শেখ হাসিনার উস্কানির কারণে ৩২ নম্বরে ভাঙচুর
Published: 7th, February 2025 GMT
রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে জানিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি সরকারের অভিমত, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করা হয়। বলা হয়, গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি। গত বুধবার রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে যার দুটি অংশ আছে।
একটি অংশ হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদের অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরও তিনি একই হুমকি-ধমকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি দিচ্ছেন। দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।
মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। তাঁর এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব।
সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না।
এতে বলা হয়, জুলাই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এই বিচার নিশ্চিত করে গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা সরকার খতিয়ে দেখবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ নমন ড গণঅভ য ত থ ন কর ছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাংলাদেশ প্রীতি
আর্জেন্টিনার একজন প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী, লেখিকা ও নারীবাদী নেত্রী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারণে তিনি বাংলাভাষী মানুষের কাছে বিশেষভাবে আলোচিত ও সমাদৃত। বলা হয়ে থাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর কাব্যিক ও আত্মীক সম্পর্ক ছিলো। ওকাম্পো শুধু রবীন্দ্রনাথকেই ভালোবাসতেন তা কিন্তু নয়, না, তিনি ভালোবাসতেন বাংলা ভাষা ও বাঙালিকেও। ভিক্টোরিয়া সেই প্রমাণ রাখেন একাত্তুরে। সেই কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্ববহ।
১৯৭১-এ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও তিনি ছিলেন হয়ে উঠেছিলেন একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ওকাম্পোর বয়স ছিল ৮১ বছর। বয়সের ভারে তিনি তখন দুর্বল, কিন্তু এরপরেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে একটি মিছিলের আয়োজন করেছিলেন, শুধু তাই না ওকাম্পো ছিলেন মিছিলের পুরোভাগে। সেদিনের সেই মিছিলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ছাড়াও আরও ছিলেন— হোর্হে লুইস বোর্হেস, এদুয়ার্দো সাবাতো, এদোলফো ওবোইতাসহ আরও অনেকে।
আরো পড়ুন:
আজ শত্রুমুক্ত ফেনীতে প্রথম উড়েছিল লাল সবুজের পতাকা
বাংলাদেশের এক পাগলাটে বন্ধু জঁ ক্যা
একাত্তরের ১১ জুন আর্জেন্টাইন লেখক, বুদ্ধিজীবী, মানবতাবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের শরণার্থীদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস মারিয়া ডি পাবলো পারডোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি দেন। সেই দাবিনামায় যারা স্বাক্ষর করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথমেই ছিল ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাম।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি গণহত্যার প্রতিবাদে আর্জেন্টাইন সরকারের কাছে তিনি আবেদন জানান এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো শুধু প্রতিবাদ করেই থেমে থাকেননি, বরং নিজের প্রভাব খাটিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরিতে সহায়তা করেন। তার সম্পাদিত বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘সুর’-এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার খবর তুলে ধরেন, যা ছিল তার সমর্থনেরই একটি প্রকাশ।
ঢাকা/লিপি