মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি
Published: 24th, June 2025 GMT
দেশের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশি টহল, নজরদারি বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছে মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমসিএবি)।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমসিএবি এই দাবি জানায়।
‘ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানসমূহে ছিনতাই, ডাকাতিসহ হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং সমগ্র দেশব্যাপী অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা পরিচালনার প্রতিবাদে’ এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সারা দেশের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিনতাই, ডাকাতিসহ হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও এমসিএবির মনোনীত প্রতিনিধি সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। এই টাস্কফোর্স অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালাবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছিনতাই-ডাকাতি হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়া বা যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
এমসিএবির মহাসচিব গৌতম দে বলেন, ৫ আগস্টের পর মবের নামে সুযোগসন্ধানীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছিনতাই, ডাকাতিসহ হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। অবিলম্বে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা জরুরি। একই সঙ্গে ছিনতাই ও ডাকাতি হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ ছ নত ই হয়র ন
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। দুর্বৃত্তরা যখন এক ভদ্রলোককে নিশানা করে ‘এই পাইছি, তোরা আয়’ বলে সহযোগীদের ডাকছিল, তখন আসাদুজ্জামান পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে ঘটনার ছবি তুলছিলেন। এরপর পাঁচ–ছয়জন দুর্বৃত্ত তাঁকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। তিনি দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাননি। তারা দোকানে ঢুকে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এটা গাজীপুরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আগের দিন বুধবার নগরীর সাহাপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের আক্রমণে আনোয়ার হোসেন নামের আরেক সাংবাদিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত সাত মাসে গাজীপুরে শতাধিক হত্যা ও অসংখ্য ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও জননিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ভূমিকা নিতে না পারা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে দেশের আরও অনেক স্থানের মতো গাজীপুরেও মব সন্ত্রাস বেড়ে যায়। এসব সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য যারা দায়ী, সরকার তাদের না ধরে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে একজন নারীও আছেন। এই অপরাধী চক্র দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে এলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যে ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান নিহত হন, তা–ও ছিল অপরাধীদের অপকৌশলের অংশ।
আসাদুজ্জামান দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি, যিনি দুটি কাজ করে সংসার নির্বাহ করতেন। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাজীপুরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার পেছনে পেছনে হাঁটে। তারা যদি জানেই যে সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র আছে, তাদের ধরতে আগে থেকে অভিযান চালাল না কেন?
পুলিশের লোকবলের অভাব আছে, মানুষ এই অজুহাত শুনতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত আছেন। এতগুলো বাহিনী দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে ছিনতাই–ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটতে থাকলে মানুষ কীভাবে ভরসা পাবে? গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে একজন সাংবাদিক খুন হওয়ার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকদের চৈতন্যোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। তাঁরা বরাবরের মতো সাংবাদিকদের ওপর সরকার কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না বলে সাফাই গাইছেন। সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
কেবল গাজীপুর নয়, সারা দেশেই জননিরাপত্তা হুমকির মুখে। সন্ত্রাসীরা যদি একজন কর্তব্যরত সাংবাদিককে খুন করে পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পর বিশৃঙ্খল অবস্থাকে সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বলে চালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এক বছর পরও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। থানা–পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধের কমবেশি পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা যাবে না। তারা তখনই আশ্বস্ত হবে, যখন দেখবে সরকার সত্যি সত্যি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সন্ত্রাসীদের হাতে যে সাংবাদিক নৃশংসভাবে খুন হলেন, কোনোভাবেই তাঁকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু জননিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আগেই সরকারকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।