আমিন-উর-রশিদকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মশালমিছিল
Published: 4th, November 2025 GMT
কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদকে (ইয়াছিন) দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভের পাশাপাশি মশাল জ্বালিয়ে নগরে মিছিল করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আমিন-উর-রশিদের অনুসারী কয়েক শ নেতা–কর্মী কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগরপাড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে মশালমিছিল বের করেন। তাঁরা মশাল ও ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে নগরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন। শেষে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ‘অবৈধ প্রার্থী, মানি না মানব না’, ‘আমি কে তুমি কে, ইয়াছিন ভাই ইয়াছিন ভাই’, ‘জেল জুলুম কারাগারে ইয়াছিন ভাই, আমরা সবাই তাঁকে চাই’, ‘নেতা–কর্মীদের সুখে-দুঃখে ইয়াছিন ভাই, ইয়াছিন ভাই’—এমন স্লোগানে দিতে থাকেন তাঁরা।
সদর আসন হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা-৬ আসনটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলা এবং সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়।
এরপর সোমবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর এলাকায় প্রথমে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আমিন-উর-রশিদের অনুসারী বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাত ১১টার দিকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচরে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখানেও টায়ার জ্বালিয়ে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তাঁরা। আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করছেন আমিন–উর–রশিদের অনুসারীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, কুমিল্লা-৬ আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে আগলে ধরে রাখা ত্যাগী নেতা আমিন-উর-রশিদকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। এই আসনে ইয়াছিনের বিকল্প কেউ প্রার্থী হলে নেতা-কর্মীরা সেটা কখনোই মেনে নেবেন না।
রাত ৯টার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাজ্জাদ হোসেন নামের একজন বলেন, বিগত ১৭ বছরে দুঃসময় ও দমন-পীড়নের সময় আমিন–উর–রশিদ সব সময় নেতা–কর্মীদের পাশে থেকেছেন। শত শত মামলায় আইনি সহায়তা, পরিবারের খোঁজখবর রাখা, চিকিৎসার খরচ বহন, ঈদসহ বিশেষ সময়ে সহযোগিতা তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে করে আসছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর সাহসী ভূমিকা নেতা–কর্মীদের সব সময় উজ্জীবিত করেছে। যেসব নেতা অতীতে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন, তাঁদের ইন্ধনে একটি মহল আমিন–উর–রশিদকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। অবিলম্বে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি তাঁদের।
আমিন–উর–রশিদ দুই দশক ধরে কুমিল্লা সদরের বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, ২০১৮ সালে তিনি কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকায় কুমিল্লা-১০ আসনের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা-৬ (সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর উপজেলা ও সেনানিবাস এলাকা) আসনে যুক্ত করা হয়। সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর থেকে কুমিল্লা-৬ আসনে কাজ শুরু করেন মনোনয়ন পাওয়া মনিরুল হক চৌধুরী।
অন্যদিকে আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিন ২০১৮ সালে বিএনপির অংশ নেওয়া নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন পেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা সদরে নেতৃত্ব দেওয়া আমিন–উর–রশিদকে বাদ দিয়ে মনিরুল হক চৌধুরীকে এই আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়ায় আমিন–উর–রশিদের অনুসারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও খুশি আসনটিতে দলের মনোনয়ন পাওয়া মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা। তাঁরা উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ম দ র ব এনপ র কর ম র ৬ আসন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে, ভোট দিয়েছেন মামদানি-কুমো
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন শহরটির বাসিন্দারা। মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের দিন জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক শহর ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ডু কুমোও জয়ের আশা ছাড়েননি।
মঙ্গলবার নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ছয়টায়। শেষ হওয়ার কথা রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৮টা)। এর পরপরই শুরু হওয়ার কথা গণনা। যদিও নিউইয়র্ক শহরের ৪৭ লাখ ভোটারের প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরে এটিই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা।
মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। এদিন শহরের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় একটি কেন্দ্রে ভোট দেন মামদানি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রামা দুয়াজি। ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মামদানি বলেন, ‘শহরে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি আমরা। অতীতের রাজনীতি ত্যাগ করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি।’
এবারের নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর অঙ্গীকার করেছেন মামদানি। তরুণসহ সব বয়সী ভোটারদের মধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন। তার প্রতিফলন দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে। ম্যানহাটান এলাকার একটি কেন্দ্রে মামদানিকে ভোট দেন গ্লোরি মিসান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, শিক্ষা, আবাসন ও গণপরিবহন নিয়ে মামদানির পরিকল্পনাগুলো চমৎকার। সব পরিকল্পনাতেই মানবিকতা রয়েছে।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ভোট দিতে যান স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে। ভোটদানের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ভালোই অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে রয়েছে। জীবনে আমি বহুবার ভোট দিয়েছি। তবে এই প্রথম আমি কোনো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করার সময় সেখানে থাকা ভোটাররা আমাকে বাহবা দিয়েছে। এটি ভালো সংকেত। ভোট পড়ার হারও ভালো সংকেত।’
শেষ জরিপে কমেছে ব্যবধানমেয়র নির্বাচন ঘিরে জনমত জরিপগুলোয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বরাবরই বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন মামদানি। গত বৃহস্পতিবারের এমারসন কলেজ/পিআইএক্স ১১/দ্য হিলের জরিপ অনুযায়ী, মামদানি তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কুমোর চেয়ে প্রায় ২৫ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। ওই জরিপে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে মামদানি এগিয়ে ছিলেন প্রায় ২৯ পয়েন্টে।
তবে সোমবার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র চার দিনে কুমো ও মামদানির জনসমর্থনের ব্যবধান বেশ কমেছে। ওই জরিপ অনুযায়ী, মামদানির পক্ষে জনমত ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। আর কুমোকে সমর্থন জানিয়েছেন ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটার। অর্থাৎ কুমোর চেয়ে মামদানি এগিয়ে আছেন ১৪ দশমিক ৩ পয়েন্টে। অপর দিকে কার্টিস স্লিওয়া পেয়েছেন ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ জনসমর্থন। রিপাবলিকান এই প্রার্থীর চেয়ে মামদানি এগিয়ে আছেন ২৯ দশমিক ৮ পয়েন্টে।
কুমোকে সমর্থন ট্রাম্পেরএবার মেয়র নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি কার্টিস স্লিওয়ার জয়ের আশা না দেখতে পেয়ে শেষ পর্যন্ত কুমোকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এমন সময় তিনি এ সমর্থন দিলেন, যখন রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসের জরিপে কুমো ও মামদানির জনসমর্থনের ব্যবধান কমতে দেখা গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য একটাই—মামদানি যেন নিউইয়র্কের মেয়র পদে বসতে না পারেন।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে সোমবার ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আপনারা অ্যান্ড্রু কুমোকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন বা না করেন, সত্যি বলতে গেলে আপনাদের কাছে বিকল্প কোনো পথ নেই। আপনাদের তাঁকে ভোট দিতে হবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, কার্টিস স্লিওয়াকে ভোট দিলে আসলে মামদানিকেই ভোট দেওয়া হবে।
এর আগেও নানা বাক্যবাণে মামদানিকে নাজেহাল করার কম চেষ্টা করেননি ট্রাম্প। মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় তহবিল আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আর রোববার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে তিনি ‘খারাপ ডেমোক্র্যাট’কে (কুমো) বেছে নেবেন। তবে ‘কমিউনিস্টকে’ (মামদানি) সমর্থন দেবেন না।
কুমো ডেমোক্রেটিক পার্টিরই একজন নেতা। মেয়র পদে দলের প্রার্থী বাছাইপর্বে মামদানির কাছে পরাজিত হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান তিনি। ট্রাম্পের সমর্থন কুমোর জন্য আশার আলো হলেও তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন না, বরং মামদানির বিরোধিতা করছেন। আর এ নিয়ে মামদানির ভাষ্য, ট্রাম্পকে ভয় পান না তিনি।