সমালোচনাকারীরা কার পক্ষে বলছেন: ফয়েজ আহমদ
Published: 12th, October 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশের কিছু ধারা নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁদের প্রশ্ন করেছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, তাঁরা দেশের নাগরিক নাকি কার পক্ষে কথা বলছেন?
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ এই সমালোচনাকে স্বাগতও জানিয়েছেন।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি ভবনে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫, জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সাইবার সুরক্ষা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদিত হওয়ার বিষয়ে অবহিতকরণ সভা হয়। এই সভায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এসব কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার এই তিন অধ্যাদেশের অনুমোদন হয়।
এই সভায় তিনটি অধ্যাদেশ অনুমোদন হওয়ার বিষয়টি কেক কেটে উদ্যাপন করা হয়।
ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে ১৮ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘ডেটা সেন্টার করতে কয় দিন লাগে? আমরা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের দিক থেকে ডেটা সেন্টার বাস্তবায়ন করছি তিনটা। একটা না, তিনটা করছি। সেখানে আমরা ভেন্ডরকে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দিয়েছি।’
সরকার যদি এক বছরের মধ্যে ডেটা সেন্টার করতে পারে বেসরকারি প্ল্যাটফর্ম কেন ১৮ মাসের মধ্যে করতে পারবে না—এই প্রশ্ন তোলেন ফয়েজ আহমদ। সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের নাগরিক নাকি কার পক্ষে কথা বলছেন? সুতরাং আমি এই প্রশ্নগুলো তুলতে চাই এই জন্য যে আজকে আমাদের বোঝাপড়ার গভীরতায় যাওয়ার সময় হয়েছে। বিরোধিতার ক্ষেত্রে বিরোধিতা করে আমাদের অগ্রযাত্রাকে কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।’
ফয়েজ আহমদ বলেছেন, ‘দেখুন আজকের পত্রিকায় যে কিছু কথা আমরা দেখলাম সেটা হচ্ছে যেই গভীর এবং ডিপ কারিগরি ইনসাইটের মাধ্যমে এবং গভর্ন্যান্স স্কোপের মাধ্যমে আমরা যে আইনটা তৈরি করেছি ছয় মাসের অধিক সময়ে দিনের পর দিন রাতের পর রাত খেটে, সেটা যদি ৬ ঘণ্টায় কোনো পরামর্শ না করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া আপনি যদি রিপোর্ট করে দেন তাহলে অবধারিত হবে সেখানে ভুল বক্তব্য আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমি গণমাধ্যমকে অনুরোধ করব আমাদের সঙ্গে প্রশ্ন করুন, আমাদের কাছে আসুন জিজ্ঞেস করুন জানা-বোঝার ভিত্তিতে রিপোর্ট করুন।’
ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে গতকাল শনিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে বলেছে, গোপনীয়তার আশ্রয় ও তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া আজ রোববার সকালে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদে অধ্যাদেশটির অপব্যবহারের ঝুঁকি এবং কর্তৃপক্ষের অবাধ ক্ষমতার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
অধ্যাদেশ করতে গিয়ে সরকার অনেক বেশি পরামর্শ করেছে জানিয়ে এই বিশেষ সহকারী বলেন, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়, মেটা, গুগলের মতো টেক প্ল্যাটফর্মসহ বাংলাদেশে যারা আছে, সবার সঙ্গে আলাদা করে পরামর্শ হয়েছে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘আইন দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের করতে হয়েছে। কিন্তু এই দ্রুততার কারণে আমরা কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ (মানে আপস) করিনি।’
দ্রুততার কারণে সাইবার সুরক্ষা আইনে একটা ভুল ছিল। সেটা এবার সংশোধন করেছেন বলে জানান ফয়েজ আহমদ। নতুন আইনে যদি কোনো ধরনের ভুল থাকে, তাহলে সেটাও সংশোধন হবে বলে জানান তিনি। যেকোনো ধরনের সমালোচনাকে স্বাগত জানান এবং আলোচনা-সমালোচনার জন্য তাঁরা উন্মুক্ত আছেন বলে জানান।
ফয়েজ আহমদ বলেছেন, কর্তৃপক্ষকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জুডিশিয়াল অথরিটি রাখা হয়েছে। নাগরিকেরাও এই জুডিশিয়াল কাউন্সিলে সালিসের জন্য যেতে পারবে। এই আইনে কোনো জামিন-অযোগ্য ধারা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘উপাত্তের মালিকানা ব্যক্তির। ব্যক্তির পক্ষে জিম্মাদার যেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণের যে স্তরগুলো তাতে কর্তৃপক্ষ দেখবে যে আসলে ওই প্রতিষ্ঠানের এই কাজের সক্ষমতা আছে কি না। এখন এটাকে যদি আপনি অধিক ক্ষমতা বলেন তাহলে আমার কিছু করার নেই। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলব এই ক্ষমতা দেওয়ার দরকার আছে।’
সরকার মেটা, গুগলসহ দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলোকে দায়বদ্ধ করে এই আইনের আওতায় এনেছে। এই কাজ করার জন্য তাঁর সহকর্মীদের প্রশংসা করা উচিত বলে জানান ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, অনেক বেশি জ্ঞান, অনেক বোঝাপড়া অনেক গভীরতার মধ্য দিয়ে আইনগুলো তাঁরা তৈরি করেছেন।
বিদেশি পরামর্শক এনে নীতি করার যে ধারণা এত দিন ছিল, তা থেকে সরে এসে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে এবং তৈরি হয়েছে বলে জানান ফয়েজ আহমদ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা আইন প্রকাশ করবেন বলে জানান। আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও জানান।
আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ক ব আম দ র অন ম দ ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে দরখাস্ত আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে। ২০২৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের ৭(ক) ধারা অনুসারে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে এই দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ বুধবার এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫’ গত ২১ জানুয়ারি গেজেট আকারে জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
অধ্যাদেশের ৩ ধারা অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের নিমিত্ত বা পরামর্শ প্রদান প্রক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতিকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইপূর্বক সুপারিশ করার জন্য একটি স্থায়ী কাউন্সিল থাকবে। আর তা ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ নামে অভিহিত হবে।
অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এই কাউন্সিলের চেয়ারপারসন। আর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগবিষয়ক সুপারিশ সম্পর্কে অধ্যাদেশের ৭ ধারায় বলা রয়েছে। ৭(ক) ধারা অনুসারে কাউন্সিল উপযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করতে পারবে। এ ছাড়া ফরমে প্রার্থীদের কাছ থেকে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করবে।
এরপর অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে গত ২৮ মে সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রথমবারের মতো গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে ২৫ জনকে নিয়োগ দেয় সরকার।
আবেদনের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নির্ধারিত ফরমে প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনের সই করা গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগ্রহী প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদির সংযুক্তি ও পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবিসহ নির্ধারিত ফরমে দরখাস্ত আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে ডাকযোগে বা সরাসরি পাঠানোর জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো।
আরও পড়ুনহাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে দরখাস্ত আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি২৮ মে ২০২৫