ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে এই রায় ঘোষণা হওয়ার কথা। রায় ঘোষণা আদালত থেকে সরাসরি সম্প্রচার করে দেশের মানুষকে দেখানোর সুযোগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। 

আরো পড়ুন:

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন

শেখ হাসিনার মামলার রায়: ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি ফখরুলের

রায় ঘোষণা ঘিরে আগে ও পরে যাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নাশকতা না ঘটাতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে জোরদার তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও যৌথ বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানী ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

রবিবার (১৬ নভেম্বর) বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো.

শরীফুল ইসলাম এই তথ্য দিয়েছেন।

বিজিবি জানায়, ​সাম্প্রতি রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ এবং বিভিন্ন মহাসড়কসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটায় সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে, যা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ​জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল চত্বর ও এর আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে বহু স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। আইনজীবীদেরও পরিচয় যাচাই করে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে নিদর্শনা দেওয়া হয়েছে।

মোতায়েন থাকবে বিজিবি ও ডিএমপির সাঁজোয়া যান। রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে পুলিশ, র‌্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাজনৈতিক কার্যালয় এবং কৌশলগত মোড়গুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করেছে। 

মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, যৌথ অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ, র‍্যাবের সঙ্গে বিজিবি এবং সেনাবাহিনী সদস্যরা যৌথভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে কাজে করে যাচ্ছে। ঢাকার প্রবেশপথ, আবাসিক হোটেল, মেস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বিশেষ তল্লাশি ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। 

নজরদারি করা হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। গ্রুপ ও মেসেঞ্জার পর্যবেক্ষণ করছেন গোয়েন্দারা। একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জেলা, উপজেলা শহরগুলোতেও। এসব স্থানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।

মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে এসব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, নগরীতে ককটেল, বোমা বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ কিম্বা নাশকতা করলে গুলি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রায়কে ঘিরে রাজধানীতে দুষ্কৃতকারীদের করার কিছু নেই। রাজধানীবাসীরও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং অভিযান চালিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তেমন কিছু হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। 

রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সংঘাতের আশঙ্কা থাকায় মাঠ প্রশাসনকে যেকোনো উস্কানিমূলক তৎপরতা প্রতিরোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ​আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জনগণকে গুজবে কান না দিতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে বিভিন্ন যানবাহনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল আগুন দিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। ১৭ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে শঙ্কার কিছু নেই। নাশকতাকারীদের দমনে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও মাঠে কাজ করছেন।

পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের পাশাপাশি এলিট ফোর্স র‌্যাবও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকায় বাড়ানো হয়েছে টহল, বসানো হয়েছে তল্লাশি চেক পোস্ট। পাড়া-মহল্লা, অলিগলি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ স্পর্শকাতর স্থানে বাড়ানো হয়েছে র‍্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ভেদ করে কোনো দুষ্কৃতকারী বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না বলে মনে করছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

ঢাকা/এমআর/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ রক ষ ক র সতর ক অপর ধ ন শকত

এছাড়াও পড়ুন:

ইমাম শাফেয়ি (রহ.): আলেম কবি, তত্ত্বজ্ঞানী ইমাম ও উসুল শাস্ত্রের পথিকৃৎ

ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আল-শাফেয়ি। কুরাইশ বংশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। তাঁর বংশধারা মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রপিতামহ আবদে মানাফের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের চার মহান ইমামের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর আগে রয়েছেন ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম মালিক (রহ.)।

তিনি এক অসামান্য প্রতিভার অধিকারী, যিনি ফিকহ তথা ইসলামের আইনশাস্ত্রকে সুশৃঙ্খল রূপ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় হিজরি শতকের ‘মুজাদ্দিদ’ বা সংস্কারক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ‘আর-রিসালা’ গ্রন্থ লিখে ‘উসুলে ফিকহ’ বা ইসলামি আইনশাস্ত্রের মূলনীতিগুলো লিপিবদ্ধ করেন।

তিনি ছিলেন ফিকহ, হাদিস ও তাফসির শাস্ত্রের ইমাম। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন উঁচু দরের সাহিত্যিক ও কবি। যুগে যুগে মুসলিম উম্মাহর মাঝে তাঁর জ্ঞান ও প্রভাব আজও অম্লান।

জন্ম ও শৈশব

১৫০ হিজরি সনের রজব মাসে (৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তাঁর বাবা ইন্তেকাল করেন। বাবার চেহারাটুকুও তাঁর স্মৃতিতে ছিল না।

তাঁর মা ফাতিমা বিনতে আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন মহীয়সী নারী। ছেলের বংশপরিচয় যেন হারিয়ে না যায়, সেই আশঙ্কায় তিনি দুই বছরের শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন। যেখান থেকে ইসলামের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, মক্কার সেই পবিত্র ভূমিতেই তিনি বেড়ে ওঠেন।

জ্ঞানার্জন ও নিজেকে গড়ে তোলা

কিশোর বয়সেই তাঁর জ্ঞানতৃষ্ণা প্রকাশ পায়। প্রচণ্ড দারিদ্র্য সত্ত্বেও তাঁর মা তাঁকে শিক্ষকের কাছে পাঠান। মাত্র সাত বছর বয়সেই তিনি সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে ফেলেন।

সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলতেন, ‘আমি এতিম ছিলাম, আমার মায়ের কোনো অর্থকড়ি ছিল না। শিক্ষক যখন কোথাও যেতেন, আমি তাঁর স্থানে অন্যদের পড়াতাম, আর তাতেই তিনি সন্তুষ্ট থাকতেন।’

অসাধারণ মেধা আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ছটা তাঁর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই দেখা যায়। তাঁর মা তাঁকে পবিত্র কাবার শাইখদের কাছে কোরআনের তাফসির শিখতে পাঠান। এরপর তিনি হাদিস শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়েন। তাঁর স্মরণশক্তি ছিল প্রবাদতুল্য।

ভাষার প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল প্রবল। তিনি আরবের বেদুইনদের কাছ থেকে বিশুদ্ধ আরবি ভাষা ও প্রাচীন কবিতা শিখতে আগ্রহী হন। কারণ, কোরআনের প্রকৃত অর্থ ও মর্ম বুঝতে হলে ভাষার অলংকার ও কাব্যশাস্ত্র জানা প্রয়োজন। তৎকালীন মিসরের ইমাম লাইস ইবনে সা’দ তাঁকে এই পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুনইমাম তাবারি: জ্ঞানী, দুঃসাহসী, মর্মান্তিক জীবন০২ নভেম্বর ২০২৫ইসলামি ক্যালিগ্রাফিতে লেখা ইমাম শাফেয়ির নাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনাসহ অন্যদের মামলার রায় যা-ই হোক না কেন, তা কার্যকর হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ঢাকাসহ ৪ জেলায় বিজিবি মোতায়েন
  • ঢাকা-গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-মাদারীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে বিজিবি
  • শাটডাউনের বিপক্ষে জনজীবন
  • জানমালের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন
  • বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে নির্বাচনে অসুবিধা নেই: উপদেষ্টা
  • তফসিলের আগেই লটারির মাধ্যমে মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ১৭ নভেম্বর ঘিরে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ইমাম শাফেয়ি (রহ.): আলেম কবি, তত্ত্বজ্ঞানী ইমাম ও উসুল শাস্ত্রের পথিকৃৎ