নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে ৫২ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় স্থানীয় এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও।

সোমবার রাতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন মৃধা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান এ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল উদ্দিন।

পুলিশ কর্মকর্তা জামাল বলেন, মামলার এজাহারনামীয় তিনজন আসামিকে মামলার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তারা হলেন: মো.

হানিফ (৫০), তার ছেলে জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান (২১) ও চাচাতো ভাই শওকত মিথুন (৩৬)। তারা নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদনগরের বাসিন্দা।

জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান (২১) ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদদাতা এবং প্রথম আলো পত্রিকার পাঠক সংগঠন ‘বন্ধুসভা’র নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। কিশোর ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’তেও কন্ট্রিবিউটর হিসেবে জিসান লেখালেখি করে বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।

জুলাই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে নেতৃত্বে দেওয়া ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলা কমিটির সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জিসান জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলনের সময় পায়ে আঘাতপ্রাপ্তও হন জিসান।

জিসানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আন্দোলন চলাকালীন নারায়ণগঞ্জে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা এ ছাত্রনেতা।

জিসানের চাচা হাবিবুর রহমান বলেন, “রাত পৌনে একটার দিকে বাসায় আসে সদর মডেল থানা পুলিশ। কোনো সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই তারা বাসায় ঢুকে তল্লাশি করতে শুরু করে। পরে জিসান ও তার বাবার নামে মামলা আছে বলে থানায় নিয়ে চলে যায়। কিন্তু কী মামলা সেইটা আমাদের বলে নাই।”

“সকালে আমরা জানতে পারি আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধার ঘটনায় মামলা। কিন্তু অভিযানের রাতে জিসান বা তার বাবা ওই এলাকাতে (দেওভোগ) যায়নি। আমাদের বাসা থেকে দেওভোগ তো কয়েক কিলোমিটার দূরে।”

গ্রেপ্তার শওকত মিথুন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর।  জুলাই আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে করা তার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।
মামলায় মিথুনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকেও আসামি করা হয়েছে।

মিথুনের বড়ভাই শাহাদাত হোসেন মামুন বলেন, “ঘটনার রাতে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরছিল মিথুন। অনেক রাতে সে বাড়িতে ফেরে। ঘটনার সময় সে ছিলই না। কিন্তু গতরাতে পুলিশ মিথুনের সাথে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল। পরে আমরা অনেক অনুরোধ করলে তারা তাকে রেখে যায় কিন্তু মিথুনকে ধরে নিয়ে যায়।”

এছাড়া, পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর পদবি উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার সমর্থকরা বাধা প্রদান করে এবং সড়কে ট্রাক দিয়ে বালি ফেলে ও বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে রাতভর পুলিশকেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে নেবার পথে বঙ্গবন্ধু সড়কের কালিরবাজার মোড়ে আইভীর সমর্থক, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করে। পরে তারা আইভীকে বহনকারী পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে।

এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।

গত ৮ মে রাতে আইভীকে গ্রেপ্তার করতে নগরীর দেওভোগে তার পৈতৃক বাড়ি ‘চুনকা কুটিরে’ গেলে তার সমর্থক ও স্থানীয় এলাকাবাসী বাধা দেন। আইভীও ‘রাতের আঁধারে’ কোথাও যাবেন না বলে জানান।

পরে সকালে স্বেচ্ছায় গাড়িতে ওঠেন তিনি। তাকে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কালিরবাজার মোড়ে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা করা হয়। এতে পুলিশসহ আইভীর বেশ কয়েকজন সমর্থক আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সাংবাদিক জানান, মহানগর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা আইভীকে বহন করা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। ওই সময় ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) তাসমিন আক্তার বলেন, “সাবেক মেয়রকে গ্রেপ্তারে গেলে পুলিশ বাধার সম্মুখীন হন। কিন্তু রাতভর পুলিশ খুবই ধৈর্যের সাথে সেখানে অবস্থান করে এবং সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। তাকে গ্রেপ্তারের অভিযানে বাধা দেওয়ার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।”

“ঘটনার সময়ের সাক্ষ্য-প্রমাণ, ইন্টেলিজেন্স তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে আসামিদের শনাক্ত করে মামলায় এজাহারভুক্ত করা হয়েছে”, দাবি এ পুলিশ কর্মকর্তার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী  বলেন, “আমরা ৫ আগস্টের আগে এই ধরনের ঘটনা দেখতাম।

তখন অজ্ঞাত মামলায়ও মানুষকে গ্রেপ্তার করা হতো। এইখানে যদি বাবা আওয়ামী লীগ করে থাকে, তাহলেও তো তার দোষে তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যেতে পারে না পুলিশ। যে অন্যায়কারী তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

এই ধরনের প্র্যাকটিস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা আইনে বলা আছে, একজন নিরপরাধও যেন হয়রানি না হয়।”

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ গ র প ত র করত গ র প ত র কর ন র য়ণগঞ জ র ঘটন আইভ ক র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে মুকুলের উপর হামলার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলকে মারধর ও লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে নাসিক ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মী ও তার অনুসারীরা।

সোমবার (৩০ জুন) বিকেল ৪টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দর উপজেলার মদনপুর অংশে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে নেতাকর্মীরা। এতে অংশ নেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীসহ বন্দর উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

প্রায় একঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখলে মহাসড়কের উভয় লেনে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার আশ্বাস দিলে বিকেল ৫টায় নেতাকর্মীরা অবরোধ তুলে নেয়। অবরোধ কর্মসূচি থেকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে আল্টিমেটাম দেন মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। অন্যথায় ফের মহাসড়ক অবরোধ করার হুশিয়ারি দেন।

এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ বলেন, সাবেক চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে তার অনুসারীরা মহাসড়ক বন্ধ করেছিল। ফলে মহাসড়কের উভয় লেনে যানজট সৃষ্টি হয়। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে সড়ক থেকে সরিয়ে দেই। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুন দুপুরে বন্দর উপজেলার হরিপুর এলাকায় ৪১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কারে শ্রমিক নিয়োগের টেন্ডার পেয়ে সেখানে কয়েকজন পুলিশসহ সাবেক চেয়ারম্যান মুকুল ও তার লোকজন যায়।

এসময় তারা গাড়ি থেকে নামার পরপরই সেখানে থাকা সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বজলুর রহমানসহ লোকজন তাকে গালমন্দ করে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা তাকে বিবস্ত্র করে।

এসময় সেখানে থাকা পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে মুকুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়। এরপর তাকে শহরের সিলভার ক্রিসেন্টে নামের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
  • ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
  • সুসময়ের কোকিলরা টাকা দিয়ে মন জয় করার চেষ্টা করছে : টিপু 
  • জুলাই বিপ্লব স্মরণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মাসব্যাপী কর্মসূচি
  • জুলাই বিপ্লব স্মরণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মাসব্যাপী কর্মসূচি
  • বন্দরে মুকুলের উপর সন্ত্রাসী হামলা, আমির হোসেনের নিন্দা  
  • নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকে বিবস্ত্র করে মারধরের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
  • ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ
  • বন্দরে মুকুলের উপর হামলার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
  • অর্থনীতির গতি ফেরাতে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই: মির্জা ফখরুল