‘প্রত্যেক মানুষের মুখচ্ছবিই একেকটা গল্প’
Published: 27th, June 2025 GMT
নাসির আলী মামুন, আমাদের দেশের আলোকচিত্র শিল্পের একজন ‘ব্র্যান্ড’। আমাদের গর্ব। মূলত তাঁর হাত ধরেই দেশে পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির সূচনা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় আট হাজার মানুষের লক্ষাধিক ছবি তুলেছেন তিনি। দেশে-বিদেশে তার ৫০টির বেশি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশ্চাত্যে যেমন ইউসুফ কার্শ বা রিচার্ড এভেডনরা পোর্ট্রেইট শিল্পের ‘ব্র্যান্ড’; তেমনি আমাদের দেশে তথা এই উপমহাদেশে নাসির আলী মামুন তেমনই একজন। এই পথিকৃতের মতে, ‘প্রত্যেক মানুষের মুখচ্ছবিই একেকটা গল্প।’
কবি শামসুর রাহমান তাঁকে ‘ক্যামেরার কবি’ উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি নাসির আলী মামুনকে বিশ্বের সেরা আলোকচিত্রীদের একজন মনে করতেন। চিত্রশিল্পী সুলতান বলেছিলেন, ‘নাসির আলী মামুন ছাড়া অন্য কেউ আমাকে তাঁর ক্যামেরায় ধারণ করতে পারবে না।’
নাসির আলী মামুনের সব কাজের মধ্যে অন্যতম ‘লালমিয়া’ মানে শিল্পী সুলতান। অনেক বছর ধরে তাঁর ছবি তুলেছেন। অন্য কেউ এই কাজটি করতে পারেননি। এত কাছ থেকে সুলতানকে কেউ ক্যামেরায় বন্দি করতে পারেননি। সুলতান বাদে আর যাদের নিয়ে লম্বা সময় কাজ করেছেন তারা হলেন ড.
গত বছর প্রবাসী ফিল্মমেকার মকবুল চৌধুরী তাঁকে নিয়ে ‘ছায়াবন্দনা’ তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শো করেন শিল্পকলায়। এটি ছিল দেশের কোনো আলোকচিত্রীকে নিয়ে প্রথম তথ্যচিত্র। নাসির আলী মামুনের সাক্ষাৎকারধর্মী বই ‘আলো ছায়ার নাসির আলী মামুন’ ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুনেম ওয়াসিফ। সেটিও ছিল কোনো আলোকচিত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশিত প্রথম বই। আমরা জানি, তিনি কেবল বিখ্যাত মানুষের অবয়ব তোলেন, তা কিন্তু নয়। তিনি আড়াই শতাধিক বিষয় নিয়ে ছবি তুলেছেন; যার অধিকাংশ অপ্রকাশিত। বাংলাদেশের আলোকচিত্র নিয়ে প্রচুর চিন্তাভাবনা করেন এই বরেণ্য আলোকচিত্রী। শিল্পকলায় ‘আলোকচিত্র বিভাগ’ ও সরকারিভাবে জাতীয় আর্কাইভ করার দাবি নিয়ে অনেকবার কথা বলেছেন
মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারেন তিনি অতি দক্ষতার সঙ্গে। তাঁর ‘ঘর নাই’ সাক্ষাৎকারমূলক বইটি শহরের ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে, যাদের ‘হোমলেস’ বলে। এই ধরনের কাজও আর কেউ করেনি।
তরুণদের সবসময় উদ্দীপ্ত করেন এই বরেণ্য আলোকচিত্রী। ২০১৭ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে একটি ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীতে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের ফটোগ্রাফি শিখতে কোনো গুরু বা কোথাও প্রশিক্ষণ নেওয়ার দরকার নেই, ইউটিউব আর গুগল থাকলে আর কিছু লাগে না।’ এই কথা তিনি আগে ও পরে আরও অনেক জায়গায় বলেছেন। আমার মতো অনেকেরই হয়তো মনে গেঁথে গিয়েছিল।
তাঁর আরেকটি গুণ, যা অনুকরণীয় ও অনুপ্রেরণা দেয় তা হলো– ৭২ বছর বয়সেও তিনি থেমে নেই, এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস ধরে রাখতে যেভাবে তিনি অবদান রেখে যাচ্ছেন তার জন্য এই জাতি তাঁকে স্মরণ করবে আরও শত শত বছর ধরে। তবে তাঁর স্বপ্নের ‘ফটোজিয়াম’ স্বপ্নই রয়ে গেল আজও। ৫৩ বছর ধরে মানুষের অবয়ব তিনি তুলেছেন, জাতির জন্য এটি এক ‘অমূল্য’ সম্পদ।
প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমেদ তাঁর কাজকে ইউসুফ কার্শ-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর প্রিয় শিল্পীর তালিকায় আছেন কার্শ, এভেডন, এনি লেইবোভিজ, রবার্ট ম্যাপেলথর্প। প্রথম তিনজনের সঙ্গেই তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে আমেরিকায়।
অনেক সংগ্রাম, আর্থিক সংকট, বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে তিনি তাঁর প্রিয় কাজটি করে যাচ্ছেন। এই বিপুল সংগ্রহ সংরক্ষণের জন্য ‘ফটোজিয়াম’ নামে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। জীবনের এই পরিণত সময়ে এসে তিনি মনে করেন, যে কাজ করে গেছেন গত পাঁচ দশক ধরে, তার মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করবে মানুষ। নাসির আলী মামুন বলেন, ‘জীবনে কিছু দুঃখবোধ আছে। তবে এ জীবনে অসন্তুষ্ট নই। জীবন একদিন শেষ হবে। এই উপলব্ধি আনন্দ দেয় যে, ক্ষুদ্র জীবনে কিছু অন্তত করে যেতে পেরেছি।’ v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গল প ন স র আল আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করব
ইসলামে অসুস্থতা একটি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মুমিনের ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসাকে শক্তিশালী করে। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করা একটি ফজিলতপূর্ণ আমল, যা রোগীর জন্য শান্তি ও সুস্থতা নিয়ে আসে এবং দোয়াকারীর জন্য আল্লাহর রহমত অর্জনের মাধ্যম।
মহানবী (সা.) অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন, যা হাদিসে বর্ণিত আছে।
রোগীকে দেখতে গিয়ে তার জন্য দোয়া করা এবং মনোবল বাড়ানো সুন্নাহ। রোগীকে ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে উৎসাহিত করা উচিত।অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়াইসলামে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার ব্যাপারে নবীজি (সা.) কয়েকটি নির্দিষ্ট দোয়া শিখিয়েছেন। এই দোয়াগুলো রোগী নিজে পড়তে পারেন বা অন্য কেউ রোগীর জন্য পড়তে পারেন। নিচে কয়েকটি প্রধান দোয়া উল্লেখ করা হলো:
১. নবীজি (সা.)-এর শেখানো দোয়া
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) অসুস্থ ব্যক্তির জন্য এই দোয়া পড়তেন:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান নাস, আযহিবিল বাস, ইশফি আনতাশ শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফাউক, শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামা।
অর্থ: হে আল্লাহ! মানুষের প্রভু, রোগ দূর করো, সুস্থতা দাও, তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার সুস্থতা ছাড়া কোনো সুস্থতা নেই, এমন সুস্থতা দাও যা কোনো রোগ রাখে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৪৩)
পড়ার নিয়ম:
রোগীর ডান হাত দিয়ে তার কপাল বা শরীরের ব্যথার স্থানে হাত রেখে এই দোয়া পড়া।
তিনবার বা সাতবার পড়া উত্তম।
রোগী নিজে পড়তে পারেন বা অন্য কেউ রোগীর জন্য পড়তে পারেন।
আরও পড়ুননববিবাহিতদের জন্য তিনটি দোয়া২১ জুলাই ২০২৫২. সুরা ফাতিহা পড়া
সুরা ফাতিহা রোগ নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে আছে, সুরা ফাতিহা শিফা বা নিরাময়ের জন্য পড়া যায়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন সাহাবি সুরা ফাতিহা পড়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে দিয়েছিলেন, এবং নবীজি (সা.) এটি অনুমোদন করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৬)
যখন তুমি কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করো, ফেরেশতারা বলে, ‘আমিন, তোমার জন্যও তা–ই হোক।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৩২পড়ার নিয়ম:
সুরা ফাতিহা সাতবার পড়ে রোগীর শরীরে ফুঁ দেওয়া।
রোগীর কপালে বা ব্যথার স্থানে হাত রেখে পড়া উত্তম।
৩. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস
এই তিনটি সুরা (সুরা ইখলাস: ১১২, সুরা ফালাক: ১১৩, সুরা নাস: ১১৪) অসুস্থতা থেকে সুস্থতা ও সুরক্ষার জন্য পড়া হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) অসুস্থ হলে এই তিনটি সুরা পড়তেন এবং শরীরে ফুঁ দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৫,০১৭)
তিনটি সুরা তিনবার করে পড়া।
পড়ার পর হাতে ফুঁ দিয়ে রোগীর শরীরে মুছে দেওয়া।
৪. সাধারণ দোয়া
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নিজের ভাষায়ও দোয়া করা যায়। উদাহরণ: ‘হে আল্লাহ! আমার/তার রোগ দূর করো, সুস্থতা দান করো, তুমি সব ক্ষমতার মালিক।’ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মূল।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭১)
নিজের ভাষায় দোয়া করার সময় আন্তরিকতা ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা জরুরি।
আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫অসুস্থ ব্যক্তির জন্য আমলনবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, তার জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন: তুমি পবিত্র হও, তোমার পথ পবিত্র হোক এবং তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৬৮)
রোগীকে দেখতে গিয়ে তার জন্য দোয়া করা এবং মনোবল বাড়ানো সুন্নাহ। রোগীকে ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে উৎসাহিত করা উচিত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন ধৈর্যের সঙ্গে অসুস্থতা সহ্য করে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৫২)
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ রোগী দুর্বল অবস্থায় থাকে এবং তার দোয়া আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পায়।অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার ফজিলত অপরিসীম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করো, ফেরেশতারা বলে, ‘আমিন, তোমার জন্যও তা–ই হোক।’’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৩২)
এছাড়া, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ রোগী দুর্বল অবস্থায় থাকে এবং তার দোয়া আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পায়।
দোয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা গ্রহণ করা, কারণ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি রোগের জন্য চিকিৎসা রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৭৮)
দোয়া করার সময় শিরক বা অপ্রমাণিত পদ্ধতি এড়ানো দরকার। শুধু কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া ব্যবহার করব আমরা।
আরও পড়ুনদোয়া কীভাবে করতে হয়২০ এপ্রিল ২০২৫