পানি নামতে শুরু করলেও লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের হাজারো মানুষের জীবনে স্বস্তি ফেরেনি। ঘর, ফসল এবং রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির পর টিকে থাকার নতুন সংগ্রাম শুরু হয়েছে সেখানে। স্থানীয়রা ত্রাণ নয়, বরং দ্রুত কার্যকর পুনর্বাসন এবং প্রতি বছরের দুর্বিষহ বন্যা থেকে মুক্তি পেতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচে। গেল রবিবার রাতে তিস্তার পানি এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। 

আরো পড়ুন:

কমেছে তিস্তার পানি, দুর্ভোগে মানুষ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ দিন ধরে বন্ধ টিকাসেবা

তিস্তার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি সড়ক

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, তিনদিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতে তা বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তাপাড়ে রেডএলার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অতিরক্ত পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্লান্ড বাইপাস কেটে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে তারা। ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষের। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কিছু অংশ বন্যার কবলে পড়ে। 

পানি সরে যাওয়ায় এখন জেগে উঠেছে কাদা আর বালিতে ভরা উঠান এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি। আদিতমারী উপজেলার গরীবুল্লাহ পাড়ার জাহেদা বেগমের মতো অসংখ্য মানুষ এখন নিজেদের সাধ্যমতো ঘর মেরামতের কাজ করছেন। ঘর কোনোরকম ঠিক করাই তাদের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

জাহেদা বেগম বলেন, “এই বছর পাঁচবার বানের পানি দেখলাম। প্রতিবারই ঘর আর জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়। সরকার থেকে ত্রাণ দিলেও, আমাদের ঘর মেরামত করার জন্য বা নতুন করে বাঁচার জন্য কোনো সাহায্য পাই না। এবার নিজের হাতেই ঘর ঠিক করছি।”

মাটি দিয়ে ঘরের ফাঁকা হয়ে যাওয়া স্থান পূরণের চেষ্টায় এক নারী

সোবাহান মিয়া বলেন, ‍“আমার সারা জীবনটা তো এই তিস্তার পাড়েই কাটল। ছোটবেলাতেও বন্যা দেখেছি, এখনো দেখছি। প্রতিটি প্রজন্ম শুধু কষ্টই করে যাচ্ছে। এখন আর ত্রাণ চাই না, দরকার স্থায়ী মুক্তি। শুনতে পাই, সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা করবে। আমাদের একটাই অনুরোধ, যেন দ্রুত সেটা হয়। আমাদের সন্তানদের অন্তত এই দুর্বিষহ চক্র থেকে তারা যেন বাঁচান।”

রহমান মিয়া বলে, “পানি সরে গেছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের রাস্তাঘাট সব ভেঙে গেছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে যাওয়া খুব কষ্টকর। অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়া আরো কঠিন। প্রশাসন শুধু তালিকা তৈরির কথা বলে, কিন্তু আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করতে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। আমরা চাই, দ্রুত রাস্তা ঠিক করা হোক।”

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। রোপা আমন, চিনাবাদাম ও সবজির ক্ষেত সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় তারা এখন বড় ধরনের ক্ষতির মুখে। অনেক কৃষক ঋণ করে জমি আবাদ করেছিলেন, সেই ঋণ কীভাবে শোধ করবেন সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জামিরুল বলেন, “কয়েক বিঘা জমির আমন ধান আর সবজি সব পচে গেল। এখন খাব কী আর ঋণ শোধ করব কীভাবে? প্রতি বছর একই অবস্থা, এই সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান হয় না।”

ফসল হারানো কৃষক আব্দুল বলেন, “ঋণ করে জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম, সব তলিয়ে গেল। বীজতলা, সবজি ক্ষেত, চিনাবাদাম—কিছুই আর নেই।  কষ্ট করে ফসল ফলাই, তিস্তার পানি এসে এক রাতে সব শেষ করে দেয়। সরকার যদি দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিত, তবে ধারদেনা শোধ করার একটা পথ খুঁজে পেতাম। না খেয়ে থাকতে হবে এবার।”

ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা প্রসঙ্গে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার বলেন, “তিস্তা তীরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের সর্বাধিক সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।”

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন য নদ ব পৎস ম র প রব হ ঠ ক কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘৮ যুদ্ধের পাঁচটিই থামিয়েছি’ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে—দাবি করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার দাবি করেছেন, তিনি আটটি যুদ্ধের পাঁচটি থামিয়েছেন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শুল্কের মাধ্যমে ‘ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার’ (লাখ লাখ কোটি ডলার) আয় করছে; যা তাঁর কথায় মার্কিন অর্থনীতির জন্য লাভজনক হয়েছে।

ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমি পাঁচটি যুদ্ধ সরাসরি শুল্কের হুমকি দেখিয়ে থামিয়েছি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আমরা বাইরের দেশ থেকে শুল্ক ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলার নিচ্ছি। আমি আটটি যুদ্ধের মধ্যে পাঁচটি সরাসরি থামিয়েছি, শুল্কের হুমকি দেখিয়ে—যদি তারা লড়াই থামাতে না চায় অথবা শুরু করে।’

ইতিপূর্বে বারবার নিজের করা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এ নতুন মন্তব্য এসেছে। সেসব দাবিতে তিনি শুল্ক ব্যবহার করে চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর কথাও বলেছিলেন। তবে ভারত কখনোই তাঁর ভূমিকাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সহায়ক হিসেবে স্বীকার করেনি।

ইতিপূর্বে বারবার নিজের করা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এ নতুন মন্তব্য এসেছে। সেসব দাবিতে তিনি শুল্ক ব্যবহার করে চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর কথাও বলেছিলেন। তবে ভারত কখনোই তাঁর ভূমিকাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সহায়ক হিসেবে স্বীকার করেনি।

আরও পড়ুনট্রাম্প কেন ৬টি যুদ্ধ থামানোর দাবি করছেন১৯ আগস্ট ২০২৫

ট্রাম্পের আরও যত দাবি

পূর্বসূরি জো বাইডেনকে নিশানা করে ট্রাম্প দাবি করেছেন, এখন প্রায় ‘কোনো মুদ্রাস্ফীতি নেই’; যা তাঁর কথায় ‘স্লিপি জো বাইডেন’–এর (ঘুমকাতুরে) অধীন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ছিল।

ট্রাম্প পোস্টে লিখেছেন, ‘পুঁজিবাজার মাত্র ৯ মাসে ৪৮ বার সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। লিওনার্দ লিও, কোচ এবং ওইসব দেশ যারা বছরের পর বছর নিজেদের শুল্ক ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তারা আর আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না।’

আমরা বাইরের দেশ থেকে শুল্ক ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলার নিচ্ছি। আমি আটটি যুদ্ধের মধ্যে পাঁচটি সরাসরি থামিয়েছি, শুল্কের হুমকি দেখিয়ে—যদি তারা লড়াই থামাতে না চায় অথবা শুরু করে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টআরও পড়ুনট্রাম্প যুদ্ধ থামিয়ে বন্ধু বাড়াবেন, সমালোচকদের তদন্তের আওতায় আনবেন২০ জানুয়ারি ২০২৫

উল্লেখ্য, লিওনার্দ লিও প্রভাবশালী মার্কিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কনজারভেটিভ বিচারপতি নিয়োগ ও কিছু শীর্ষ রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। আর ‘কোচ’ বলতে ট্রাম্প কোচ পরিবারকে বুঝিয়েছেন; যারা মার্কিন রাজনীতিতে বড় পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে ও প্রভাব রাখে।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবচেয়ে ধনী, শক্তিশালী ও সম্মানিত’ অবস্থায় রয়েছে। তাঁর কথায়, এর পেছনের মূল কারণগুলো হলো, ‘নভেম্বর ৫’, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ‘শুল্ক’।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবচেয়ে ধনী, শক্তিশালী ও সম্মানিত’ অবস্থায় রয়েছে। তাঁর কথায়, এর পেছনের মূল কারণগুলো হলো, ‘নভেম্বর ৫’, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ‘শুল্ক’।

আরও পড়ুনরাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ‘চাপ বাড়াচ্ছেন’ ট্রাম্প১০ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ