কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদকে (ইয়াছিন) দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভের পাশাপাশি মশাল জ্বালিয়ে নগরে মিছিল করেছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আমিন-উর-রশিদের অনুসারী কয়েক শ নেতা–কর্মী কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগরপাড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে মশালমিছিল বের করেন। তাঁরা মশাল ও ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে নগরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন। শেষে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ‘অবৈধ প্রার্থী, মানি না মানব না’, ‘আমি কে তুমি কে, ইয়াছিন ভাই ইয়াছিন ভাই’, ‘জেল জুলুম কারাগারে ইয়াছিন ভাই, আমরা সবাই তাঁকে চাই’, ‘নেতা–কর্মীদের সুখে-দুঃখে ইয়াছিন ভাই, ইয়াছিন ভাই’—এমন স্লোগানে দিতে থাকেন তাঁরা।

সদর আসন হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা-৬ আসনটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলা এবং সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়।

এরপর সোমবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর এলাকায় প্রথমে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আমিন-উর-রশিদের অনুসারী বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাত ১১টার দিকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচরে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখানেও টায়ার জ্বালিয়ে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তাঁরা। আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করছেন আমিন–উর–রশিদের অনুসারীরা।

বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, কুমিল্লা-৬ আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে আগলে ধরে রাখা ত্যাগী নেতা আমিন-উর-রশিদকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। এই আসনে ইয়াছিনের বিকল্প কেউ প্রার্থী হলে নেতা-কর্মীরা সেটা কখনোই মেনে নেবেন না।

রাত ৯টার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নেতা আমিন-উর-রশির ইয়াছিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর নেতা-কর্মীরা নগরে মশালমিছিল করেছেন। তাঁরা কিছুক্ষণ আগে মিছিল করে চলে গেছেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাজ্জাদ হোসেন নামের একজন বলেন, বিগত ১৭ বছরে দুঃসময় ও দমন-পীড়নের সময় আমিন–উর–রশিদ সব সময় নেতা–কর্মীদের পাশে থেকেছেন। শত শত মামলায় আইনি সহায়তা, পরিবারের খোঁজখবর রাখা, চিকিৎসার খরচ বহন, ঈদসহ বিশেষ সময়ে সহযোগিতা তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে করে আসছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর সাহসী ভূমিকা নেতা–কর্মীদের সব সময় উজ্জীবিত করেছে। যেসব নেতা অতীতে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন, তাঁদের ইন্ধনে একটি মহল আমিন–উর–রশিদকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। অবিলম্বে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি তাঁদের।

আমিন–উর–রশিদ দুই দশক ধরে কুমিল্লা সদরের বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, ২০১৮ সালে তিনি কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকায় কুমিল্লা-১০ আসনের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা-৬ (সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর উপজেলা ও সেনানিবাস এলাকা) আসনে যুক্ত করা হয়। সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর থেকে কুমিল্লা-৬ আসনে কাজ শুরু করেন মনোনয়ন পাওয়া মনিরুল হক চৌধুরী।

অন্যদিকে আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিন ২০১৮ সালে বিএনপির অংশ নেওয়া নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন পেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা সদরে নেতৃত্ব দেওয়া আমিন–উর–রশিদকে বাদ দিয়ে মনিরুল হক চৌধুরীকে এই আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়ায় আমিন–উর–রশিদের অনুসারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও খুশি আসনটিতে দলের মনোনয়ন পাওয়া মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা। তাঁরা উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র ব এনপ র কর ম র ৬ আসন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ

সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’

ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।

সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ