ফতুল্লায় মামুন হত্যা : সন্দেহের তীর আকতার-সুমনের দিকে
Published: 7th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মামুন হোসাইনকে গুলি করে হত্যা ঘটনায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। এই হত্যাকান্ডের জন্য ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন কুতুবাইলের আলাউদ্দিন হাজীর ছেলে আকতার ও সুমন বাহিনীকে দায়ী করেছেন।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাসা তেকে ডেকে নিয়ে ফতুল্লার কোতালেরবাগ এলাকায় পাকিস্তানি খাদের সামনে গুলি করে মামুন হোসাইনকে হত্যা করা হয়।
এদিকে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় দুই যুবক মামুনকে খুব কাছ থেকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিতের পর দৌড়ে কুতুবআইল টেক্সটাইল গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। সেই সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে অপর একটি ফুটেজে দেখা যায় হত্যাকারীদের মধ্যে একজন শামীম ওসমানের কর্মী কুতুবআইলের আকতার সুমন সহোদর দুই ভাইয়ের বাসার সামনে যায়।
সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশও আকতার সুমন সহদরের বাসায় প্রায় দীর্ঘ সময় ঘাতকদের খুজে অভিযান চালায়। আকতাররের বাড়ীর গেইট খুলতে দেরি করে। ধারনা করা হচ্ছে গেইট খোলার বিষয়ে সময় কালক্ষেপন করে ভিন্ন গেইট দিয়ে ঘাতকেরা পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, আকতার-সুমন সহদরের বাড়িতে সর্বমোট ৫টি গেইট রয়েছে। এক গেইট দিয়ে পুলিশ ওই বাসায় প্রবেশ করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। এরমধ্যে কেউ বাসায় থাকলেও তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে বাসায় আকতারের স্ত্রীকে পাওয়া গেছে।
সে জানিয়েছে আক্তার দেশের বাহিরে রয়েছে আর সুমন ঢাকায় আছে।পুলিশ দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আক্তারের বাড়ীর সিসিটিভির একটি ডিভিআর,হার্ডডিক নিয়ে আসলে ও লুকানো অপর একটি ডিভিআর তার লোকজন দিয়ে সরিয়ে নেয়।
স্থানীয়রা জানান, আকতার-সুমন সহোদরেরা শামীম ওসমানের আর্শীবাদে বিগত ১৫ বছর কুতুবআইল এলাকায় রাজ করে বেড়িয়েছে। তারা দুই ভাই নিজেদের শিল্পপতি হিসেবে পরিচয় দিলেও স্থানীয়রা তাদের সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে চিনেন।
তাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে খুন হয় ডাইং ব্যবসায়ী সোলায়মান, বীর মুক্তিযুদ্ধা গিয়াস উদ্দিন। তাদের জমি দখল করতে গিয়ে নিজের বন্ধুকের গুলিতে মৃত্যু হয় নজরুল ইসলামের। আক্তার সুমন সহদরের পালিত সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠে।
স্থানীয়রা জানান, ফতুল্লাবাসী সবাই জানেন আকতার-সুমন সহদর সন্ত্রাসীদের গডফাদার। কিন্তু প্রশাসন তাদের সব বিষয়েই ছাড় দিয়ে যায়। তবে কয়েক বছর আগে র্যাবের হাতে তারা দুই সহদর মাদকসহ গ্রেফতার হয়েছিল।
এদিকে নিহত মামুনের স্ত্রী ইয়াসমিন জানান, মামুন তাদের পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। আমাদের সংসারে মামুনের ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ১০ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান আছে। মামুনের উপার্জন দিয়েই সংসার চলতো। সন্তানরা লেখা পড়া করে। এখন আমাদের সংসারে হাল ধরার কেহ রইলো না। আমি সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।
তিনি আরো বলেন, কার হুকুমে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে এলাকার সবাই জানে। পুলিশও বুঝতে পেরেছে। আমি বলতে চাইনা। পুলিশ আমার স্বামীর হত্যাকারী ও হুকুমদাতাদের বের করে গ্রেফতার করবেন।
নিহত মামুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আজাদ মিয়া জানান, রাত ২টায় মামুন হিসাব শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গুলোগুলির শব্দে বের হন তিনি। তখন দুই যুবককে পালিয়ে যেতে দেখেন তিনি। একইসঙ্গে মামুনের রক্তাক্ত দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তাকে উদ্ধার করে শহরের খানপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন রবিন বলেন, ‘দলীয় যে কোনো কার্যক্রমে কর্মী সমর্থক নিয়ে মামুন থাকত। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল। এ জন্য বারবার গায়েবি মামলায় মামুনকে গ্রেফতার করা হয়।’
মামুনকে আকতার, সমুন, রতনরা মিলে খুন করিয়েছে। তারা ফতুল্লার সন্ত্রাসীদের গডফাদার। পুলিশের কাছে দাবী থাকবে দ্রুত মামুন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকারীদের সনাক্তের চেষ্টা চলছে। সন্ধেহজনক স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। আশা করি হত্যাকারীদের দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
মেধাবীদের লড়াই ও দেশে মেডিকেলে ভর্তির বাস্তবতা
১২ ডিসেম্বর সারা দেশে একযোগে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই পরীক্ষার আয়োজন করেছে। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল এই পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণের সুযোগ পান।
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি ও সামরিক বাহিনীর পরিচালিতসহ মোট ১১২টি মেডিকেল কলেজ আছে। এগুলোতে মোট আসনসংখ্যা ১২,১৮৯। এর মধ্যে সরকারি কলেজে ৩৭, বেসরকারি কলেজে ৬৮ এবং সামরিক বাহিনী পরিচালিত কলেজ ৭টি। প্রতিবছর প্রায় এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। মেধার জায়গা থেকে অনেকেই উপযুক্ত হলেও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪০ থেকে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী।
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রত্যেকেই হয়তো এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়ার যোগ্য। কিন্তু আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় মাত্র ১১ হাজার শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। ফলে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে বোঝা যায় যে শুধু কঠিন প্রতিযোগিতার কারণেই অনেক যোগ্য শিক্ষার্থী মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পায় না।
মেডিকেল ভর্তি প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি মেধাভিত্তিক এবং এখানে আর্থিক বা ব্যক্তিগত কোনো প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে বেসরকারি কলেজ—সবার জন্য একই দিনে, একই প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি তত্ত্বাবধানে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হলেও পরিচালনা পর্ষদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
আজও মা–বাবার কাছে উচ্চশিক্ষার প্রথম পছন্দ মেডিকেল। সামাজিক মর্যাদা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা এবং পেশাগত সম্মানের কারণে চিকিৎসক পাত্র-পাত্রীরা বিশেষ গুরুত্ব পান। তবুও অজানা কারণে চিকিৎসকদের সম্মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।গত কয়েক বছর ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অটোমেশন যুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের নম্বর ও পছন্দ অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলেজ পায়। ফলে আর্থিক সামর্থ্য বা পরিচিতি এখানে কোনো ভূমিকা রাখে না। তবুও অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে টাকা দিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া যায়। বহু উচ্চপদস্থ ব্যক্তি প্রায়ই ফোন করে জানতে চান, ‘কত টাকা লাগবে?’ যা শুনে বিব্রত হতে হয়। তাদের বুঝিয়ে বলতে হয় যে, মেডিকেল ভর্তি সম্পূর্ণ জাতীয় মেধানির্ভর–প্রক্রিয়া এবং ভর্তির খরচও সরকার নির্ধারিত।
অনেকের ধারণা, মেডিকেলে পড়ার খরচ খুব বেশি; কিন্তু বাস্তবে ভারত বা নেপালের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়তে প্রায় এক কোটি টাকা লাগে, যেখানে বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ অর্ধেক এবং দেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কম। তা ছাড়া বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার মান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রোগীর বৈচিত্র্য ও সংখ্যার দিক থেকেও বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুনভর্তি পরীক্ষা: মেধা যাচাই নাকি প্রাতিষ্ঠানিক ট্যাগের দৌরাত্ম্য২৪ নভেম্বর ২০২৫বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনাম অর্জন করেছে। উদাহরণ হিসেবে ভুটানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। নেপালের বিখ্যাত হৃদ্রোগ সার্জন চিকিৎসক ভগবান কৈরালা বাংলাদেশে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট থেকে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এসব উদাহরণ প্রমাণ করে বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে।
তার পরও চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশাকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং হাসপাতালে চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টির মতো ঘটনা মাঝেমধে৵ দেখা যায়। এসব আচরণ মূলত অজ্ঞতা থেকে আসে। রাষ্ট্র যদি এ বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেয়, তবে এ ধরনের প্রবণতা কমে যাবে।
আজও মা–বাবার কাছে উচ্চশিক্ষার প্রথম পছন্দ মেডিকেল। সামাজিক মর্যাদা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা এবং পেশাগত সম্মানের কারণে চিকিৎসক পাত্র-পাত্রীরা বিশেষ গুরুত্ব পান। তবুও অজানা কারণে চিকিৎসকদের সম্মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সবশেষে বলতে চাই, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে যারা কঠোর পরিশ্রম করে মেধার ভিত্তিতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন। জয় হোক মেধাবীদের।
আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী চিকিৎসক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
*মতামত লেখকের নিজস্ব