জাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী ১৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর শাস্
Published: 5th, August 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ১৮৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় সিন্ডিকেট সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি জানান, ঘটনায় জড়িত মোট ২২৯ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, এদের মধ্যে ১৮৯ জনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে এবং বাকি ৪০ জনকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতিপ্রাপ্তদের মধ্যে ২০ জন বর্তমান এবং ২০ জন সাবেক শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার
ব্যাংকে ভাঙচুর-মারধর: যুবদল নেতা বহিষ্কার
জানা গেছে, শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে বর্তমান শিক্ষার্থী ১১০ জন। এদের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার ৬৪ জন, ২ বছরের জন্য বহিষ্কার ৩৭ জন, ১ বছরের জন্য বহিষ্কার আটজন, ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার একজন।
এছাড়া, ৭৯ জন সাবেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৩ জনের সনদ বাতিল এবং ২ বছরের জন্য ৬ জনের সনদ স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিন্ডিকেট এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। শাস্তিপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতায় সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে যাদের কোনো ফুটেজ, সাক্ষ্য বা হামলায় সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাদের শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, “আমাদের এই রিপোর্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে মামলা করা হবে। এক্ষেত্রে আইসিটির প্রসিকিউটরদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন আমাদের এই তথ্যগুলো তাদের মামলার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়াও এর বাইরে যেকোনো তথ্যপ্রমাণে আমরা আইসিটিকে সহযোগিতা করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তিপ্রাপ্ত সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বাইরে হামলায় অংশগ্রহণকারী যেসব পুলিশ, বহিরাগতদের বিভিন্নভাবে সনাক্ত করা গেছে, তাদের তথ্যও আইসিটিতে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি ।
গত বছরের জুলাই মাসে ক্যাম্পাসে সংঘটিত আন্দোলন দমনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে ১৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু হলের সামনে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এবং উপাচার্যের বাসার ভিতরে হামলা করা হয় । এতে বহু শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বছর র জ র জন য আইস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক