প্রতি গোলে ১০০টি করে গাছ লাগায় ব্রাজিলের এই ক্লাব
Published: 11th, July 2025 GMT
গত সোমবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয় ক্যারিওকা চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় বিভাগের ম্যাচে দুকি দে কাশিয়াসের বিপক্ষে দলের জয়সূচক গোলটি করেন পেরোলাস নেগরাস মিডফিল্ডার পেপে।
এই গোলে পেরোলাস সেদিন গুরুত্বপূর্ণ একটি জয়ই শুধু পায়নি, বরং নিশ্চিত হয়েছিল ১০০টি গাছের চারা রোপণও। বেশ অভিনব হলেও ২০২৩ সাল থেকে রিও ডি জেনিরোর দক্ষিণ অংশ এবং প্যারাইবা উপত্যকার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পুনর্বনায়ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালন করছে ক্লাবটি।
একটি গোলের বিপরীতে ১০০ গাছ রোপণের এই উদ্যোগ নিয়ে ম্যাচ শেষে গোলদাতা পেপে বলেছেন, ‘আমি আশা করি, আমরা হাজার হাজার গাছ লাগাতে পারব। যে পৃথিবীতে আমরা বাস করি, সেখানে আমাদের অন্যদের কথাও ভাবতে হবে।’
আরও পড়ুনজার্মানি ৭-১ ব্রাজিল: যে বেদনা চিরন্তন, যে যন্ত্রণার শেষ নেই০৮ জুলাই ২০২৫পেরোলাস ক্লাবের এই ক্যাম্পেইনে দলটির পুরুষ ও নারী পেশাদার দল এবং পুরুষদের অনূর্ধ্ব-২০ দল অন্তর্ভুক্ত আছে। যেখানে এই দলগুলোর করা প্রতিটি গোলের জন্য স্থানীয় প্রজাতির ১০০টি গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করা হয়। দুই বছর আগে ক্লাবের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে ভারসাম্য আনতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্প অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও বিস্তৃত হয়েছে। এর মধ্যে চালু করা হয়েছে পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা কার্যক্রম। যেখানে খেলোয়াড়, ক্লাবের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে, যা প্রায় ১৯টি ফুটবল মাঠের সমান এলাকাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। আশা করা হচ্ছে চার বছর পর গাছগুলো বড় হয়ে উঠবে এবং সেই এলাকা ছোটখাটো একটি বনাঞ্চলে পরিণত হবে।
নিজেদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে পেরোলাস নেগরাসের পরিবেশ সমন্বয়কারী লুইজ ওটাভিও সিলভা বলেছেন, ‘ক্লাবেরও দায়িত্ব আছে। তাদেরও উচিত যেকোনো কোম্পানির মতো, তারা যে দূষণ করে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া। পেরোলাস শুধু ক্ষতিপূরণই দেয় না, বরং খেলোয়াড়দেরও এতে যুক্ত করার মাধ্যমে বিষয়টা বুঝতে পেরেছে। পাশাপাশি এটাও উপলব্ধি করা যে ভবিষ্যতের জন্যও আমাদের কিছু রেখে যেতে হবে।’
পেরোলাস তাদের পরিবেশবিষয়ক এই প্রকল্প সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে সফলভাবে কাজ করছে। সম্প্রতি পশুপালন করা হতো এমন জমিতে তারা গাছ রোপণের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে, যা একটি দাতব্য কোম্পানি দান করেছে। সেখানে ক্লাবের খেলোয়াড়েরা রিও ডি জেনিরো রাজ্যের সরকারি পানি ও স্যানিটেশন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘সেডায়ে’ পরিচালিত সামাজিক ও পরিবেশগত কর্মসূচি ‘রেপ্লান্তান্ডো ভিদা’র দলের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন।
আরও পড়ুনব্রাজিলিয়ানের জোড়া গোলে ব্রাজিলের ক্লাবের স্বপ্ন চূর্ণ করে ফাইনালে চেলসি০৯ জুলাই ২০২৫এই কর্মসূচিতে সেমি-ওপেন কারাগারের বন্দীরাও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেন। এখানে তাঁরা শুধু কাজের দক্ষতা অর্জন ও বেতনই পাচ্ছেন না, বরং সাজাও কমে যাচ্ছে। তিন দিন কাজের বিনিময়ে মওকুফ হচ্ছে এক দিনের কারাদণ্ড।
২০০৯ সালে ব্রাজিলের শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে হাইতিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পেরোলাস নেগরাস। ২০১৬ সালে তারা ব্রাজিলে আসে এবং রিও ডি জেনিরোর ফুটবল লিগে খেলা শুরু করে। ফুটবলের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষায়ও তারা কাজ করে যাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমানী উদ্যানে আবার স্থাপনার পেছনে লক্ষ্য ‘টাকা কামানো’: বাপা
রাজধানীর ঐতিহাসিক ওসমানী উদ্যান উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নেতারা। তাঁদের ভাষায়, পুরান ঢাকার ফুসফুসখ্যাত এই উদ্যানকে ঘিরে চলছে ‘অর্থ কামাইয়ের উন্নয়ন’, যার সঙ্গে জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের ইতিহাস বা চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন করেন বাপার নেতারা। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন সংগঠনটির নেতারা।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের নেতৃত্বে উদ্যান পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বাপার সহসভাপতি মহিদুল হক খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা রুহিন হোসেন, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর, ফরিদুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির, নির্বাহী কমিটির সদস্য জাভেদ জাহান, জাতীয় কমিটির সদস্য শেখ আনছার আলী প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গে গ্রীন ভয়েসের নেতা–কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সাল থেকে ওসমানী উদ্যান সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ। এই সময়ে উদ্যান উন্নয়নের নামে ব্যয় হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। এখন সেখানে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণে আরও প্রায় ৪৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, এই উদ্যানের আইনগত মর্যাদা উপেক্ষা করে বারবার অবকাঠামো নির্মাণই এখন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘উন্নয়ন’ নামে উদ্যানের ভেতরে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে আসলে জনগণের সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘এখানে যেটা করা হইতেছে, এটা টাকা বানানো। এর সঙ্গে জুলাই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রমাণটা হলো, এখানে যে ওয়াটার বডিজ আছে, ওখানে গেলেই দেখা যায়, ওখান থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এই স্মৃতি করে লাভটা কী? এই প্ল্যানটা আমি স্মৃতিস্তম্ভ বলি না, এটা স্রেফ মানি মেকিং প্রজেক্ট। আজকে যারা এগুলা (জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ) করছে, এগুলো কিছু মানি মেকিংয়ের জন্য করছে। এর মধ্যে আমি কোনো সঠিক প্ল্যানও দেখছি।’
ওসমানী উদ্যানকে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেই সরকারই আসুক, তাদের মাথায় থাকে শুধু উন্নয়নের নামে টাকা কামানোর চিন্তা। বহুদিন ধরে উদ্যানটা ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা, জনগণ ঢুকতেই পারে না। এই প্রকল্পে জনগণের টাকা লুটপাট ছাড়া অন্য কোনো কর্মকাণ্ড আমি দেখি না। ওসমানী উদ্যান জনগণের সম্পদ। এই উদ্যান উন্মুক্ত থাকা দরকার। বিশেষ করে মেহনতি, সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার ও বিশ্রামের জায়গা হিসেবে। অথচ আজ সেটাকে দখল করে তথাকথিত উন্নয়ন দেখানো হচ্ছে। আসলে এটা পরিবেশ ধ্বংসেরই আরেক নাম।’
ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে গিয়ে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষোভের কথা জানান বাপার নেতারা। এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বাপা নেতাদের বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে ওসমানী উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
আরও পড়ুনওসমানী উদ্যান: ঢাকার ‘ফুসফুসে’ আবার স্থাপনা ১১ অক্টোবর ২০২৫