কুঞ্জ উজাড়। সেখানে গভীর গর্ত। আরসিসি ঢালাই করা পিলারের অংশবিশেষ। লোহালক্কড় আর ইট–পাথরে আকীর্ণ পরিবেশ। অনেক চেনা সবুজ ‘পান্থকুঞ্জ’কে এখন কুঞ্জ বলার কোনো মানেই হয় না। এটি এখন ক্ষতবিক্ষত মাঠ। এরই এক প্রান্তে হলো গাছের গান, নদীর গান; প্রাণী, পাখি ও নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রতিবাদী গান। উচ্চারিত হলো সহিংসতা, নিপীড়নের প্রতিবাদ।

গতকাল শুক্রবার অপরাহ্ণে পান্থকুঞ্জে ‘নারী ও প্রকৃতির প্রতি নিপীড়ন রুখে দিন’ আহ্বান নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন ও নাট্যসংগঠন বটতলা।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প (ওঠানামার পথ) নির্মাণের জন্য নগরের বুকে ক্ষুদ্র সবুজ উদ্যান পান্থকুঞ্জের গাছপালা কেটে বিরান বানিয়ে ফেলা হচ্ছিল। এর প্রতিবাদে গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেখানে অবস্থান করছেন। গতকাল ছিল অবস্থানের ৯৮তম দিন।

এদিকে সারা দেশেই নারীদের প্রতি সহিংসতা, নিপীড়নের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সে কারণে নারী ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে সব নিপীড়ন বন্ধের ডাক দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় এ আয়োজনে। শুরুতেই নাট্যসংগঠন বটতলার পক্ষে ঘোষণা পাঠ করেন শেউতি শাগুফতা। এতে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে নারীকে হেনস্তা, পোশাক নিয়ে সমালোচনা ও কটূক্তি করা হচ্ছে। ধর্ষণের হুমকি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারীর নিরাপত্তাহীনতার এক দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে তাঁরা মুক্তি চান।

সংহতি জানিয়ে বক্তব্য এবং ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদী গান, আবৃত্তি, মূকাভিনয় ও নারী নির্যাতনবিরোধী নাটক দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই সাংস্কৃতিক কর্মী সমাবেশের কার্যক্রম। এতে গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব বলেন, পান্থকুঞ্জের এই চিলতে পরিমাণ সবুজ ছিল এই এলাকার ফুসফুসের মতো। উন্নয়নের নামে তা ধ্বংস করা হচ্ছে।

কাব্যনাটক বৃক্ষ সম্মেলন থেকে আবৃত্তি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বটতলার নাট্যকার সামিনা লুৎফা বলেন, ‘একটা গাছের সঙ্গে পাখি, কীটপতঙ্গসহ কত ধরনের প্রাণবৈচিত্র্যের নিবিড় সংযোগ থাকে, তা আমরা অনুভব করি না। তাদের প্রাণকে আমরা মূল্যবান ভাবি না। এই মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে।’

নাট্যজন আজাদ আবুল কালাম সংহতি জানিয়ে বলেন, বহু প্রাণ ও রক্তপাতের বিনিময়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন মুক্ত সমাজের আশা জেগেছিল, তার সঙ্গে এখনকার বাস্তবতার মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

আলোচনার ফাঁকে প্রকৃতি ও মানুষ নামের মূকাভিনয় পরিবেশন করেন শহীদুল মুরাদ। গানের দল ‘বেতাল’–এর শিল্পীরা পরিবেশন করেন বৃক্ষ নিয়ে গান ‘গাছে গাছে কথা কয় পাখিরা তা জানে’। নাট্যসংগঠন বটতলার শিল্পীরা পরিবেশন করেন নারী নির্যাতনের প্রতিবাদী গান ‘যেন আমি সেই মেয়েটা’। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাট্যকার ও নির্দেশক শাহমান মৈশান।

গানের দল ‘মাভৈঃ’ পরিবেশন করে নদী নিয়ে গান ‘পুবের পাহাড়ে, বরাক নদীর দুধারে’। কবিতা আবৃত্তি করেন অনন্য লাবণি। আরও বক্তব্য দেন বটতলার নির্দেশক মো.

আলী হায়দার। সঞ্চালনা করেন বটতলার যোগাযোগ পরিচালক হুমায়ুন আজম। প্রতিবাদে দৃপ্ত এই সমাবেশ শেষ হয়েছিল বটতলার নারী নির্যাতনবিরোধী নাটক আর নয় চুপ থাকার পরিবেশনা দিয়ে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন বটতল র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসার অভাবে শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগ, বন্দরে মহাসড়ক অবরোধ

অসুস্থ শ্রমিককে ছুটি না দেওয়া, চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাসড়কের মদনপুর অংশে তারা এ অবরোধ করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারের আশ্বাসে এগারোটায় মহাসড়ক থেকে সরে যায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। 

শ্রমিকরা জানান, 'লারিস ফ্যাশন' নামে একটি রপ্তানিমুখি গার্মেন্টসের নারী শ্রমিক রিনা (৩০) অসুস্থ অবস্থায় ডিউটি করে যাচ্ছিলেন। গতকাল তিনি অসুস্থতা বোধ করলে কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেন। তবে কর্তৃপক্ষ তার আবেদনে কোনো সাড়া না দিয়ে কাজ করে যেতে বাধ্য করেন। পরে অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে সহকর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শ্রমিক রিনা কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার দুলালের মেয়ে। অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ এ মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। 

বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়িয়ে দেন। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ও পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ