদের কাছে দেখতে চান।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির যেসব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে চাই, ইনশা আল্লাহ জনগণের রায় নিয়ে আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। সেই সরকারকে সফল করতে হলে সারা দেশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিএনপির লাখ লাখ নেতা–কর্মীকে সহযোগিতা করতে হবে। পরিকল্পনা গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিএনপি। শুক্রবার বাদে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলবে। এতে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আজকের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম প্রমুখ।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গত ১৫ বছর ছিল ‘মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময়’
  • একটা দল ভোটের আগেই মনে করে ক্ষমতায় চলে গেছি: গোলাম পরওয়ার
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর
  • যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান 
  • মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি: তারেক রহমান
  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলনের ১১ দফা প্রস্তাব
  • ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করবে বিএনপি
  • আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই: হাসনাত
  • জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি আবার দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত: তারেক রহমান