আগামী নির্বাচনে ৫৩ বছরের ঠকে যাওয়ার হিসাব নিতে হবে: ফাহিম মাসরুর
Published: 27th, March 2025 GMT
ভয়েস ফর রিফর্মের উদ্যোক্তা ও সংগঠক ফাহিম মাসরুর বলেছেন, ‘৫৩ বছর ধরে আমরা শুধু ঠকেই যাচ্ছি। জুলাই বিপ্লব আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, সেটি আর হাতছাড়া করা উচিত হবে না। আগামী নির্বাচনে সঠিক জায়গায় ভোট দিয়ে সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।’
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত চলমান গণ–ইফতারের ২৬তম দিনে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ফাহিম মাসরুর। রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় এবি পার্টির কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় এ গণ–ইফতারের আয়োজন করা হয়।
ইফতার মাহফিলে ফাহিম মাসরুর বলেন, ‘ছোট ছোট বাচ্চা এবং দিনমজুর ভাইয়েরা না থাকলে এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সফল হতো না। যেসব প্রতিনিধি আমাদের সচ্ছলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন, তাদেরই আপনারা ভোট দেবেন। এবার দায়িত্বটা জনগণের। আপনারা যদি মন থেকে চান, তাহলে চাঁদাবাজির রাজনীতি আর থাকবে না।’
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘সামনে নির্বাচনে নেতারা যখন ভোট চাইতে আসবেন, তখন প্রশ্ন করবেন, আমি যখন রাস্তায় ঘুমাইছি, তখন আপনি কোথায় ছিলেন? শীতে কম্বল পাইনি, তখন আপনি কোথায় ছিলেন? আমার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে পারি নাই, তখন আপনি কোথায় ছিলেন? কালো টাকার কাছে আপনাদের বিবেক কে বিক্রি করা যাবে না।’
সভাপতির বক্তব্যে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বি এম নাজমুল হক বলেন, ‘আমরা মাসব্যাপী গণ–ইফতারে বোঝানোর চেষ্টা করছি, মানুষ মানুষের জন্য। আমাদের একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। সব নাগরিকের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই হচ্ছে এবি পার্টির রাজনীতি।’
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইনের সঞ্চালনায় গণ–ইফতার কার্যক্রমে ভয়েস ফর রিফর্মের সংগঠক সাইয়্যেদ কবির, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা লাবিব মহান্নাত, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ বি এম খালিদ হাসান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্বাস ইসলাম খান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান ব্যাপারী, মহানগর উত্তরের যুগ্ম সদস্যসচিব সামিউল ইসলাম এবং ছাত্রপক্ষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রাফি ফাত্তাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দলের সিনিয়র ফুটবলারদের আবার দলে নেওয়া হোক: ঋতুপর্ণা চাকমা
বাংলাদেশের ফুটবলের পোস্টার গার্ল ঋতুপর্ণা চাকমা। রাঙামাটির মগাছড়ি গ্রামের ঋতু, ফুটবলবোদ্ধাদের চোখে বাংলাদেশের মেসি। আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় নারী এশিয়ান কাপ ফুটবলে বাংলাদেশ যে টিকিট কেটেছে, তার মূল কারিগর ২১ বছর বয়সী এ উইঙ্গার। মিয়ানমারে এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দৃষ্টিনন্দন ৫ গোল করেন তিনি। যদিও কারও সঙ্গে তুলনায় যেতে চান না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে অধ্যয়নরত ঋতু। মিয়ানমার থেকে ফিরে সোমবার সকালে ভুটান গেছেন লিগে খেলতে। সেখান থেকে নিজের পারফরম্যান্স, বাংলাদেশের অর্জন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: চারদিক থেকে প্রশংসায় ভাসছেন। কেমন লাগছে, প্রথমবার এশিয়ান কাপে খেলতে যাচ্ছেন?
ঋতুপর্ণা চাকমা: প্রথমবারের মতো নারী এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছি– এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। অনেক ভালো লাগার বিষয়। এর আগে দু’বার আমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এবার লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়ার বড় মঞ্চে খেলার। সেই স্বপ্ন আমাদের পূরণ হয়েছে। দুটি সাফ চ্যাম্পিয়ন দলেরই সদস্য ছিলাম। সেই হিসেবে এবার এশিয়ান কাপে যাওয়াটা আমার জন্য বিশেষ কিছু।
সমকাল: এমন অর্জনের উদযাপন কি কম হলো? রাতে ঢাকায় পৌঁছে সকালেই ভুটান গেলেন।
ঋতুপর্ণা: হাতিরঝিলে এমন সংবর্ধনা অপ্রত্যাশিত ছিল। বাফুফে এত কষ্ট করে মধ্যরাতে আমাদের জমকালো সংবর্ধনা দিয়েছে। সে জন্য তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আসলে হাতে সময় ছিল না; ভুটানে লিগ খেলতে আসতে হয়েছে।
সমকাল: মিয়ানমারের বিপক্ষে বাঁ পায়ে দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন। ভেবেছিলেন, গোল হবে?
ঋতুপর্ণা: আমি যে গোলগুলো করি, প্রায় সবই ডি-বক্সের বাইরে থেকে। এই পজিশন থেকে গোল করতে আমার ভালো লাগে। ফলে আত্মবিশ্বাস তো ছিলই।
সমকাল: মাঝে কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে আপনিসহ সিনিয়র খেলোয়াড়দের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। সাবিনাসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারে ছিলেন না। তাতে খেলায় কোনো প্রভাব পড়েছে?
ঋতুপর্ণা: আমি চাই, আমাদের ক্যাপ্টেন (সাবিনা খাতুন) এবং বাকি যে সিনিয়র ফুটবলাররা আছেন, তাদের আবার দলে নেওয়া হোক। একটা সুযোগ দেওয়া হোক। পুরো সিনিয়র টিম যদি থাকে, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আমাদের বন্ডিংটা অনেক ভালো। এই যে আমরা এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করলাম, আমি মনে করি তাদেরও (সিনিয়র) টিমে থাকার দরকার ছিল।
সমকাল: মিয়ানমারে আপনার করা গোলগুলো দর্শনীয় ছিল। নিজের গোলের ভিডিও দেখেন?
ঋতুপর্ণা: হাজারবার দেখেছি। ম্যাচ শেষ করে রুমে এসে গোলের ভিডিও ক্লিপগুলো দেখেছি। নিজেও অবাক হয়েছি (হাসি...)।
সমকাল: অনেকেই আপনাকে বাংলাদেশের মেসি সম্বোধন করেন...
ঋতুপর্ণা: আমি আসলে কারও সঙ্গে নিজেকে তুলনা করি না। মেসি তো মেসিই। তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। এটা বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। এই ফাঁকে একটা কথা বলি, আমি কিন্তু সিআর সেভেনের (ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো) ভক্ত। তাঁর মতো স্পট কিক নিতে আমার ভালো লাগে।
সমকাল: এশিয়ান কাপের বাকি ১০ মাস। এই সময়টা কতটা চ্যালেঞ্জের?
ঋতুপর্ণা: এই সময়টা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপে ভালো করতে হলে আমাদের এই কয়েক মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বড় বড় দেশের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে হবে। প্রীতি ম্যাচ খেলতে পারলে আমাদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো বুঝতে পারব। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে দুয়েকটা টিমের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে পারলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। আর তা যদি র্যাঙ্কিংয়ে বড় কোনো দলের বিপক্ষে খেলতে পারি, তাহলে খুবই ভালো।
সমকাল: এশিয়ান কাপ থেকে আটটি দলের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ থাকবে। নিজেদের সম্ভাবনা দেখছেন?
ঋতুপর্ণা: এটা এখনও বলতে পারছি না। পরিস্থিতি কখন কোনো দিকে যাবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। আমরা সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। এখন যেভাবে সেরাটা দিয়ে যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও তা দিয়ে যাব। এশিয়ান কাপে প্রতিপক্ষ কারা হবে, তা এখনও জানি না। শুধু এশিয়ান কাপ নয়, বাংলাদেশকে অলিম্পিকের মতো বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই।
সমকাল: মিয়ানমার ম্যাচের পর কোচ বলেছিলেন, ভুটান লিগের চেয়েও বড় লিগে খেলার যোগ্য আপনি ...
ঋতুপর্ণা: ভুটানের লিগ খারাপ না। ভুটানে লিগ হয়, আমাদের দেশে তো সেটাও হয় না। ভুটানে ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সংগঠক সবাই পেশাদার। কোচ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে কিংবা ইউরোপে খেলার যোগ্য আমি। তাঁর প্রশংসায় আমি খুশি। তবে কোনো প্রস্তাব পাইনি (হাসি ...)।
সমকাল: এশিয়ান কাপের আগে বাফুফের কাছে কোনো প্রত্যাশা আছে?
ঋতুপর্ণা: আমাদের আবাসন ব্যবস্থাপনার উন্নতি দরকার। পাশাপাশি ট্রেনিং সুবিধা বাড়ানো উচিত। বিদেশে গিয়ে ক্যাম্প করলে সবচেয়ে ভালো হয়। যেমন, ভাইয়েরা (পুরুষ জাতীয় দল) ম্যাচের আগে বিদেশি গিয়ে ক্যাম্প করেন। আমাদের কখনও নিয়ে যাওয়া হয়নি। যে কোনো দেশে নিয়ে গেলে মেয়েদের মনের শক্তি ও স্পিরিট বেড়ে যাবে বলে মনে করি।
সমকাল: খেলার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, মানিয়ে চলতে পারছেন?
ঋতুপর্ণা: সমস্যা কিছুটা তো হয়ই। খেলার জন্য নিয়মিত ক্লাস করতে পারি না। রাতে ক্যাম্পে একটু সুযোগ পাই পড়ার। সত্যি করে বললে, খেলাধুলা আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া খুব কষ্টের (হাসি ...)।
সমকাল: শুনেছি মায়ের জন্য আপনার মন খারাপ ...
ঋতুপর্ণা: খেলার আগে কিংবা পরে যখনই সময় পাই মায়ের সঙ্গে কথা বলি। মা ছয়-সাত মাস ধরে অসুস্থ। কিন্তু আমার মা জানে না তাঁর কী রোগ। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি মাঠে নামি আমার মায়ের জন্য, দেশের জন্য। মায়ের কথা চিন্তা করেই খেলি।
সমকাল : আপনার মায়ের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ঋতুপর্ণা: সমকালকেও ধন্যবাদ।