আড়াই শ বছরের পুরোনো যে মন্দিরে চালু হয়েছিল বিদ্যালয়
Published: 25th, June 2025 GMT
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাণীগ্রাম বাজারের পাশ দিয়ে গেলে সড়কের পশ্চিম দিকে চোখে পড়বে একটি পরিত্যক্ত মন্দির। চার গম্বুজ এবং একটি বড় কেন্দ্রীয় গম্বুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই স্থাপনাটি শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, এটি সাক্ষী হয়ে আছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিক্ষার উন্মেষের।
এই মন্দির থেকেই ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করেছিল বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চবিদ্যালয়। শুরুর বছর ছিল মাত্র সাতজন ছাত্র, দুজন শিক্ষক। মন্দিরটির চারপাশে বেড়া দিয়ে বানানো হয় শ্রেণিকক্ষ, বারান্দায় চলত পাঠদান। কয়েক বছর পর বিদ্যালয় নতুন ভবনে স্থানান্তর হলেও, এই মন্দিরই হয়ে ওঠে আবাসিক ছাত্রাবাস—যেখানে শতবর্ষজুড়ে বসবাস ও পড়াশোনা করেছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী।
জানা গেছে আড়াই শ বছরের পুরোনো শিখ মন্দিরটিতে বিগত এক শ বছরের বেশি সময় কোনো প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় না। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন ওই এলাকা ছেড়ে যাওয়ায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বহু আগেই এটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। আর সেই পরিত্যক্ত ভবনেই গড়ে ওঠে বাণীগ্রাম সাধনপুর বিদ্যালয়।
যেভাবে মন্দির ভবনে বিদ্যালয়
বাঁশখালী নিয়ে রচিত বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থেও এই শিখ মন্দিরে বানীগ্রাম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জানা যায়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ওই এলাকার এক সময়কার প্রতাপশালী জমিদার রায় পরিবারের হাতে। শিক্ষানুরাগী ও সংস্কৃতিমনা রায় পরিবারের নিজস্ব পাঠাগার ছিল। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় সেই পাঠাগারের বই আর আসবাবও দান করে দেন তারা।
রায় পরিবারের তিন ভাই গিরীন্দ্র চন্দ্র রায়, সুরেন্দ্র চন্দ্র রায় এবং নগেন্দ্র কুমার রায় এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সুরেন্দ্র চন্দ্র রায় চট্টগ্রাম জেলার অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ১৯১৭ সালে তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের। প্রথম বছর ছাত্র ছিল মাত্র ৭ জন আর শিক্ষক ছিলেন দুজন। ১৯১৯ সালে বিদ্যালয়টি বাঁশখালীর প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি লাভ করে। ১৯২০ সালে দশম শ্রেণি খোলার পর এটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপ নেয়। ১৯২১ সালে বিদ্যালয় থেকে প্রথমবারের মতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ওই ৭ জন অংশ নেন।
জানা গেছে, পরিত্যক্ত শিখ মন্দিরটি বিদ্যালয়ের জন্য সংস্কার করা হয়েছিল তাদের টাকায়। এর চতুর্দিকে বারান্দাও তৈরি তরা হয়েছিল। ওই সময় তাঁদের বাড়ির পাঠাগারের বহুদিনের সঞ্চিত বই ও আলমারি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন।
মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত বানীগ্রাম বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শতবর্ষপুর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা থেকে নেওয়া।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বনিকবাড়ির শতবর্ষী পূজা
এ বাড়ির নিচতলায় কয়েকটি ঘরে কাঁসাশিল্পের নানা নিদর্শনের প্রদর্শনী কেন্দ্র আর কয়েকটিতে কাঁসার বিভিন্ন তৈজসপত্র ও শিল্পকর্ম তৈরির কারখানা। ওপর তলায় সুকান্ত বনিকেরা থাকেন।
সুকান্ত বনিক জানান, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এ বাড়িতে দুর্গাপূজা হচ্ছে। পঞ্চম পুরুষের পূজা চলছে। তিনি বলেন, সাত বছর ধরে পূজায় অষ্টধাতুর দুর্গাপ্রতিমা ব্যবহার করা হচ্ছে। ৫২০ কেজি ওজনের ৮ ফুট উঁচু প্রতিমাটি শুধু পূজার সময় বের করা হয়।
মানসী বণিকের তত্ত্বাবধানেই হয় পূজার রান্নাবান্না