বিদ্যালয়ের দোতলার একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, একজন শিক্ষক মাত্র দুই শিশুকে পড়াচ্ছেন। তারা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। পাশেই আরেকটি শ্রেণিকক্ষে পাঁচ শিশুকে পড়াচ্ছেন আরেকজন শিক্ষক। এখানে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস চলছে।

৭ এপ্রিল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত-কাঁটাবন এলাকায় অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী ড.

আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। এ সময় বিদ্যালয়টিতে আর কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি।

প্রধান শিক্ষক রীনা পারভীন বললেন, পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটি শেষে বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিন হওয়ায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম।

প্রকৃত বিষয় হলো, বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থীই কম। প্রাক্‌-প্রাথমিক (শিশুশ্রেণি নামে পরিচিত) থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কাগজপত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে মোট শিক্ষার্থী আছে ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৮ জন প্রাক্‌-প্রাথমিকের। অন্যদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ২৭, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৮ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

আরও পড়ুনশিক্ষকদের সন্তানেরাই পড়ে অন্য বিদ্যালয়ে২২ জানুয়ারি ২০২২

কাগজপত্রে এমন কমসংখ্যক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে প্রতিদিনের উপস্থিতিও যে কম, সেটিও সরেজমিন আন্দাজ করা গেল। অথচ বিদ্যালয়টির অবকাঠামো ভালো। পরিবেশও ঢাকার অন্যান্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় যথেষ্ট সুন্দর।

৪১ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে অভাব নেই শিক্ষকেরও। ছয়টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ছয়জনই। রাজধানীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দৃষ্টিনন্দন করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এ বিদ্যালয়ও রয়েছে। ফলে এখানে নতুন করে অবকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগও আছে।

স্থানান্তর করা এলাকায় নতুন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল কি না, সেটি ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। কারণ, সরকারি এই বিদ্যালয়টির সড়কের উল্টো দিকে সামান্য দূরেই নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে আরেকটি বিদ্যালয় আছে। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৮২ জন ও শিক্ষক ১০ জন। শুধু তা-ই নয়, এটির আঙিনায় ‘নীলক্ষেত হাইস্কুল’ নামে আরেকটি বিদ্যালয় আছে; যেখানে কেজি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।শিক্ষার্থী এত কম কেন

অবকাঠামো ও পরিবেশ ভালো এবং শিক্ষক পর্যাপ্ত থাকার পরও শিক্ষার্থী কম কেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মূলত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অপরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থার কথাই বেরিয়ে এল। উল্লেখিত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। আর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় পরের বছর ২০১৫ সালে।

বর্তমান অবস্থানস্থলে বিদ্যালয়টি নতুন হলেও এটির একটি পুরোনো ইতিহাস আছে। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় বিপিণ রায় বালক ও বালিকা নামে দুটি বিদ্যালয় ছিল। এর মধ্যে বিপিণ রায় বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিই এখানে স্থানান্তর করা হয়। স্থানান্তরের পর নামও পরিবর্তন হয়।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গরিবই রয়ে গেল০৪ মে ২০২৩

কিন্তু স্থানান্তর করা এলাকায় নতুন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল কি না, সেটি ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। কারণ, সরকারি এই বিদ্যালয়ের সড়কের উল্টো দিকে সামান্য দূরেই নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে আরেকটি বিদ্যালয় আছে। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৮২ জন ও শিক্ষক ১০ জন। শুধু তা-ই নয়, এটির আঙিনায় ‘নীলক্ষেত হাইস্কুল’ নামে আরেকটি বিদ্যালয় আছে; যেখানে কেজি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।

পার্থক্য শুধু শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান ধানমন্ডি শিক্ষা অঞ্চলে। আর পার্শ্ববর্তী নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান রমনা শিক্ষা অঞ্চলে।

আরও পড়ুন‘গরিবের বিদ্যালয়টি’ এখন ছয়তলা ভবন হচ্ছে১০ এপ্রিল ২০২৫

শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীনা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থী কম হওয়ার কারণ হতে পারে বিদ্যালয়টি তুলনামূলক নতুন, পাশে মার্কেট ও আশপাশে একাধিক সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় থাকা। তবে তাঁর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী তুলনামূলক কম হলেও উপস্থিতির হার ভালো।

শিক্ষার্থী কম হওয়ার কারণ হতে পারে বিদ্যালয়টি তুলনামূলক নতুন, পাশে মার্কেট ও আশপাশে একাধিক সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় থাকা।রীনা পারভীন, প্রধান শিক্ষক, শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ঢাকা জেলা ও মহানগর মিলিয়ে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৯৫১টি। এর মধ্যে মহানগরীতে ৩৪১টি। ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূলত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তানেরাই পড়াশোনা করে। এর মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে অবস্থানগত কারণেও শিক্ষার্থী কম। শিক্ষার্থী যে শুধু এখন কম তা নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম।

আরও পড়ুনখুলনার ‘গরিবের’ সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় এবার দেশসেরা২৪ জুন ২০২৪

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিকল্পনা আছে ১০ বছর ধরে অতি নগণ্য শিক্ষার্থী নিয়ে চলা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে পাশের অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার। ইতিমধ্যে এ ধরনের তিন শ’র মতো বিদ্যালয়ের তালিকা করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে স্থানীয় বাস্তবতার নিরিখে একীভূত করার কাজ করা হবে।

আরও পড়ুনসাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন১৫ এপ্রিল ২০২৫

এরই মধ্যে একটি আলোচনা চলছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার একটি বিদ্যালয়কে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার। কিন্তু এটি হলে শিক্ষার্থীদের যে খুব একটা উপকার হবে না, সেটি বোঝাই যায়। কারণ, এত দূরের শিক্ষার্থীদের এখানে পড়তে আসার কথা নয়; বরং এমন চিন্তা করতে হলে কাছের নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে করলে ভালো হবে বলে মনে করেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম তকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মূলত পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয় থাকার কারণেই এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম। তবে এখানে শিক্ষার্থী বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুনএকজন শিক্ষক চালান একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়০৩ জুন ২০২৪আরও পড়ুনদিল্লির অভিজ্ঞতা বনাম ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর গরিবি দশা০৭ মে ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ য লয়ট র জন শ ক ষ অবস থ ন অবক ঠ ম এল ক য় প রথম র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বিএন‌পির সম্ভাব‌্য প্রার্থী যারা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে দলের গুলশানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন। এছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচন করবেন।

বগুড়ায় সংসদীয় ৭টি আসনের মধ্যে ৬টির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসন থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম; বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে আব্দুল মুহিত তালুকদার; বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন; বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসন থেকে বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ; বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহাজানপুর) আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ওই আসনটি শরীক দলকে ছে‌ড়ে দেওয়া হতে পারে।

আরো পড়ুন:

ফুটবলার থেকে রাজনীতিক: বিএনপির মনোনয়ন পেলেন আমিনুল হক

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই নেতা

বগুড়ার দুটি আসন থেকে তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল করেছে।

ঢাকা/এনাম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ