প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টার লিমিটেড ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নামে চালু করা বর্ষসেরা সাংবাদিকতার পুরস্কার এ বছর পেয়েছেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।

প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীর পাঁচ তারকা র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে আয়োজিত সুধী সমাবেশে সাংবাদিক শওকত হোসেনের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। নানা শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনদের নিয়ে চলছে এই অনুষ্ঠান। সেখানে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। শওকত হোসেনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টার লিমিটেড ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান এবং প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।

সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সাল থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নামে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এবার নিয়ে পঞ্চমবার এই পুরস্কার দেওয়া হলো। প্রথমবার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম। দ্বিতীয়বার প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, তৃতীয়বার প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল এবং গত বছর প্রথম আলোর উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া এ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

এ বছর পুরস্কারজয়ী শওকত হোসেন ২০০৪ সাল থেকে প্রথম আলোতে কর্মরত। অর্থনীতিবিষয়ক স্বনামধন্য রিপোর্টার ও কলামিস্ট শওকত হোসেন এখন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম আলোর বার্তাকক্ষের ডিজিটাল রূপান্তরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এসব কারণে তিনি এবার এই পুরস্কার পেলেন। এর আগে তিনি প্রথম আলোয় বাণিজ্য সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, হেড অব রিপোর্টিংসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।

শওকত হোসেন পুরস্কার পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার ৩২ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ২১ বছরের বেশি সময় কাটছে প্রথম আলোয়। এই লম্বা সময়ের মধ্যে আজকেই আমি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত বোধ করছি লতিফুর রহমান বর্ষসেরা সাংবাদিকতার পুরস্কার পেয়ে। অনেক শ্রদ্ধা প্রয়াত চেয়ারম্যানের প্রতি, ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের পরিচালনা বোর্ডকে।’

স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র তৈরিতে লতিফুর রহমানের অবদান তুলে ধরে শওকত হোসেন বলেন, ‘আর প্রথম আলোর সম্পাদক স্বাধীন, সৎ ও সুসাংবাদিকতার চর্চা করতে প্রতিনিয়তই শিখিয়ে যাচ্ছেন। আমার ও আমাদের অনেক সৌভাগ্য যে মতি ভাইয়ের (প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান) মতো একজন সম্পাদকের নেতৃত্বে কাজ করতে পারছি।’

সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়ে শওকত হোসেন বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে থেকে আরও ভালো সাংবাদিকতা করে যেতে হবে, আজকের পুরস্কার আমাকে এই অনুপ্রেরণাই দিচ্ছে। স্বাধীন ও সৎ সাংবাদিকতা সহজ নয়। ধরনও প্রতিনিয়ত বদল হচ্ছে। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা সবাই এগিয়ে যাব, পুরস্কার হাতে নিয়ে এই প্রত্যয়ের কথাই জানালাম।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন প রথম আল র র প রথম আল র শওকত হ স ন প রস ক র প র প রস ক র ব দ কত র হ ড অব

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে বিএনপি নেতার ‘চাঁদাবাজির’ ভিডিও ভাইরালের পর বাড়িছাড়া কর্মী

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকারের টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, তিনি চাঁদার টাকা লেনদেন করেছিলেন। গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপি নেতার ভয়ে বাড়িছাড়া দলের এক কর্মী। অন্যদিকে শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনার পর থেকে বাড়িছাড়া দলের আরেক কর্মী। ইতিমধ্যে তাঁরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে দুটি আবেদন করেছেন।

ভুক্তভোগী দুজন হলেন কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য শেখ শহিদুল ইসলাম ও কাশিমপুর থানার জিয়া মঞ্চের সভাপতি আফজাল হোসেন। এর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারের সঙ্গে আফজাল হোসেনকে দেখা গিয়েছিল।

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর শওকত হোসেন সরকার সংবাদ সম্মেলন করে চাঁদাবাজির অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাঁকে ঘায়েল করতে না পেরে চরিত্রহননের নোংরা পথে নেমেছে। এ নিয়ে তিনি আদালতে মানহানির অভিযোগে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ওই দুজনকে আসামি করা হয়।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নিজের বাসভবনের বসার কক্ষে মুখোমুখি বসে আছেন বিএনপি নেতা শওকত হোসেন ও আফজাল হোসেন। তাঁর ঠিক উল্টো পাশ থেকেই ভিডিওটি করা হয়। ভিডিওতে আফজালকে বলতে শোনা যায়, ‘আমারে সাইদুল ভাই ফোন দিছিল তিনটার দিকে। ভাই (শওকত), সাইদুল ভাই কি কিছু কইছে আপনেরে? জবাবে শওকত বলেন, ‘তোরা আইতে পারস এইটা বলছে।’ এ সময় আফজাল নিজের পকেট থেকে টাকার বান্ডিল বের করে শওকতের হাতে দিয়ে বলেন, ‘এখানে ২৫ হাজার টাকা কম আছে, এই মাসে মোটামুটি ২২ দিন অফিস চলছে, ডিউটি সব সময় ১০টা পর্যন্ত অইতো। গত মাসে কাম কম অইছে, এ জন্য টাকা কম হইল।’ তখন বিএনপি নেতা বলেন, ‘ঠিক আছে, যা হইছে তাই।’

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার। তখন তিনি বলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে জড়িয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে আফজাল হোসেন নামের এক ব্যক্তির বক্তব্য তুলে ধরা হয় এবং তাঁকে টাকা দেওয়ার একটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওর টাকার লেনদেনের অংশটি সত্য। তবে সেটি চাঁদাবাজির নয়, গাড়ি বিক্রির টাকা।

ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর আফজাল হোসেন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রোববার তিনি মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি আবেদন করেন। এ ছাড়া গত শনিবার সকালে শেখ শহিদুল ইসলাম নামে দলের আরেক কর্মীও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, ‘অভিযোগ দুটি পেয়েছি। আমাদের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

আফজাল হোসেন আবেদনে উল্লেখ করেন, তিনি মহানগর বিএনপির সভাপতির সঙ্গে রাজনীতি করার সময় ১৮ বছর ধরে পারিবারিকভাবে ব্যবসা করে আসছিলেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাঁর ব্যবসার দিকে বিএনপি নেতা শওকত হোসেনের নজর পড়ে। তিনি তাঁকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে বলেন এবং এককালীন ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তিনি চাঁদা দিতে সম্মত হন এবং প্রতি মাসে চাঁদা দিয়ে আসছিলেন। যার কিছু ভিডিও নাজমুস সাকিব নামের ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত হয়। এরপর ২৬ অক্টোবর শওকত হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলা করেন।

আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর শওকত সরকারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে আওয়ামী লীগ ও জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আমি আমার জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

অন্যদিকে আবেদনে শহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তিনি মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেনের সঙ্গে রাজনীতি না করে এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে রাজনীতি করায় গত ১৪ মার্চ তাঁকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হয়। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর গত ২৬ মে স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতা আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় তাঁর বাবার কেনা একমাত্র বসতবাড়ি জোর করে দখল করে নেন। তাঁকেসহ তাঁর পরিবারকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। ওই বাড়িতে তাঁর বাবার কবরও রয়েছে। এ নিয়ে তিনি থানা, সেনাক্যাম্প ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সাংবাদিকেরা বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর সাক্ষাৎকার নেন। সেই বক্তব্য নাজমুস সাকিব নামের একজনের ফেসবুকে প্রচারিত হয়। এতেই বিপত্তি বাধে।

শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ওই ভিডিও প্রচারের পর গত ২৬ অক্টোবর শওকত হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। এ ছাড়া তাঁর লোকজন সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু আমার পিতৃভূমি ও পিতা-মাতার কবর রক্ষা করতে চেয়েছি। কিন্তু সত্য বলার কারণে আজ আমি ও আমার পরিবার জীবননাশের আশঙ্কায় রয়েছি।’

অভিযোগ অস্বীকার করে শওকত হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত যা রায় দেবেন, আমি তাই মেনে নেব। এ ছাড়া তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙার বিষয়টিও জানা নেই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে বিএনপি নেতার ‘চাঁদাবাজির’ ভিডিও ভাইরালের পর বাড়িছাড়া কর্মী