পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কানাডার সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
Published: 4th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলার অর্থ উদ্ধারে দেশটির সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
কানাডীয় হাইকমিশনারকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের সহযোগীরা বাংলাদেশ থেকে শত শত বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। এসব অর্থের একটি অংশ কানাডায় পাচার করা হয়েছে, যার মধ্যে টরন্টোর কুখ্যাত ‘বেগম পাড়া’ পাড়ায় সম্পদ কেনাও অন্তর্ভুক্ত।
অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা এসব অবৈধ সম্পদ শনাক্ত, জব্দ ও পুনরুদ্ধারে সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের জনগণের টাকা চুরি করে বেগম পাড়ায় সম্পদ কিনেছে। অর্থ পুনরুদ্ধারে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন। এগুলো আমাদের জনগণের টাকা।
এ সময় হাইকমিশনার অবৈধ অর্থ পুনরুদ্ধারে কানাডার সমর্থনের আশ্বাস দেন। অজিত সিং জানান, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক চিহ্নিতদের পাচার করা অর্থ আটকে রাখার একটি ‘প্রক্রিয়া’ কানাডার রয়েছে।
গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগেও কানাডার সমর্থনের কথা জানান হাইকমিশনার। তিনি বলেন, ‘আপনি যে প্রশংসনীয় কাজ করছেন তা আমরা সমর্থন করি।’
কানাডা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগে আগ্রহী জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, ‘‘পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য কানাডার একজন মন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।’’
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ড.
‘বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। আমরা আপনার দেশের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চাই এবং আমরা চাই কানাডিয়ান কোম্পানিগুলো তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করুক,’ বলেন অজিত সিং।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনেক বাংলাদেশি এখন কানাডায় বসবাস ও পড়াশোনা করেন। অটোয়ার উচিত ঢাকায় তাদের ভিসা অফিস স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া।
বৈঠকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী এবং সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কে স্কপের অবরোধ শুরু
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরমুখী সড়কের তিনটি অংশে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। এ বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে পরিবহনশ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা।
আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে নগরের মাইলের মাথা, বড়পোল ও বন্দরের টোল প্লাজা গেট এলাকায় প্রতীকী অবরোধ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই সেখানে স্কপের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। কর্মসূচির শুরুতে সমাবেশ করেন তাঁরা। সেখানে কর্মসূচির সমর্থনে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতারা।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার চুক্তির প্রতিবাদে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনালে বিদেশি অপারেটরদের ইজারার চুক্তি বাতিলের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে স্কপ। গত শনিবার স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঘোষণা অনুযায়ী, নগরের তিন মোড়ে অবরোধের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, বন্দরের এনসিটি একটি লাভজনক টার্মিনাল। এটি বিদেশিদের ইজারা দিতে তড়িঘড়ি করছে সরকার। অন্যদিকে লালদিয়া চুক্তির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে। বন্দর জনগণের সম্পদ। জনগণের আড়াল করে চুক্তির বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী।
সরেজমিন দেখা যায়, সকালে বড়পোল মোড়ে অবস্থানরত শ্রমিক নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা-'চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক এনসিটি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারার প্রতিবাদে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও ইজারা চুক্তি বাতিলের দাবিতে বন্দর অবরোধ কর্মসূচি'।
সমাবেশে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস কে খোদা তোতন বলেন, ‘আমরা চাইলেই বন্দর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু আমরা সময় দিচ্ছি। বিদেশিদের টার্মিনাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন।’ শ্রম অধিকারকর্মী ফজলুল কবির বলেন, ‘বন্দর কোনোভাবেই বিদেশি হাতে দেওয়া যাবে না।’
আদালতের রায় ৪ ডিসেম্বরএদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট আবেদনের রায় আগামী ৪ ডিসেম্বর দেবেন হাইকোর্ট। ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে, মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগে। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের বেশির ভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন করা হয়। এটি পরিচালনা করছিল সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ৬ জুলাই। এরপর নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়।
এই টার্মিনাল পরিচালনায় ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। এখন বিদেশি এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ এগিয়ে নিতে চাইলে তার বৈধতার প্রশ্নে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
অন্যদিকে লালদিয়া ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে সম্প্রতি। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। এ ছাড়া ২২ বছরের জন্য পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএ।