নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মামুন হোসাইনকে গুলি করে হত্যা ঘটনায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। এই হত্যাকান্ডের জন্য ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন কুতুবাইলের আলাউদ্দিন হাজীর ছেলে আকতার ও সুমন বাহিনীকে দায়ী করেছেন।

 শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাসা তেকে ডেকে নিয়ে ফতুল্লার কোতালেরবাগ এলাকায় পাকিস্তানি খাদের সামনে গুলি করে মামুন হোসাইনকে হত্যা করা হয়।

এদিকে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় দুই যুবক মামুনকে খুব কাছ থেকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিতের পর দৌড়ে কুতুবআইল টেক্সটাইল গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। সেই সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে অপর একটি ফুটেজে দেখা যায় হত্যাকারীদের মধ্যে একজন শামীম ওসমানের কর্মী কুতুবআইলের আকতার সুমন সহোদর দুই ভাইয়ের বাসার সামনে যায়।

সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশও আকতার সুমন সহদরের বাসায় প্রায় দীর্ঘ সময় ঘাতকদের খুজে অভিযান চালায়। আকতাররের বাড়ীর গেইট খুলতে দেরি করে। ধারনা করা হচ্ছে গেইট খোলার  বিষয়ে সময় কালক্ষেপন করে ভিন্ন গেইট দিয়ে ঘাতকেরা পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, আকতার-সুমন সহদরের বাড়িতে সর্বমোট ৫টি গেইট রয়েছে।  এক গেইট দিয়ে পুলিশ ওই বাসায় প্রবেশ করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। এরমধ্যে কেউ বাসায় থাকলেও তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে বাসায় আকতারের স্ত্রীকে পাওয়া গেছে।

সে জানিয়েছে আক্তার দেশের বাহিরে রয়েছে আর সুমন ঢাকায় আছে।পুলিশ দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আক্তারের বাড়ীর সিসিটিভির একটি ডিভিআর,হার্ডডিক  নিয়ে আসলে ও লুকানো অপর একটি ডিভিআর তার লোকজন দিয়ে সরিয়ে নেয়।

স্থানীয়রা জানান, আকতার-সুমন সহোদরেরা শামীম ওসমানের আর্শীবাদে বিগত ১৫ বছর কুতুবআইল এলাকায় রাজ করে বেড়িয়েছে। তারা দুই ভাই নিজেদের শিল্পপতি হিসেবে পরিচয় দিলেও স্থানীয়রা তাদের সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে চিনেন।

তাদের পালিত সন্ত্রাসী  বাহিনীর গুলিতে খুন হয় ডাইং ব্যবসায়ী সোলায়মান, বীর মুক্তিযুদ্ধা গিয়াস উদ্দিন। তাদের জমি দখল করতে গিয়ে নিজের বন্ধুকের গুলিতে মৃত্যু হয় নজরুল ইসলামের। আক্তার সুমন সহদরের পালিত সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠে। 

স্থানীয়রা জানান, ফতুল্লাবাসী সবাই জানেন আকতার-সুমন সহদর সন্ত্রাসীদের গডফাদার। কিন্তু প্রশাসন তাদের সব বিষয়েই ছাড় দিয়ে যায়। তবে কয়েক বছর আগে র‌্যাবের হাতে তারা দুই সহদর মাদকসহ গ্রেফতার হয়েছিল।

এদিকে নিহত মামুনের স্ত্রী ইয়াসমিন জানান, মামুন তাদের পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। আমাদের সংসারে মামুনের ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ১০ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান আছে। মামুনের উপার্জন দিয়েই সংসার চলতো। সন্তানরা লেখা পড়া করে। এখন আমাদের সংসারে হাল ধরার কেহ রইলো না। আমি সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।

তিনি আরো বলেন, কার হুকুমে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে এলাকার সবাই জানে। পুলিশও বুঝতে পেরেছে। আমি বলতে চাইনা। পুলিশ আমার স্বামীর হত্যাকারী ও হুকুমদাতাদের বের করে গ্রেফতার করবেন।

নিহত মামুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আজাদ মিয়া জানান, রাত ২টায় মামুন হিসাব শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গুলোগুলির শব্দে বের হন তিনি। তখন দুই যুবককে পালিয়ে যেতে দেখেন তিনি। একইসঙ্গে মামুনের রক্তাক্ত দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তাকে উদ্ধার করে শহরের খানপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন রবিন বলেন, ‘দলীয় যে কোনো কার্যক্রমে কর্মী সমর্থক নিয়ে মামুন থাকত। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল। এ জন্য বারবার গায়েবি মামলায় মামুনকে গ্রেফতার করা হয়।’

মামুনকে  আকতার, সমুন, রতনরা মিলে খুন করিয়েছে। তারা ফতুল্লার সন্ত্রাসীদের গডফাদার। পুলিশের কাছে দাবী থাকবে দ্রুত মামুন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকারীদের সনাক্তের চেষ্টা চলছে। সন্ধেহজনক স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। আশা করি হত্যাকারীদের দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট নগরীতে নতুন ‘রিকশা ভাড়া’ প্রস্তাব করল পুলিশ

সিলেট মহানগরে প্যাডেলচালিত রিকশার ভাড়া প্রস্তাব করেছে সিলেট মেট্রোপলিট্রন পুলিশ। সোমবার (৩ নভেম্বর) নতুন ভাড়ার তালিকা প্রস্তাব করা হয়। 

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী বলেন, ‘‘নগরবাসীর মতামত নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভাড়ার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সেই তালিকা ২০২৭ সাল পর্যন্ত চালু থাকবে।’’

আরো পড়ুন:

হিমাগারে কেজিপ্রতি আলুর ভাড়া সাড়ে ৫ টাকা

পাম্পে গাড়ির চাপ, গণপরিবহনে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ

নগরীতে সর্বনিম্ন রিকশা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ টাকা। কিন্তু তলিকায় লেখা হয়নি এমন জায়গার জন্য ১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে যাত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তালিকা প্রকাশের আগে নগরীরর ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে পুলিশ মতবিনিময় করে।

পুলিশের প্রস্তাবিত ভাড়ার তালিকায় দেখা যায়, নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে লামাবাজার, মিরাবাজার, আম্বরখানা, ভাতালিয়া পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা; সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, শেখঘাট ও শাহী ঈদগাহ পর্যন্ত ৪০ টাকা; শিবগঞ্জ ও ওসমানী মেডিকেল পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং বালুচর, টিলাগড়, বাগবাড়ি, চৌকিদেখি, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট পর্যন্ত ৬০ টাকা।

শিবগঞ্জ পয়েন্ট থেকে টিলাগড়, খরাদিপাড়া, সেনপাড়া পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা; নতুন ব্রিজ পর্যন্ত ৩০ টাকা; বালুচর, ঈদগাহ, আম্বরখানা পর্যন্ত ৩০, ৫০ ও ৬০ টাকা; লামাবাজার ও শেখঘাট পর্যন্ত ৬০ টাকা এবং পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, ওসমানী মেডিকেল, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, শেখঘাট, সুবিদবাজার পর্যন্ত ৭০ টাকা এবং বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ৮০ টাকা। 

দক্ষিণ সুরমা কিনব্রিজ থেকে রেলগেট ২০ টাকা; হুমায়ুন রশীদ চত্বর, লাউয়াই পর্যন্ত ৩০ টাকা; শিববাড়ি, বরইনকান্দি, গোটাটিকর পর্যন্ত ৪০ ও ৫০ টাকা; আলমপুর, মকন দোকান পর্যন্ত ৫০ ও ৭০ টাকা। 

আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সুবিদবাজার, ঈদগাহ, কাজীটুলা পর্যন্ত ২০ টাকা; মদিনা মার্কেট, চৌকিদেখি, পাঠানটুলা পর্যন্ত ৩০ টাকা; লাক্কাতুরা, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, নয়াসড়ক পর্যন্ত ৬০ টাকা; টিলাগড়, উপশহর এবিসি পয়েন্ট, নতুন ব্রিজ পর্যন্ত ৬০ টাকা।

কোর্ট পয়েন্ট থেকে টিলাগড় ৬০ টাকা; শিবগঞ্জ-নতুন ব্রিজ ৪০ টাকা; মিরাবাজার- যতরপুর-৩০ টাকা; উপশহর এ-কে পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং নতুনব্রিজ থেকে দক্ষিণ সুরমা টার্মিনাল পর্যন্ত ভাড়া ৭০ টাকা।

এছাড়া কোর্ট পয়েন্ট থেকে নতুন ব্রিজ হয়ে রেল স্টেশন, গোপশহর মকন দোকান, গোয়াবাড়ি, আখালিয়া বিডিআর গেইট, ভাঙ্গাটিকর, টুলটিকর, মিরাপাড়া ৮০ টাকা;  ঝেরঝেরিপাড়া, শিবগঞ্জ সোনারপাড়া, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, উত্তর কাজিটুলা, গোয়াইটুলা, আম্বরখানা, মাছিমপুর, দর্শন দেউড়ি, সুবিদবাজার, ভাতালিয়া, ওসমানী মেডিকেল, কুমারপাড়া পর্যন্ত (ঝর্ণারপার) ৪০ টাকা; দর্জিবন্দ, শাহী ঈদগাহ, লেচুবাগান, হাউজিং এস্টেট, লন্ডনি রোড—পাঠানটুলা, বাগবাড়ি, বর্ণমালা পয়েন্ট, এতিম স্কুল, নবাব রোড (শেখঘাট পীচের মুখ, কলাপাড়া ডহর), ঘাসিটুলা বেতের বাজার, আম্বরখানা, কলবাখানি, মেন্দিবাগ, সাদাটিকর ৫০ টাকা; নতুন ব্রীজ হয়ে কদমতলি, লাউয়াই, বিসিক শিল্প নগরী,বরইকান্দি, চৌকিদেখি, লাক্কাতুরা, শাপলাবাগ ৭০ টাকা; জল্লারপাড়া, তোপখানা ২০ টাকা; কাজীটুলা, রাজারগলি, দরগাহ মাজার গেট, মীরের ময়দান, শেখঘাট, দাড়িয়াপাড়া, পশ্চিম কাজির বাজার, মীরের ময়দান, রিকাবিবাজার, ছড়ারপাড়, কুমারপাড়া পয়েন্ট, মিরাবাজার, সোবহানিঘাট, চালিবন্দর পর্যন্ত ৩০ টাকা; শাবি গেট ৯০ টাকা; কাজিটুলা, রাজারগলি, শাহজালাল দরগাহ গেট, মিরের ময়দান, শেখঘাট, রিকাবিবাজার, দাড়িয়াপাড়া, পশ্চিম কাজিরবাজার, মির্জাজাঙ্গাল, ছড়ারপাড়, কুমারপাড়া পয়েন্ট, মিরাবাজার আগপাড়া, সোবহানিঘাট, চালিবন্দর ৩০ টাকা; কুমারগাও বাস টার্মিনাল ১০০ টাকা; খোজাখলা, সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস, বাদম বাগিচা, মদিনা মার্কেট, কানিশাইল খেয়াঘাট, পীর মহল্লা, কুশিঘাট ভাড়া পর্যন্ত ৬০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা/নুর/বকুল  

সম্পর্কিত নিবন্ধ